ইলেকট্রিক ট্রেনের যুগে প্রবেশের উদ্যোগ রেলওয়ের

সরকার দেশের যোগােযাগ ব্যবস্থা উন্নতি করতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং অনেক প্রকল্প ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে আধুনিক করে ইলেকট্রিক যুগে প্রবেশের উদ্যোগ নিচ্ছে রেলওয়ে। অর্থাৎ ‘ইলেকট্রিক ট্রাকশন’ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রেল সূত্র জানায়, নারায়গঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের জন্য ইলেকট্রিক ট্রাকশন বসানোর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাতে নেওয়া রেলওয়ের এই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
জানা গেছে, চীন ও বাংলাদেশের একাধিক জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রে অংশ নিয়েছে। আগামী জুন-জুলাই মাসের দিকে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপত্র যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছেন, দরপত্র মূল্যায়নের পর চূড়ান্ত করা হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ইলেকট্রিক ট্রাকশন বসানোর বিষয়ে সমীক্ষা চালাবে। এক বছরের মধ্যে তারা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন জমা দেবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী রেলপথেও ইলেকট্রিক ট্রাকশন বসানোর কথা ভাবছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর দ্বিতীয় লাইনের বিষয়ে অগ্রসর হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ইলেকট্রিক ট্রাকশন বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা রেলকে আরও আধুনিক ও যুগপোযোগী করার কথা ভাবছি। আমাদের পাশের দেশগুলোতেও ট্রেন এখন ইলেকট্রিক ট্রাকশনে চলাচল করছে। আমরা এখনো পিছিয়ে আছি।’
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে ইলেকট্রিক ট্রাকশন বসানোর। এ জন্য আমরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছি।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, রেল ব্যবস্থাকে যদি আধুনিকায়ন করতে হয় তাহলে বিদ্যুৎ ছাড়া এটা করা সম্ভব না। আপনারা জানেন যে, আমাদের দেশে বিদ্যুৎ এর খুব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এই উদ্যোগগুলো আগে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বস্তিকর একটা অবস্থায় আছি। এখন বিদ্যুৎ এর খুব একটা ঘাটতি নেই। ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ এর উৎপাদন বাড়ছে, ফলে ভবিষ্যতে সমক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে এখন চলছে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন দিয়ে। বহু বছর ধরে পুরোনো ইঞ্জিনের উপর ভর করে চলে আসছে রেলওয়ের যাত্রীসেবা।
রেলওয়ের উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নেওয়া হয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে রেলওয়ের বহরে যুক্ত হয়েছে যাত্রীবাহী নতুন কোচ। ইতিমধ্যে মিটার গেজ ও ব্রড গেজের ৪৬টি ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল এসব ইঞ্জিনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে রেলওয়েকে আরও গতিময় করতে ২০১৭ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুলেট ট্রেন চালুর। সে জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১০ কোটি টাকা।
চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই, নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ করে গত অক্টোবরে রেলওয়ের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তারা। নভেম্বরে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
কিন্তু সম্প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত বুলেট ট্রেনের পরিকল্পনা বাদ।
এনএইচবি/এমএমএ/
