তামিমদের অচেনা চেমসফোর্ড বাংলাদেশের চেনা!
ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম তিনটি আসরই অনুষ্ঠিত হয়েছে ইংল্যান্ডে। একটা সময় ইংল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য খেলা ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। সেই দ্বার উন্মোচিত হয় ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার টিকিট পেয়ে। এরপর ২০০০ সালে আইসিসির টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ইংল্যান্ডে গিয়ে খেলা বাংলাদেশের জন্য আর আকাশ কুসুম হয়ে থাকেনি। চলে আসে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশ দল আইসিসির তিনটি আসর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে গিয়েছে। পাশাপাশি ছিল দ্বি-পাক্ষিক সিরিজও। সেখানে এবার আবার সুযোগ এসেছে আয়ারল্যান্ডের হোম ভেন্যু হয়ে।
আয়ারল্যান্ড সিরিজের তিনটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে চেমসফোর্ডে। এই চেমসফোর্ড কিন্তু এই প্রজন্মের বাংলাদেশ দলের কাছে অচেনাই। কারণ ১৯৯৯ সালের ১৭ মে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল এই চেমসফোর্ডেই। প্রতিপক্ষ ছিল নিউ জিল্যান্ড। এরপর বাংলাদেশ ছয়বার (২০০৪, ২০০৫, ২০০৯, ২০১০, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে) খেলতে গিয়েছে ইংল্যান্ডে। এই ছয়বার বাংলাদেশ দল গোটা ইংল্যান্ড চষে বেড়িয়েছে। লর্ডসের মতো জায়গায় খেলেছে একাধিক ম্যাচ। বাদ যায়নি ওভাল, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, কার্ডিফ, লিডস, বৃস্টল, টনটন সাউদাম্পটন, চেস্টার-লি-স্ট্রিট, নর্দাম্পটনসহ আরও অনেক ভেন্যু। কিন্তু কখনই খেলা হয়নি এই চেমসফোর্ডে। তাই চেনা চেমসফোর্ড এই প্রজন্মের কাছে অচেনায়। ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর আজ সোমবারই তারা প্রথম চেমসফোর্ড দেখার সুযোগ পান। বৃষ্টির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে যদি মঙ্গলবার (৯ মে) শেষ পর্যন্ত খেলা মাঠে গড়াতে পারে, তাহলে অচেনা চেমসফোর্ড তামিম ইকবাল বাহিনীর কাছে চেনাও হয়ে উঠবে।
সাড়ে ৬ হাজার আসন বিশিষ্ট ছোট্ট চেমসফোর্ড শুধু তামিমদের কাছেই অচেনা নয়, এই প্রজন্মের যেকোনো ক্রিকেটারদের কাছেই অচেনা। কারণ সর্বশেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৪ বছর আগে সেই বিশ্বকাপেই। ম্যাচটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের। ম্যাচ জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে করেছিল ৬ উইকেটে ২৩৩ রান। জবাব দিতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছিল ১৮৫ রানে।
বাংলাদেশ খেলার পর এই মাঠে যেমন একটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশ খেলার আগেও অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি ম্যাচ। ১৯৮৩ সালের তৃতীয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। সে সময় ভারত আজকের মতো শক্তিশালী ছিল না। সেই ভারত অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট করে ম্যাচ জিতেছিল ১১৮ রানের বড় ব্যবধানেই। ভারত আগে ব্যাট করে রান করেছিল ২৪৭। ভারত সেই আসরে প্রথমবারের মতো উইন্ডিজের আধিপত্য খর্ব করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
চেমসফোর্ড একদিকে বাংলাদেশের কাছে স্মরণীয় আবার আরেক দিকে দুঃখেরও। স্মরণীয় কারণ এই মাঠেই বাংলাদেশ তাদের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলেছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে। দুঃখের কারণ অভিষেক ম্যাচটা বাংলাদেশ স্মরণীয় করে রাখার মতো কিছুই করতে পারেনি। শুধু যে ৬ উইকেটে হেরেছে তা কিন্তু নয়, ব্যাট হাতে ছিল চরমভাবে ব্যর্থ।
টস হেরে ব্যাটে করতে নেমে বাংলাদেশ ৩৭.৪ ওভারে মাত্র ১১৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। ৫১ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছিল। একে একে আউট হয়েছিল শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ০, মেহরাব হোসেন অপি ২, আকরাম খান ১৬, আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৫, খালেদ মাসুদ ৪, খালেদ মাহমুদ ৩ ও মোহাম্মদ রফিক ০ রানে। এরপর অষ্টম উইকেট জুটিতে নাঈমুর রহমান ও এনামুল হক মনি ৩৪ রান যোগ করলে দলের রান শতরান অতিক্রম করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নাঈমুর ১৮ ও এনামুল ১৯ রান করে আউট হওয়ার পর দশম উইকেট জুটিতে হাসিবুল হোসেন শান্ত ও মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জু ২০ রান যোগ করলে দলের রান ১১৬ পর্যন্ত যায়। হাসিবুল ১৬ রান করে আউট হলেও মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জু ৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ক্রিস কেয়ার্নস ১৯, গেভিন লারসেন ১৯ ও জিওফ অ্যালট ৩০ রানে নেন ৩টি করে উইকেট। অপর উইকেট নেন ক্রিস হ্যারিস ১৪ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউ জিল্যান্ড ৩৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রান করে ম্যাচ জিতে। ম্যাট হর্ন ৩৫, রজার অপরাজিত ৩০, ক্রেইগ ম্যাকমিলান ২০, অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং ১৬, ক্রিস কেয়ার্নস অপরাজিত ৭ ও নাথান অ্যাস্টল ৪ রান করেন। নাঈমুর ৫, মোহাম্মদ রফিক ২২, মঞ্জুরুল ইসলাম ২৩ ও হাসিবুল হোসেন ৩৩ রানে নেন একটি করে উইকেট। ম্যাচসেরা হন গেভিন লারসেন।
এমপি/এসজি