হানিফ ফ্লাইওভার: ৩ বছরে ১৩৭ জনের মৃত্যু!
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৩৭ জন মানুষ। এ দুর্ঘটনার বেশিভাগ শিকার হয়েছেন মোটরসাইকেল চালক ও সাধারণ পথচারি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্ঘটনার মূল কারণ গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং ফ্লাইওভারের উপরে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করা। তবে এসব বন্ধের জন্য নেই কোনো উদ্যোগ ও নজরদারি।
পুলিশের ঢাকা মেট্রোপলিটন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, হানিফ ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ২০১৯ সালে মারা গেছেন ৩৩ জন, ২০২০ সালে ৫৭ জন ও ২০২১ সালে ৪৭ জন। পুলিশ বলছেন, নিহতদের বেশিরভাগই মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। যদিও এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
দেখা যায়, ১১.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভারে টোল প্লাজা ছাড়া কোথাও বাসে বা অন্য কোনো পরিবহনে যাত্রী ওঠানামা করার কোনো নিয়ম নেই। এরপরও সড়ক পথের যানজট এড়ানোর জন্য অনেক পথচারীদের ফ্লাইওভারে উঠে যাতায়াত করেন। ফাঁকা ফ্লাইওভারে এলোমেলোভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে দ্রুতগামী যানবাহনের কবলে পড়ে হতাহতের শিকার হচ্ছেন। হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী উঠানামা করছে এবং এটা নিয়ম হয়ে গেছে। এ কারণেও যাত্রীদের চলাচল রয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো নজরদারি নেই প্রশাসনের।
মোটরসাইকেল চালকরাও একই কারণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দ্রুত বেগে চলতে গিয়ে অনেকেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ এরফানুল আজিম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ফ্লাইওভারে যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোর বেশিরভাগ দেখা গেছে চালকের ওভার স্পিডের কারণে। অনেক সময় দেখা যায় তারা ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিছু কিছু সময় ১২০ কিলোমিটার হাই স্পিডে কিছু চালককে গাড়ি চালাতে দেখি। তারা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। যখনই একটা চালক ১২০ কিলোমিটার বেগে কোনো মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালাবেন তিনি তখন গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে পারেন না। সেই ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। কাজেই সতর্কতার বিকল্প নেই। সতর্ক থাকলে এসব দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, যারা গাড়ি চালান বা চালাবেন তাদের স্পেশাল অ্যাটেনশন দরকার। কিন্তু এগুলো তো আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। এসব জায়গায় আমাদের নিয়ম মেনে উঠতে হবে এবং নামতে হবে। আসলে সেফটি অডিটের ব্যবস্থা করা দরকার।
তিনি বলেন, যে যে জায়গায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে তার কারণ বের করে এর সমাধানের পথ আমাদের খুঁজতে হবে। পেশাদার লোকদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে।
ফ্লাইওভারের দুর্ঘটনা বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ফ্লাইওভারের উপর মানুষ যত্রতত্র ওঠানামা করে এবং বিভিন্ন জায়গায় চালকরা গাড়ি থামায়, এ কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটছে। ফ্লাইওভারে পুলিশি টহল দেওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে যদি আমরা টহল রাখি সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য গাড়ির গতির সঙ্গে মিলিয়ে পথ অতিক্রম করতে হয়। এছাড়া রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করে রাখার কোনো লাইন নেই। এজন্য ফ্লাইওভারের উপর টহল দেওয়া সম্ভব হয় না।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা হয়েছে, এখানকার দুর্ঘটনা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রথমত পথচারি চলাচল বন্ধ করা, দ্বিতীয়ত দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচলের ভয়াবহতা সম্পর্কে চালকদের সচেতন করা। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কেএম/এপি/আরএ/