সিইসি ও ইসি হতে পারেন যারা
আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্য লোকই আসতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে। একইভাবে নির্বাচন কমিশনার পদেও থাকবে চমক। তবে এটা নিশ্চিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে মন্ত্রিপরিষদের কোনো সাবেক সচিব ও সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান অথবা বিচার বিভাগের কেউ আসছে না। থাকছেন না সাবেক মুখ্য সচিবদের মধ্যে থেকেও কেউ। এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে অনুসন্ধান কমিটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কমিটি মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দশ জনের নাম চূড়ান্ত করেছে। যেখান থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
অনুসন্ধান কমিটি ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতির মো. আবদুল হামিদ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ওই সময় কমিটি চূাড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করবে। সেই তালিকা থেকেই রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন। সেই জন্য আরও দুই একদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, এবার নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সরকার কোনো রকম বিতর্কে যেতে চায় না। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। এক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে এমন একজন আসতে পারেন যাকে নিয়ে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিরও কোনো আপত্তি থাকবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন আইন, ধর্ম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহম্মদ সাদিক। এই দুই জনের যেকোনো একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে আসতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এই দুই জনের মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মজীবন শুরু করেন জেলা মুনসেফ হিসেবে। দীর্ঘ কর্ম জীবনে তিনি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার নামটি প্রস্তাব করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অনুসন্ধান কমিটির সঙ্গে বিশিষ্টজনদের বৈঠকে অন্তত ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এরমধ্যে হাবিবুল আউয়ালের নাম ছিল।
অন্যদিকে অনুসন্ধান কমিটির বৈঠকে বিশিষ্টজনদের মধ্যে থেকে একটা দাবি উঠেছিল নির্বাচন কমিশনে যেন একজন নারী সদস্য নির্বাচন কমিশনার করা হয়। এবার আলোচনায় আছেন একজন নারী। যিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পাদ মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনার পদে এবার আসতে পারেন নির্বাচন কমিশনের আকষ্মিক পদত্যাগ করা যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম। তিনিও আলোচনায় আছেন।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের গুঞ্জুন শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২- এ বলা হয়েছে- নির্বাচন কমিশনার হতে হলে কমপক্ষে ২০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনো লাভজনক পদে থাকাকালে নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন না। ইসির যুগ্ম সচিব পদটিও লাভজনক। আর আবুল কাসেমের কমপক্ষে ২০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আবুল কাসেম ১৯৯০ সালের ২৪ মার্চ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ধারাবাহিক পদোন্নতি পেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে যুগ্ম সচিব পদে অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তিনি অবসরে গেলে ইসির চাহিদা মোতাবেক তাকে সরকার দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। ওই বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন আবুল কাসেম।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার পদে পুলিশের সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তা আসতে পারেন এই পদে।
সার্চ কমিটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক কাজে দক্ষ লোকই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা মুখ্য সচিবদের মধ্যে কেউ হচ্ছে না এটা বলতে পারি। এর বাইরে কোনো কিছু বলতে পারব না। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি সময় দিয়েছেন আমরা ১০ জন চূড়ান্ত করেছি রাষ্ট্রপতির কাছেই সেই নাম তুলে দেওয়া হবে বলে জানান এই সদস্য।
সব মহলের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন পাস হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৬ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে গঠিত সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান,সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, মহা হিসাব নিরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
অনুসন্ধান কমিটি ৬ ফেব্রুয়ারি নিজেদের মধ্যে প্রথম বৈঠক করে। এরপর তারা আরও কয়েক দফা বৈঠকে মিলত হন। তারপর কমিটি ১০ ফেব্রুয়ারির বিকাল ৫ টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সুধিজনের কাছ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের জন্য নাম প্রস্তাবের আহ্বান করে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগসহ ২৪ টি রাজনৈতিক দল ও ৬টি পেশাজীবী সংগঠন নাম প্রস্তাব করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায় থেকে দেশ এবং বিদেশ থেকে অনেক নাম জমা পড়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
পরবর্তীকালে অনুসন্ধান কমিটি দেশের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে পৃথক চারটি বৈঠক করেন। এসব বৈঠক থেকে নাম প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়। এই প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান কমিটি ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করে। নাম প্রকাশ করলেও অনুসন্ধান কমিটি মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নাম প্রস্তাব করার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিএনপির হয়ে জাফারুল্লাহ চৌধুরীই তাদের নাম দিয়েছেন।
এসএম/