কীটনাশক প্রয়োগেও মিলছে না প্রতিকার
ঢেঁড়শে পোকার আক্রমণ, খরচ তোলা নিয়ে সংশয়ে কৃষকরা
ঢেঁড়শে পোকার আক্রমণ। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
ঢেঁড়শ গাছের পাতায় সবুজ রঙের ছোট ছোট পোকা। এই পোকা ঢেঁড়শে আক্রমণ করে ফলন নষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, আক্রমণের কারণে ঢেঁড়শ বড় না হয়ে ঢেঁড়শ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন এমন অজ্ঞাত পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের ঢেঁড়শ চাষি কৃষকরা। ফলে চাষিদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এমন পরিস্থিতিতে চাষাবাদের খরচ তোলাই তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢেঁড়শে পোকার আক্রমণে ভুক্তভোগী উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া পূর্বপাড়া গ্রামের ঢেঁড়শ চাষি মো. আব্দুল বাছেদ। তিনি তার প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে গত বছরের মতো এবারও উন্নত জাতের কমল নামে হাইব্রিড ঢেঁড়শ চাষ করেছেন। তার মতে- ফলন ভালো হয়েছে এবং ঢেঁড়শ ধরেছে প্রচুর পরিমাণ। কিন্তু অজ্ঞাত পোকার আক্রমণে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।
কৃষক আব্দুল বাছেদ বলেন- একদিন পরপর ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ঢেঁড়শ তোলা যেতো। কিন্তু পোকার আক্রমণে বর্তমানে ১ মণ ঢেঁড়শ উঠে না। তারমধ্যে ৫ থেকে ৭ কেজি ঢেঁড়শ ফেলে দিতে হচ্ছে। অপরদিকে ঢেঁড়শের গায়ে প্রচুর পরিমাণে দাগ হচ্ছে। এতে করে পাইকারি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেন। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমনে কার্যকর কোনো সুফল পাচ্ছি না।
একই গ্রামের ঢেঁড়শ চাষি রহিম মিয়া মীর বক্স আলী বলেন, বাড়ির আঙিনায় ১০/১২ শতাংশ জমিতে ৩ হাজার ১’শ টাকা কেজি দরে উন্নত জাতের হাইব্রিড ঢেঁড়শের বীজ কিনে চাষ করেছি। গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঢেঁড়শ আসলেও পোকার আক্রমণে ঢেঁড়শগুলো পরিপক্ব হচ্ছে না। বড় হওয়ার আগেই পোকার আক্রমণে ঢেঁড়শ বাঁকা হয়ে যায়। এতে করে অনেক ঢেঁড়শ নষ্ট হয়। এবার খরচের টাকাও উঠবে না।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েড়া, নিকরাইল, নলুয়া, সিরাজকান্দি, বরকতপুর, বিলচাপড়া, রুহুলী ও চর নিকলা গ্রামের বিভিন্ন ঢেঁড়শ ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়- তীব্র দাবদাহে ও খরায় ঢেঁড়শ ক্ষেতের মাটি সাদা হয়ে গেছে। সবুজ রঙের পোকাগুলো ঢেঁড়শ ছিদ্র করে ফেলছে। তাছাড়া গাছ থেকে ঢেঁড়শের ফুলসহ ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য ঢেঁড়শ। এছাড়া বাঁকাও হয়ে যাচ্ছে। এগুলো তুলে ফেলা দিচ্ছেন কৃষকরা।
এদিকে কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া হাট-বাজারে সারের দোকানগুলোতে গেলে দোকানিরা পোকা দমনের যে-সব কীটনাশক দেয় সেগুলো দিয়ে পোকা দমন হচ্ছে না। এসব কীটনাশকের অতিরিক্ত দামও নেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে পোকা দমন করতে না পারলে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হবে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন- প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢেঁড়শসহ অন্যান্য সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় বংশবিস্তার ছড়াচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে পোকার বংশবিস্তার রোধ হবে। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পোকা দমনে সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।