জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত
এ সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এটির কারণে মূল্যস্ফীতি হবে। ব্যয় অনেক বাড়বে। সবার যদি সমানভাবে আয় বাড়ত তাহলে মূল্যস্ফীতি সমস্যা ছিল না। অর্থনীতি নিয়ে মানুষের ভিতর একটি আতঙ্ক আছে। মানুষের চিন্তা দুশ্চিন্তা আছে। ডলার মূল্য বাড়ল। মূল্যস্ফীতি হবে। মানুষ কীভাবে সংসার চালাবে এগুলো নিয়ে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এখন।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এটি বৃদ্ধি করতে পারত ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। কারণ টাকার মূল্য যতটুকু কমেছে ততটুকু বৃদ্ধি করলেই হত। আমদানি ব্যয় ততটুকুই বেড়েছে। কয়েক বছর আগে যখন পেট্রল ডিজেল অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে তখন ১০০ডলারের দোহাই দেওয়া হয়েছে।
এখন আমাদের টাকার মূল্য হারিয়েছে সেটিও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ।সেখানে ৫১ শতাংশ বাড়ানোর কথা না। এতে প্রত্যেকটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরিবহন ব্যয় বাড়বে। কৃষকের সারের খরচ বাড়বে। বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে। কলকারখানা কতগুলো আছে সেগুলির ব্যয় বেড়ে যাবে। এসবই ভোক্তাদের বহন করতে হবে। সারা পৃথিবী কিন্তু ভর্তুকি দিলে জ্বালানি তেলেই দেয়। অন্যখাতে তেমন একটা দেয় না। বাংলাদেশ হচ্ছে উল্টানীতিতে বিশ্বাসী। জ্বালানি তেলে তো দেবেই না। ভর্তুকি দিচ্ছে বাংলাদেশ বিমানে। জ্বালানি তেল কম ব্যবহার করা মানে কম কাজ করেন। তাহলে তখন উৎপাদনশীলতা কোথায় যাবে? এখন মানুষ যদি মুভমেন্ট না করে তাহলে তো উৎপাদনশীলতা হবে না। এগুলো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই না। এটি নিয়ে তর্ক বিতর্ক আলোচনা হওয়া দরকার ছিল। কাউকে কিছু না বলে এধরনের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক। মূল্যস্ফীতির হিসেবের মধ্যেও তারা পরিবর্তন এনেছে। দেখানো ছয়মাস আগের তুলনায় কতটুকু কি হয়েছে? কিন্তু দেখতে হবে তিন বছর আগের তুলনায় আমাদের মূল্যস্ফীতি কত? তিন বছর আগে চালের দাম কত ছিল এখন কত? তাহলে বোঝা যেত মূল্যস্ফীতি আসলে কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা বাজার আক্রান্ত হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তগুলো সরকার এককভাবে নিতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারকে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে হয়। জনস্বার্থ বিবেচনা করতে হয়। তারপর একটি যুক্তি বের হয়ে আসে। এখানে সেই চর্চাটুকু নেই। পার্লামেন্টে সবাই সরকারেরই লোক। তবুও আলোচনা করত। সেটি না করে খেয়াল খুশি মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই উচিত না। মানুষ ভেতরে ভেতরে খুবই অসন্তুষ্ট। অনেকেই সরকারের বিরোধিতা করছে। আমি এমন লোক দেখিনাই যে সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে। এমনকি যারা সরকারি দলের সঙ্গে শক্তভাবে আছে তারাও অপছন্দ করছে এবং বলছে যে, এটি একেবারেই ঠিক হয় নাই। কারণ, প্রত্যেকেই ভুক্তভোগি।
এক শ্রেণির লোক যথেষ্ট পরিমাণে লুটতরাজ করছে। সরকার যদি এখনো সচেতন না হয়, সাবধানতা অবলম্বন না করে তাহলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে। শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জায়গায় আমরা নেই। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আমাদেরও সেই পথেই হাটতে হবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়