মাগুরায় ধান কাটার উৎসব, শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক
বৈশাখের মাঝামাঝিতে মাগুরার মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার উৎসব। সদরের প্রতিটি মাঠে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষক এখন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক কৃষক পড়েছেন বিপাকে।
সরেজমিনে মাগুরা সদরের মঘী, বাঘবদাইড়, জগদল, চাউলিয়া ও আঠারোখাদা ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা জানিয়েছেন, এখন আবহাওয়া ভালো, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। ধান পেকে গেছে তাই এখনই উপযুক্ত সময় ধান কেটে ঘরে তোলার। তবে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের কৃষক পড়েছেন বিপাকে। ধান কাটার শ্রমিক যা পাওয়া যাচ্ছে তারা দিনপ্রতি ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দাবি করছেন বলে জানান কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাগুরায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিন আগে তীব্র তাপদাহের ফলে সদরের বেশ কিছু গ্রামে ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিল কিন্তু তাতে ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়। ধান পুরোপুরি পেকে গেছে। তাই ধান কাটার এখনই উপযুক্ত সময়। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন মাঠে কৃষক ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। যেসব কৃষক আগাম ধান রোপণ করেছিলেন তারা ইতোমধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। জেলার কৃষকরা প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কেটেছেন। বাকি ৪০ শতাংশ ধান আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাটা হবে।
মাগুরা সদরের আলাইপুর গ্রামের কৃষক হারেজ আলী বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। ধান রোপণের সঙ্গে সঙ্গে জমিতে পরিচর্যা বাড়ায়। জমিতে উপযুক্ত সার ও সেচ দেয়। ধানের গোছা আসার পরপরই জমির পরিচর্যা আরও বাড়ায়। বৈশাখের শুরুতে ধান পরিপক্ব হতে শুরু করে। ইতোমধ্যে আমি ১ বিঘার ধান কেটে ফেলেছি। বাকি ধান আগামী ১০ দিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। এবার কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর আমি ২ বিঘা জমিতে ৫০-৬০ মণ ধান পাব বলে আশা করছি। তবে ধান কাটার শ্রমিক সংকটের কারণে উপযুক্ত সময়ে ধান ঘরে তুলতে দেরি হচ্ছে।
সদরের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক সিরাজ সরদার বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। ধানেই আমার সারা বছর চলে। এবার অতিরিক্ত তাপদাহের ফলে আমার ১ বিঘা জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমি এ ধান নিয়ে বিপাকে আছি। বাকি ৩ বিঘার জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২ বিঘা জমির ধান কাটা প্রায় শেষ। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে।
সদরের ছয়চার গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন ভালো। বৈশাখের মাঝামাঝিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো। কিন্তু ধান কাটার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ধান কাটতে বেগ পেতে হচ্ছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, চলতি বছর জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। এবার কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। ফলে কৃষকরা খুশি মনে ধান কাটা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বৈশাখ মাসের শুরুতে জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহখানেক ধরে মাগুরাসহ সারা দেশে তীব্র তাপদাহের ফলে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি দেখা দিয়েছিল। তার পাশাপাশি কিছু এলাকায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বোরোসহ অন্যান্য ধান। এসময় আমরা কৃষকদের শঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি জমিতে সব সময় পানি জমিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩৮ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর, শ্রীপুরে ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর, শালিখায় ১৩ হাজার ৪৫ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এবার চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৬৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এবার হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৪৪ মেট্রিকটন চাল। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন চাল। এবার ব্রি ধান-৮১, ৮৯, ২৯০৪.৬৭১১, ৩৮০৫ এবং হাইব্রিড এসএল, এইট-এইচ, সিনজেনটা-১২০৩ জাতের ধানের চাষ জেলায় বেশি হয়েছে।
এসজি