বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের ‘বাংলাওয়াশ’
রূপকথা নয়, আলাদীনের চেরাগ নয়, নয় আকাশের তারা। উত্তাল মার্চে বাংলার জমিনে ইংলিশরা হয়েছে ‘ বাংলাওয়াশ’। স্বপ্ন পূরণের ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছে ১৬ রানে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান করে। বাংলাওয়াশ করার স্বপ্নে বিভোর টাইগাররা ইংলিশরদের আর সেই রান টপকে যেতে দেয়নি। তাদের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে করতে দেয় ১৪২ রান।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওভার প্রতি আটের নিচে রান কখনই নিরাপদ হয় না। এবারের সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডও ১৫৬ রান করে ম্যাচ জিততে পারেনি। বাংলাদেশ সহজেই সেই রান টপকে গিয়েছিল। কিন্তু আজ ইংল্যান্ড আর তা করে দেখাতে পারেনি। ৭৩ রানের ইনিংস খেলে লিটন দাস ম্যাচ সেরা। আর ৫১, অপরাজিত ৪৬ ও অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংস খেলে ১৪৪ রান করে (গড়ও ১৪৪.০০ )সিরিজ সেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
১৫৮ রানের পূঁজি নিয়ে ম্যাচ জিততে হলে বোলারদের ম্যাচ জেতানোর মতো বোলিং করতে হয়। বাংলাদেশের বোলাররা সেটিই করে দেখিয়েছেন। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে নেন ১ উইকটে। তাসিকনও ৪ ওভারে বোলিং করেন। ২৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। হাসান মাহমুদ কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে রান দেন ২৯। ৪ ওভার বোলিং করেন অধিনায়ক সাকিবও। তিনি ৩০ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ২ ওভারে ১৭ রান দিলেও তার ঝুলিতেও ছিল ১ উইকেট। তার সেই উইকেট ছিল আবার ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই। আগের ম্যাচের ম্যাচ সেরা মেহেদি হাসান মিরাজ ২ ওভারে ১৮ রান দিয়ে এবার থাকেন উইকেট শূন্য।
ম্যাচে দুই দলের বোলিংই ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের সংগ্রহ যেমন ১৫৮-তে থেমে যাওয়ার কথা ছিল না, তেমনি ইংল্যান্ডেরও এই ম্যাচ হারার কথা ছিল না। ১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১। সেখানে তারা শেষ ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে যোগ করে মাত্র ২৭। এখানেই বাংলাদেশের হারের শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা আরও ঘনিভূত হয়েছিল যখন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ডেবিড মালান ও অধিনায়ক জস বাটলার ৯৫ রান যোগ করে দলের রান ১ উইকেটে ১০০ তে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন তাদেরই জয়ের পাল্লা ছিল বেশি ভারী। তখন তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪১ বলে ৫৯ রানের। হাতে ৮ উইকেট। খুব বড় টার্গেট নয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের বোলাররা দারুণভাবে ফিরে আসেন। এই ফিরে আসাতে ইংল্যান্ড আর লক্ষ্য পাড়ি দিতে পারেনি। মুখ থুবড়ে পড়ে।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল কিন্তু জয়ের মতোই। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম তার প্রথম বল ডেভিড মালানের হাতে চার হজম করার পর তৃতীয় বলেই পেয়ে যান উইকেট। তবে তা মালানের নয়, ফিল সল্টের। ফিল সল্টের সেটি ছিল আবার প্রথম বল। লিটনের বিচক্ষণতায় হয়ে যান স্ট্যাম্পিং। থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা নিয়ে ফিল্ড আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন।
প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়ার পর তাসকিন দ্বিতীয় ওভার করতে এসে ডেভিড মালানকে আউট করেছিলেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। এই বেঁচে যাওয়াই পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য ‘কাল’ হয়ে উঠে। মালান যখন আউট হন, তথন ম্যাচ অনেকটাই ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে। অধিনায়ক জস বাটলারের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৫ রান যোগ করেন ১২.৪ ওভারে। মালান আউট হন ৪৭ বলে ২ ছক্কা ও চারে ৫৩ রান করে মোস্তাফিজে বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তিনি ৪৩ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ সেঞ্চুরি। পরের বলে মিরাজের অসাধারণ এক থ্রোতে বাটলারকে রান আউট করলে বাংলাদেশের আবার ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বাটলার আউট হন ৩১ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৪০ রান করে। এ সময় ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেটে ৪০ বল ৫৯ রানের।
তাসকিন তার এক ওভারে প্রথমে মঈন আলীকে (৯) মিরাজের সহায়তায় ও পরে বেন ডাকেটকে (১১) বোল্ড করলে ম্যাচে বেশ ভালোভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ। সম্ভাবনা আবার জেগে উঠে বাংলাওয়াশের। এ সময় ইংল্যান্ডের রান ছিল ১৭ ওভারে ৪ উইকেটে ১২৩ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৮ বলে ৬ উইকেটে ৩৬ রানের। অনেক কঠিন পথ। সেই কঠিন পথকে আরও কঠিন করে তুলেন ১৯ নম্বর ওভারে সাকিব ৪ রান দিয়ে স্যাম কুরানের উইকেট তুলে নিলে। ক্যাচ ধরেন তানভীর ইসলাম।
ষে ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭ রানের। ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান ক্রিস ওকস ও ক্রিস জর্ডান। হাসান মাহমুদের করা ওভারের প্রথম ২ বলে বাউন্ডারি মেরে উত্তেজনার বার্তা দিয়েছিলেন ওকস। কিন্তু এই শেষ। পরের ৪ বলে আসে ২ রান, তাও লেগ বাই থেকে। ফলে উত্তেজনার বার্তা দিয়ে ফুরুৎ করে তা নিভে যায়।
এমপি/আরএ/