সেই চট্টগ্রামেই ইংল্যান্ড ‘বধ’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যের উর্বর ভূমি চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রামেই বাংলাদেশ পেয়েছে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয়। ঘরের মাঠে একদিনের ম্যাচেও প্রথম জয় এসেছে চট্টগ্রামেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ম্যাচটিও ছিল বন্দরনগরীতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে পাওয়া একটি জয়ও এসেছে সাগরিকা থেকে। সেই চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়ে নিজেদের সাফল্যের ঝুড়ি আরও ভারী করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ২৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা ইংল্যান্ড এবার থেমে যায় ১৯৬ রানে। এই জয়ের ফলে বাংলাদেশ সিরিজ হারলেও হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পেরেছে। ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৭৫ রান করার পর বল হাতে ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাধারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৬ রান জেতার পুঁজি ছিল না। আবার এই রানও কখনো কখনো নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠে যদি বোলাররা নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পারেন। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র ২০৯ রান করেও ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ক্ষুরধার বোলিংয়ে। প্রথম ম্যাচ হারের পর দলের পক্ষ থেকে ৩০-৩৫ রানের ঘাটতির কথা জানানো হয়েছিল। আজ চট্টগ্রামে ২৪৬ রান করার পর সবকিছু নির্ভর করছিল বোলারদের উপর। তারা সেই আস্থার প্রতিদান দিলে দর্শকখরা সাগরিকা স্টেডিয়ামে স্বাধীনতার মাসে লাল-সবুজের পতাকায় ঢেউ খেলে যায়।
তিন মাসে আগে বাংলাদেশ চট্টগ্রামে এসেছিল ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করতে। সেখানে তারা উল্টো লজ্জায় পড়েছিল ভারতের ৮ উইকেটে ৪০৯ রানে চাপা পড়ে। এবার বাংলাদেশ এসেছিল নিজেরাই হোায়াইটওয়াশ এড়াতে। ভারতের মতো তারাও সফল হয়েছে।
বলা যায়, বাংলাদেশকে জয়ে এনে দিয়েছেন স্পিনত্রয়ী সাকিব-তাইজুল-মিরাজ। তিনজনে ২৯ ওভার বোলিং করে ১৩৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৭ উইকেট। বাকি ৩টি ছিল দুই পেসার এবাদত ও মোস্তাফিজের।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ সেরা একাদশে পরিবর্তন এসেছিল একটি। আসরে এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং করে যাওয়া তাসকিন আহমেদকে বিশ্রামে রেখে এবাদতকে খেলানো হয়। তাসকিন না খেলায় দলের বোলিং আক্রমণ কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। সেখানে আবার ২৪৬ রানের পুঁজি। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচের হিসাব করলে এই রান কোনো সম্বলই নয়। কিন্তু তিন স্পিনার মিলে সেই রানকেই নিরাপদ করে তুলেন। সাকিব ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। তাইজুলের ২ উইকেট ছিল ১০ ওভারে ৫২ রানের বিনিময়ে। মিরাজ ৯ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। দুই পেসারের মাঝে এবাদত ৯ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকটে। চলতি আসরে নিজেকে খুঁজতে থাকা মোস্তাফিজ আজ ভালো বোলিং করেন। উইকেট নেন ১টি। রান দেন ৬.১ ওভারে মাত্র ২৫।
বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব। তা যেমন ব্যাট হাতে, তেমনি বল হাতেও। মুশফিকের ৭০ ও নাজুমলের ৫৩ রানের পরও বাংলাদেশ বড় সংগ্রহ করার পথে বড় ধাক্কা খায় অন্যদের ব্যর্থতায়। ঠিক তখন সাকিব খেলেন ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস। যা বাংলাদেশের ইনিংসকে ২৪৬ পর্যন্ত নিয়ে যায়। বল হাতেও তিনি প্রথম সাফল্য এনে দেন। সেই সাফল্য কখন আসে, যখন অতিথিদের দুই ওপেনার জেসন রয় ও ফিল সল্ট উড়ন্ত সূচনা করেছেন। প্রথম ৮ ওভারেই তারা রান সংগ্রহ করেন ৪৭। তাদের এরকম উড়ন্ত সূচনার পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন সাকিব ফিল সল্টকে (৩৫) আউট করে। পরের ওভারে এবাদত ডেঞ্জারম্যান ডেভিড মালানকে কোনো রান করতে না দিয়েই ফিরিয়ে দেন। উইকেট পতনের ধারাবাকিতায় সাকিবের পরের ওভারেও ইংল্যান্ড উইকেট হারায় জেসন রয়ের (১৯)। বিনা উইকেটে ৫৪ রান থেকে ৩ উইকেটে ৫৫। ১ রানে ৮ বলে নেই ৩ উইকেট।
এই যে ইংল্যান্ড চাপে পড়ে, এই চাপ থেকে পরে তারা আর বের হয়ে আসতে পারেনি। ব্রজপাতের মতো বাংলাদেশের বোলাররা তাদের উপর আঘাত করতে থাকেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে জেমস ভিন্স ও স্যাম কারান ১৩.৩ ওভারে ৪৯ রান যোগ করে দলকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ফলপ্রসূ হতে পারেননি। কারণ ওই স্পিন শক্তি। এবার এগিয়ে আসেন মিরাজ। তিনি স্যাম কারানকে ২৩ রানে ফিরিয়ে দিয়ে ভাঙেন জুটি। এরপর আর কোনো বড় জুটি গড়তে পারেনি। কিংবা কেউ ব্যক্তিগতভাবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। এই না খেলার কারণ ছিলেন এবার সাকিবের সঙ্গে তাইজুল-এবাদত-মোস্তাফিজ।
জেমস ভিন্স ইনিংসকে লম্বা করার পথে সাকিব দ্বারা বাধাগ্রস্ত হন ব্যক্তিগত ৩৮ রানে। ভিন্স আউট হওয়ার পরপরই মঈন আলীও দ্রুত ফিরে যান এবাদতের শিকার হয়ে। দলের রান তখন ৬ উইকেটে ১৩০। ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায় বাংলাদেশের।
অধিনায়ক জস বাটলার ক্রিস ওকসকে নিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর পথে আঘাত হানেন তাইজুল বাটলারকে ২৬ রানে ফিরিয়ে দিয়ে। এরপর ক্রিস ওকস এক প্রান্ত আগলে রাখলে বাংলাদেশের জয় বিলম্বিত হতে থাকে। অপরপ্রান্তে একে একে দ্রুতই ফিরে যান আদিল রশিদ (৮) তাইজুলের এবং রেহান আহমেদ (২) সাকিবের শিকার হয়ে। রেহানকে আউট করে সকিব ওয়ানডে ক্রিকেটে তার ৩০০ উইকেট পূর্ণ করেন।
জোফরা আর্চারকে নিয়ে ক্রিস ওকস যখন শেষ জুটির খেলা খেলছেন, তখন তাকে আউট করতে এগিয়ে আসেন আগের দুই ম্যাচে কোনো উইকেট না পাওয়া মোস্তাফিজ। নিজের বলে নিজেই যখন ক্যাচ ধরেন, তখন ওকসের রান ৩৪।
এমপি/এসজি