প্রথমবারের মতো দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন
দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের কৃষি ও মাৎস্য গবেষণায় আরও একটি সফলতা যুক্ত হয়েছে এবার। প্রথমবারের মতো দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন ও পুরুষ-স্ত্রী মাছের লিঙ্গ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
গবেষণার ফল ব্যবহার করে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা এই মাছের বাণিজ্যিক চাষে বিপ্লব ঘটাবে। ফলে মাছের এই প্রজাতিকে টিকিয়ে রেখে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বজায় রাখবে, অন্যদিকে স্বল্প সময়ে অধিক স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন সম্ভব হবে।
বুধবার (১৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন এবং পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণ গবেষণা ও এটির ফলাফল তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ড. তাসলিমা খানম। গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ, স্বর্ণা, হালিমা, জেসমিন, কানিজ এবং সারা।
সংবাদ সম্মেলনে ড. তাসলিমা খানম বলেন, দেশীয় শিং মাছ বাংলাদেশ একটি জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতি। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, অতিরিক্ত আহরণ ও প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দেশীয় এ মাছটি বর্তমানে হুমকির মুখে। স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ শিং মাছ অপেক্ষা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। তাই এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন অন্যতম একটি উপায়। সফলভাবে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনের জন্য লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। তাই ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিং মাছের জিন নিয়ে গবেষণা শুরু করি। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সংগৃহীত দেশীয় শিং মাছের নমুনা নিয়ে শুরু হয় কাজ।
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে প্রধান গবেষক বলেন, গবেষণায় উদ্ভাবিত ড্রাফট জিনোম (প্রথমবার শনাক্ত করা জিনোম) দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করা সম্ভব, যা যেকোনো দেশীয় সব প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে এই প্রথম। এর মাধ্যমে শুধু স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে করে প্রাকৃতিক জলাশয় ছাড়াও কৃত্রিম পদ্ধতিতে অধিক ফলনশীল স্ত্রী শিং মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। শিং মাছের জিনোম থেকে শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণকারী জিন ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রচলিত হরমোন প্রয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তে মার্কার অ্যাসিসটেড সিলেকশন (এমএএস) পদ্ধতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।
ড. তাসলিমা দাবি করে আরও বলেন, গবেষণা কাজের ফলাফল চলতি বছরের মার্চে জাপানিজ সোসাইটি অফ ফিশারিজ সায়েন্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ওই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে কনফারেন্স পেপার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটির উপাত্ত ওই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থিত আন্তজার্তিক মানের ৩০০ বিজ্ঞানীর সামনে উপস্থাপিত হয়। এছাড়া এ গবেষণার ফলাফল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশের জন্যে বর্তমানে সম্পাদনা পর্যায়ে রয়েছে।
ড. তাসলিমা আরও বলেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও গবেষণা সহায়তা পেলে এ ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনে মৎস্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখা যাবে। এই গবেষণার ফলাফল বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে।