মাগুরায় তীব্র তাপদাহে ধানে ব্লাস্ট রোগ, শঙ্কিত কৃষক
মাগুরায় সপ্তাহব্যাপী তীব্র তাপদাহ, অনাবৃষ্টির কারণে সদরের বিভিন্ন মাঠের বোরো ধান, ২৮ ও ২৯ ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহের ফলে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।
এখন মাঠের প্রতিটি ধানের গোছায় ধানের ছড়া বের হয়েছে। আর কিছু দিন পর কাটা হবে ধান। কিন্তু হঠাৎ করে ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ধানে প্রথমে হলুদ ভাব হয়ে পরে চিটায় পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে মাগুরা সদরের আলাইপুর, মিঠাপুর, মির্জাপুর, শত্রুজিতপুর, বালিয়াডাঙ্গা, বারাশিয়া গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ বোরো ধানের খেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
মাগুরা কৃষি বিভাগ বলছে, মাটি যদি বেলে প্রকৃতির ও শুকনো হয়, জমিতে ইউরিয়া সার বেশি ও পটাশ সার কম ব্যবহার হলে ও রাতে ঠান্ডা, দিনে বেশি গরম হলে এ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ প্রতিরোধে জমিতে জৈব সার প্রকারভেদে বিঘাপ্রতি ৫০০-৮০০ এবং রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। তা ছাড়া ধানের পাতায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে জমিতে তাৎক্ষণিক সেচ দিতে হবে, আক্রান্ত জমিতে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি এমওপি বা পটাশ সার দিতে হবে। আক্রান্ত বেশি হলে বালাইনাশকের যেকোনো একটি ৮-১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
মাগুরা সদরের আলাইপুর গ্রামের কৃষক ইকরাম বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। ধান রোপণের সঙ্গে সঙ্গে জমিতে পরিচর্যা বাড়ায়। জমিতে উপযুক্ত সার ও সেচ দেয়। ধানের গোছা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি জমি আরও পরিচর্যা বাড়ায়। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে তীব্র তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে হঠাৎ ধানের গোছায় হলুদ রং হতে দেখা যায়। আমার ২ বিঘার প্রায় ১ বিঘা জমির ধান এখন ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। অনেক বার ঔষধ ও স্প্রে করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ধান চিটা হয়ে গেছে। যেখানে প্রতিবছর আমি ২ বিঘা জমিতে ৫০-৬০ মণ ধান পায়। সেখানে এ বছর পাব ৩০ মণ। এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে আমরা ধানের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পেলাম না।
সদরের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক রিপন সরদার বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। ধানের উপর আমার সারা বছর চলে। এবার অতিরিক্ত তাপদাহের ফলে আমার ২ বিঘা জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমি এ ধান নিয়ে বিপাকে আছি। অধিকাংশ ধানে চিটা হয়েছে। ধান কাটার শেষ সময়ে গাছগুলো এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় আমি শঙ্কিত।
সদরের ছয়চার গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র তাপদাহে আমার ৩ বিঘা জমির প্রায় ১ বিঘা বোরো ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ধান রোপণের সঙ্গে সঙ্গে আমি নিয়মিত সার ও সেচ দিয়েছিলাম। প্রতিটি ধান গাছের গোছায় যখন ধানের ছড়া আসতে শুরু করল তখন আমি পরিচর্যা বাড়ায়। কয়েকদিন দিনের তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ধান হলুদ হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে তখন বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাড়াতাড়ি কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও স্প্রে করি কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। ফলে ধান নিয়ে শঙ্কায় আছি।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, সপ্তাহখানেক ধরে মাগুরাসহ সারা দেশে তীব্র তাপদাহের ফলে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কিছু এলাকায় বোরোসহ অন্যান্য ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষকদের শঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি জমিতে সব সময় পানি জমিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩৮ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর, শ্রীপুরে ১ হজার ৫৯০ হেক্টর, শালিখায় ১৩ হাজার ৪৫ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এবার চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৬৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ৪৪ মেট্রিকটন চাল। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮০ মেট্রিকটন চাল। এবার জেলায় ব্রি ধান- ৮১, ৮৯, ২৯০৪.৬৭১১, ৩৮০৫ এবং হাইব্রিড এসএল, এইট-এইচ, সিনজেনটা-১২০৩ জাতের ধানের চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে।
এসজি