বাংলাদেশের আগ্রাসী বনাম আয়ারল্যান্ডের উপভোগ ক্রিকেট!
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এই আবহাওয়া প্রকৃতির নয়, বাংলাদেশে দলের। যেখানে সম্পূর্ণ মনযোগ টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে থাকার কথা, সেখানে টেস্ট শুরুর ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ দলের আবহাওয়া এ রকম নাতীশিতোষ্ণ হয়ে উঠেছে। শুরুটা তাসকিনের ইনজুরির দিয়ে। সন্ধ্যায় জানা যায় পুত্র সন্তান অসুস্থ থাকাতে তামিম ইকবালেরও খেলা অনিশ্চিত। এই দুই ঘটনার মাঝে আবার ঘটে সাকিবের এবারের আইপিএলে থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনা।
আইপিএলে খেলার জন্য যেখানে প্রতি মৌসুম ছাড়পত্র নিয়ে বিসিবির সঙ্গে সাকিবের একটা মনোমালিন্য তৈরি হয়, সেখানে সাকিবের এমন সিদ্ধান্ত ছিল ‘চমক’। এখন তিনি নিজেকে পুরো সময়টা জাতীয় দলের জন্য দিতে পারবেন। তাসকিনের পরিবর্তে রেজাউর রহমান রাজাকে নেয়া হয়েছে। অপরদিকে তামিম ইকবাল শেষ মুহুর্তে না খেললে মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলামের যে কাউকে দেখা যাবে একাদশে। এ রকম মিশ্র অনুভুতি নিয়েই আগামীকাল (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষ একমাত্র টেস্টের সিরিজ খেলতে নামবে। খেলা শুরু হবে সকাল ১০ টায়।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা যেখানে ২৩ বছরের, সেখানে আয়ারল্যান্ডের মাত্র ৬ বছরের। বাংলাদেশ খেলেছে ১৩৬টি টেস্ট। আয়ারল্যান্ডের সেই সংখ্যা মাত্র ৩টি। সর্বশেষ তারা খেলেছে ২০১৯ সালে। সার্বিক বিবেচনায় সব দিক দিয়ে বাংলাদেশই এগিয়ে। কিন্তু এই এগিয়ে থাকারও মাঝেও আবার ভয় আছে। আর সেই ভয় হলো টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম কোনও প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে নেমে বাংলাদেশ হারের নোনা স্বাদ পেয়েছে। এমন নজির বাংলাদেশ সর্বশেষ স্থাপন করেছিল ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গেই টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তান।
আজ আয়ারল্যান্ড যদি বাংলাদেশ একই স্বাদ দিয়ে দেয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! আবার আয়ারল্যান্ড আজ খেলতে নামবে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের সুখ স্মৃতি নিয়ে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েই ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল আইরিশরা।
এই হারের আগে বাংলাদেশ কিন্তু আইরিশদের বিপক্ষে ছিল অপ্রতিরোধ্য। এক তরফা ম্যাচ খেলে দলগত ও ব্যক্তিগত রেকর্ডের বন্যায় আইরিশদের ভাসিয়ে দিয়েই বাংলাদেশ এক একটি ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচে হোচট খাওয়াতে শঙ্কার দানাটা একটু বেশি বড় দেখাচ্ছে।
টেস্ট ম্যাচ হওয়াতে বাংলাদেশের শঙ্কাটা আরকেটু বড় হয়ে উঠেছে। কারণ সাদা পোষাকে লাল বলে বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা সুখকর নয়। কখনই ধারাবাহিক হতে পারেনি। ১৬ জয় আসলেও সেখানে ছিল না কোনও ধারাবাহিকতা। ১৩৬ টেস্টে জয় মাত্র ১৬টিতে। শেষ ৯ ম্যাচে নেই কোনও জয়। একটিতে ড্র করতে পেরেছিল। সর্বশেষ জয় এসেছিল গত বছর শুরুতেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। পরের ম্যাচেই আবার নিউ জিল্যান্ডের কাছে আবার হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। হারের পাল্লা পরে ভারী করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কাছে দুইটি করে এবং শ্রীঙ্কার কাছে একটিতে হেরে। আজ অবশ্য সেখানে দাড়ি টানার ইচ্ছে প্রবল টাইগারদের। সংবাদ সম্মেলনে জেতার কথাই বলেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশের শঙ্কার মাঝে আশাও আছে। সেই আশাতে আছে আবার আত্মবিশ্বাস ভরপুর। সেই আত্নবিশ্বাসের নাম চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই বাংলাদেশ আছে জয়ের ধারায়। হতে পারে তা রঙিণ ক্রিকেটের দুনিয়াতে। কিন্তু জয়তো। জয়ের সংখ্যাও আবার একটি কিংবা দুইটি নয়। ওয়ানডেতে ৩টি, টি-টোয়েন্টিতে ৫টি। প্রতিপক্ষ হিসেবে আয়ারল্যান্ড ছাড়াও ছিল ইংল্যান্ড।
