বিসিএলে আলো ছড়ালেন যারা
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে বিপিএ্রল যেন আপন সন্তান। আর বাকি সব টুর্নামেন্ট সৎসন্তান। বিপিএল আয়োজন নিয়ে বিসিবির প্রায় সর্বস্তরের কর্তারাই নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। রাখা হয় না জাতীয় দলের কোনো খেলা। এমনকি এ সময় জাতীয় দলের কোনো ক্রিকেটারকে অন্য কোনো ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলার অনাপত্তি পত্রও দেওয়া হয় না।
এই সুযোগ-সুবিধা কিন্তু আবার বিসিএল, এনসিএল এমনকি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মজবুত কাঠামো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) সময় রাখা হয় না। এই সব আসর যখন অনুষ্ঠিত হয়, তখন থাকে জাতীয় দলের খেলা। ফলে পাওয়া যায় না জাতীয় দলের ক্রিকেটারদর।
আবার খেলা না থাকলেও তাদের সবাই শামিল হন না সকল আসরে। বিশেষ করে বিসিএল ও এনসিএলে। আবার ডিপিএল খেলার সময় কোনো কোনো ক্রিকেটারকে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলার জন্য ছাড়পত্রও দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও বিসিবির এমন বিমাতা সুলভ আচরণের মাঝেও আসরগুলো বছরের পর বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে নতুনরা নিজেদের ডানা মেলে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। মিলছে নতুন মুখের সন্ধানও।
এই আসরগুলোর একটি বিসিএল এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে লম্বা বিরতি দিয়ে। লম্বা বিরতি ছিল বিসিবির আপন সন্তান বিপিএলের জন্য। আবার যখন খেলা মাঠে গড়িয়েছে, তখন চলছিল আর্ন্তজাতিক সিরিজ। প্রথমে ছিল ভারত, পরে ইংল্যাণ্ড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ এখনো চলমান। এরই মাঝে অবশ্য পর্দা নেমেছে আসরের। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মধ্যাঞ্চলকে ইনিংস ও ৩৩ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জিতে নিয়েছে দক্ষিণাঞ্চল।
আর্ন্তজাতিক সিরিজ ও বিপিএলের ডামঢোলে আড়ালে পড়ে যাওয়া বিসিএলে কিন্তু এবার নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের মাঝে সবার আগে নাম আসবে রানার্সআপ মধ্যাঞ্চলের উইকেটকিপার জাকরে আলীর। তবে কিপিং গ্লাভস পড়ে নয়, ব্যাট হাতে। চার দলের আসরে লিগ পর্বে খেলা হয় তিনটি। এরপর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দু্ই দল খেলে থাকে ফাইনাল। জাকের আলী লিগ পর্বের তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ফাইনালে সেঞ্চুরি করতে না পারলেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ৪ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি আর ১ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৯২ রান করে তিনি সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে শীর্ষ রান সংগ্রহকারী। গড় ৯৮.৪০। স্ট্রাইকেরেট ৫৬.১০। তার সেঞ্চুরির ৩টি ইনিংস ছিল অপরাজিত ১৩৮, ১৩৮ ও ১২১। এমন নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে জাকের আলী জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছেন।
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া দক্ষিণাঞ্চলের সাদমান ইসলাম এই আসর দিয়ে ফিরে পান নিজেকে। প্রথম দুইটি ম্যাচ তিনি খেলতে পারেননি। ফাইনালসহ শেষ ২ ম্যাচ খেলে তিনি দুইটিতেই তিন অঙ্কের দেখা পান। এর মাঝে একটি নিয়ে যানি ডাবল সেঞ্চুরিতে। ফাইনালে তার ব্যাট থেকে আসে ২৪৬ রানের ইনিংস। ক্যারিয়ারে এটি ছিল তার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। তার সেঞ্চুরির অপর ইনিংস ছিল ১৩০ রানের। দুইটি সেঞ্চুরিই তিনি করেছিলেন মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে। ২ ম্যাচের ৩ ইনিংস ব্যাট করে ৩৭৬ রান করে জাকের আলীর পরেই অবস্থান করছেন সাদমান। তার গড় ১২৫.৩৩।
৩৩৩ রান করে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া আরেক ক্রিকেটার দক্ষিণাঞ্চলের ফজল মাহমুদ আছেন তিনে। ৪ ম্যােচর ৬ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে কোনো সেঞ্চুরি আসেনি। তবে তার থেকে ১ রান করে চারে থাকা পূর্বাঞ্চলের জহুরুল ইসলাম অমি। ৩ ম্যাচের ৫ ইনিংসে তার দুইটি সেঞ্চুরি ইনিংস ছিল ১৪৫ ও ১০৩ রানের। নাঈম ইসলামও দুইটি সেঞ্চুরি করেছেন অপরাজিত ১০৭ ও ১০৭ রানের। ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ব্যাট করে উত্তরাঞ্চলের এই ব্যাটসম্যান ৩২৮ রান করে আছেন ষষ্ঠ স্থানে। কোনো সেঞ্চুরি না করেও ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসই ব্যাট করে ২৫২ রান করে নাঈমের দলেরই তানজিদ হাসান ।
ব্যাটসম্যানদের মেতা বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন বোলাররাও। ১৯ উইকেট নিয়ে সবার উপরে দক্ষিণাঞ্চলের বাঁহাতি স্পিনার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া নাজমুল ইসলাম অপু। তার সেরা বোলিং ছিল ৭৪ রানে ৮ উইকেট। ইনিংসে সেরা ছিল ৮ রানে ৪ উইকেট। ১৭ উইকেট নিয়ে দুইয়ে আছেন মধ্যঞ্চলের পেসার আবু হায়দার রনি। ১২৬ রানে ৯ উইকেট ছিল তার ম্যাচ সেরা। ইনিংসে সেরা ছিল ৫৫ রানে ৫ উইকেট। একই দলের পেসার মুশফিক হাসান ১৬ উইকেট নিয়ে তিনে। ম্যাচে ১০৬ রানে ৬ উইকেট ও ইনিংসে ৫৪ রানে ৫ উইকেট ছিল তার সেরা বোলিং। চারে আছেন দক্ষিণাঞ্চলের পেসার সুমন খান। তার উইকেট সংখ্যা ১৩টি। ১২৫ রানে ৬ উইকেট তার ম্যাচ সেরা। ইনিংসে সেরা বোলিং ছিল ৭৭ রানে ৪ উইকেট।
ফাইনালে প্রথম ইনিংসে একটি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রানে পাঁচটি উইকেট নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জাতীয় দলের পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ১১ উইকেট নিয়ে অবস্থান করছেন পাঁচে। ম্যাচে তার সেরা বোলিং ছিল ১২৩ রানে ৬ উইকেট।
এমপি/এমএমএ/