সুপার লিগে নেই জাতীয় দলের যেসব ক্রিকেটার
সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজের পাশাপাশি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, রনি তালুকদার, ইমরুল কায়েস, আবু জায়েদ রাহীর মতো জাতীয় দলের বর্তমান ও বাদ পড়া ক্রিকেটারদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান দল গড়ে। যাকে বলা যায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল। কিন্তু লিগ শুরু হলে ঘটে বিপরীত। প্রথম ৫ ম্যাচে মোহামেডান কোনো জয় পায়নি। চ্যাম্পিয়ন হওয়াতো দূরের কথা, তাদের সুপার লিগে খেলাই শঙ্কায় পড়ে যায়।
মোহামেডানের এরকম অবস্থা হওয়ার কারণ এসব নামী-দামি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের না পাওয়া। এই পাঁচটি ম্যাচই মোহামেডান খেলেছে সাকিব-মিরাজ-রনিকে ছাড়াই। সবাই ব্যস্ত ছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজি নিয়ে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হওয়ার পর একমাত্র টেস্ট শুরুর ফাঁকে ষষ্ঠ ম্যাচে এসে মোহামেডান পায় এই তিন ক্রিকেটারকে। এই তিন জনের ডানায় ভর করে মোহামেডান উড়তে শিখে। পায় প্রথম জয়। পরবর্তীতে মোহামেডান আর কোনো ম্যাচ হারেনি। শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে পড়লেও টানা ৬ ম্যাচ জিতে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম দল হিসেবে সুপার লিগে জায়গা করে নেয় মোহামেডান।
মোহামেডান টানা ৬ ম্যাচ জিতলেও সাকিব-মিরাজ-রনি কিন্তু সব ম্যাচ খেলেননি। কিন্তু তাদের উপস্থিতি মোহামেডানের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করেছিল। যে কারণে তাদের অনুপস্থিতিও মোহামেডানের জন্য পরে বড় হয়ে দেখা দেয়নি। এতেই বোঝা যায় জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের উপস্থিতি একটি দলের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনে। মনোবল বৃদ্ধিতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তাদেরকে ছাড়াই আবার মোহামেডানকে সুপার লিগের সবকটি ম্যাচ খেলতে হবে। শুধু মোহামেডানকেই নয়, সুপার লিগে উঠা সবকটি দলকেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ছাড়াই খেলতে হবে। এসময় জাতীয় দল সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডে থাকবেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লিগের ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলতে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ শেষ হবে ১৪ মে। এদিকে সুপার লিগে শেষ হবে ১৩ মে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলা, না খেলা একটি দলের উপর কতটা প্রভাব ফেলে মোহামেডান ক্লাব তার একটি উদাহরণ। যে কারণে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ছাড়া সুপার লিগে দলগুলোর শক্তির বেশ তারতম্য হবে। ঘটবে অনেক ছন্দপতন।
আয়ারল্যান্ড সফরে জাতীয় দলের স্কোয়াড ১৭ সদস্যের। যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দল হলো প্রাইম ব্যাংক। তাদের ৫ জন ক্রিকেটার নেই। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও ইয়াসীর আলী চৌধুরী রাব্বি। এই ৫ ক্রিকেটারকে ছাড়া তাদের খেলতে হবে সুপার লিগ। তাদের ছাড়া প্রাইম ব্যাংক এবারের মৌসুমে কোনো ম্যাচ খেলতে নামেনি। কোনো না কোনো ম্যাচ এক থেকে একাধিক ক্রিকেটার ছিলেন একাদশে। প্রাইম ব্যাংক সুপার লিগ শুরু করবে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে। যদিও তারা শিরোপা লড়াইয়ে নেই। তারপরও একসঙ্গে ৫ জনের শূন্যস্থান পূরণ করা তাদের জন্য কঠিনই হবে। তাদের মতো এত বেশি ক্রিকেটার হারাতে হয়নি কোনো ক্রিকেটারকে।
লিগে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে তামিম ইকবাল খেলেছেন ২ ম্যাচ। একটি ম্যাচে অপরাজিত ১০৯ রানের ইনিংস খেলে তিনি ২ ম্যাচে করেছিলেন ১২৪ রান। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষে তিনি ছেলে সন্তানের অসুস্থতার কারণে পরে আর কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। মুশফিকুর রহিম ৬ ম্যাচ খেলে ২৭৩ রান করেন। তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৭৭ রানের। ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি খেলেছেন ৮ ম্যাচ। রান করেন ২৬৭। ৯৮ রানের ইনিংস ছিল তার সর্বোচ্চ। বল হাতে তাইজুল ৯ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। শরিফুল ৩ ম্যাচে উইকেট নিয়েছিলেন ১টি।
প্রাইম ব্যাংকের পর ৩ জন করে ক্রিকেটার হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। শেখ জামাল তাওহিদ হৃদয়, এবাদত হোসেন ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে এবং মোহামেডান সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও রনি তালুকদারের সার্ভিস পাবে না।
তাওহিদ হৃদয় ৭ ম্যাচে রান করেন ৩১৬। অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস ছিল তার সর্বোচ্চ। জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পাওয়া বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ১৯ ম্যাচে ১৫টি ও এবাদত হোসেন চৌধুরী ৪ ম্যাচ ৯টি উইকেট নিয়েছিলেন। মোহামেডানের হয়ে ৩ ক্রিকেটার খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি। সবচেয়ে বেশি ৫টি ম্যাচ খেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ব্যাট হাতে ৫৬ রান ও বল হাতে নেন ৬ উইকেট। সাকিব ও রনি ম্যাচ খেলেন ৪টি করে। সাকিব ৯৮ রান করার পাশাপাশি উইকেট নেন ৪টি। রনি রান করেন ১৭৭। তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৮০।
শেখ জামালের সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠার দৌড়ে সমান তালে এগোতে থাকা আবাহনী হারিয়েছে শুধু নাজমুল হোসেন শান্তকে। ৩ ম্যাচ খেলে রান করেন ১২৫ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ১০২। সুপার লিগে উঠতে না পারা রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে হাসান মাহমুদ খেলেছিলেন ৪ ম্যাচ। উইকেটও নেন ৪টি।
আয়ারল্যান্ড সফরে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অপর ২ ক্রিকেটার হলেন- লিটন দাস ও মোস্তাফিজুর রহমান। তারা এবারের লিগে কোনো ম্যাচ খেলেননি। লিটন আবাহনী ও মোস্তাফিজ প্রাইম ব্যাংকে নাম লিখিয়েছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষে আগে-পরে তারা দুইজনেই আইপিএল খেলতে চলে যান।
সুপার লিগের অপর দুই দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের শক্তির হেরফের হয়নি। তাদের কোনো ক্রিকেটার আয়ারল্যান্ড সফরে জাতীয় দলে সুযোগ পায়নি।
এমপি/এসজি