রঙিণ পোষাকে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে বাংলাদেশ আগ্রাসী ক্রিকেটে খেলেছে। সেই আগ্রাসী ক্রিকেট তারা সাদা পোষাকের ক্রিকেটেও ছড়িয়ে দিতে চায়। কোচের দৃষ্টি ভঙ্গি এমনই।
সাদা পোষাকে পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশের ভারতে বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ টেস্ট একাদশ থেকে আজকের একাদশে তিনটি পরিবর্তন হতেই যাচ্ছে। নুরুর হাসান সোহান ও জাকির হাসান দলেই নেই। ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেছেন তাসকিনও। সেই সংখ্যা বেড়ে চার হতে পারে যদি তামিম না খেলেন।
বাংলাদেশে খেলা মানেই স্পিন স্বর্গ উইকেট। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষেও বাংলাদেশ তিন স্পিনার সাকবি-মিরাজ-তাইজুলকে নিয়ে খেলতে নেমেছিল। আয়ারল্যোন্ডের বিপক্ষে তিন স্পিনারের পরিবর্তে তিন পেসার দেখা যেতে পারে। কারণ পিচে সবুজের আবরন দেখা গেছে। তিন পেসার খেলালে সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও এবাদতের সঙ্গে শরিফুল অথবা রেজাউরের যে কোন একজন খেলতে পারেন। রেজাউর খেললে ১০২তম ক্রিকেটার হিসেবে তার অভিষেক হবে। তখন টস জিতলে বাংলাদেশ বোলিংই বেছে নেবে। সকালে যদি পিচে সবুজের আবরন না থাকে, সে ক্ষেত্রে তিন পেসারের পরিবর্তে তিন স্পিনারকেই দেখা যাবে। টস জিতলে তখন ব্যাটিংই হবে প্রথম পছন্দ।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম কোনও দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নেমে হারের স্বাদ পেলেও এখানে আইরিশদের ক্ষেত্রে তার ব্যতীক্রম হতে পার। কারণ তারা সাদা পোষাকে টেস্ট খেলার ছাড়পত্র পাওয়ার পর এখনও সেভাবে টেস্ট খেলার সুযোগ করে উঠতে পারেনি। মাত্র ৩টি টেস্ট খেলেছে যথাক্রমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
২০১৯ সালে খেলা সর্বশেষ টেস্ট একাদশের ৭ জনই নেই বর্তমানে দলে। টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে মাত্র ৬ জনের। তাই এই ৬ জন যদি শেষ পর্যন্ত একাদশে খেলেন, তারপরও তাদের একাদেশে ৫ জনের অভিষেক হবে নিশ্চিত। সেই টেস্টের একাদশ থেকে এবার মিরপুর টেস্টের একাদশে ৭টি পরিবর্তন অন্তত নিশ্চিত। কারণ, ৭ জন এবার স্কোয়াডেই নেই। অন্তত ৫ জনের টেস্ট অভিষেকও নিশ্চিত। গোটা স্কোয়াডে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে যে কেবল ৬ জনের! দেশের হয়ে তিনটি টেস্ট খেলা ক্রিকেটার হলন অ্যান্ডি বালবার্নি, যিনি সাকিবের সঙ্গে নামবেন টস করতে। তাদের কাছে তাই সাদা পোষাকে ম্যাচ খেলতে পারাতেই যেন আনন্দ। দেশের হয়ে সবকটি টেস্ট খেলা অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি তাই বলেই দিয়েছেন তারা এই টেস্ট উপভোগ করতে চান।
কিন্তু কথার সঙ্গে কাজের মিল নাও থাকতে পারে। কারণ সর্বশেষ যে টেস্ট তারা খেলেছিল লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, সেখানে তাদের সামনে জয়ের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। ইংল্যান্ডকে মাত্র ৮৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে নিজেরা প্রথম ইনিংসে করেছিল ২০৭ রান। পরে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৩ রান করলে আইরিশদের সামনে জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ১৮২ রানের। কিন্তু তারা দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫.৪ ওভারে মাত্র ৩৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেছিল।
এবার মিরপুরেও এমন কিছু তারা সৃষ্টি করতে পারলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ মনে রাখতে হবে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থা নড়বড়ে!
এমপি/এএস