বাংলাদেশের কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বছর ২০২২
২০২২ সাল বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই এবছর উদযাপিত হচ্ছে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেও উদযাপিত হচ্ছে বছরটি। বাংলাদেশের বন্ধুভাবাপন্ন বিভিন্ন দেশও এ উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। ১৯৭২ সালে যেসব দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো জার্মানি, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, নেপাল, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা, সিঙ্গাপুর সুইজারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মিয়ানমার। এসব দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।
যদিও কিছু প্রভাবশালী দেশ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ভারত ও ভুটান ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত বিজয়ের আগেই বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশ দুটি ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এই দেশ দুটি কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্মারক মুদ্রা, স্মারক বই, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা প্রভৃতি। দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে এবং ঢাকায় দেশগুলোর মিশনে এসব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
কূটনেতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এছাড়া এ উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনকে দেশটির সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মার্চে ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জাপান স্মারক মুদ্রা তৈরি করেছে এবং জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাসে উদযাপন অনুষ্ঠানও হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যাত্রাবিরতি দেন। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ নিজের ছুটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধুকে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে স্বাগত জানান। সেই কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরে ‘ব্রিট বাংলা বন্ধন’কে আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে যুক্তরাজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সফরে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একটি নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন যা একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রাপ্তি ত্বরান্বিত করে।
সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা বার্তায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা, শান্তি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো প্যাসিফিক গড়তে প্রস্তুত। দুই দেশ বাণিজ্য, অর্থনীতি ও সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে আগামীতে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের কূটনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক কর্মী দেশটিতে কাজ করে কোটি কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠায় দেশে। ১৯৭২ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সিঙ্গাপুর।
কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশটির রাষ্ট্রপতি হালিমা ইয়াকুব ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন এবং সম্পর্ককে সামনের দিনগুলোতে আরও শক্তিশালী করা অঙ্গীকার করেছেন।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডও জাকজমকপূর্ণভাবে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে ঢাকার থাই দূতাবাস বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকার থাই দূতাবাস জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলা ও থাই ভাষায় ৫০টি নিবন্ধ প্রকাশ করবে। এছাড়া থাই সিনেমা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।
গত বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। বিশ্বের ১৮টি দেশে বাংলাদেশ-ভারত একযোগে মৈত্রী দিবস পালন করেছে। ঢাকায় আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরইউ/