বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিশেষ সাক্ষাৎকারে মতিয়া চৌধুরী

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ভেতো বাঙালি লড়াকু বাঙালিতে পরিণত হয়েছিল

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ ২৬শে মার্চ। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় এই দিনটি। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তারের আগমুহূর্তে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই দিনের সেই ঘোষণা কোথায় ছিলেন কী অবস্থায় ছিলেন তার স্মতিচারণ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর আহ্বান বাঙালি অকাতরে জীবন দিয়েছে, ভেতো বাঙালি লড়াকু বাঙালিদের পরিণত হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার শাহজাহান মোল্লা।  

ঢাকাপ্রকাশ: ভয়াল সেই ২৫শে মার্চ আপনি কোথায় ছিলেন? তখনকার কোনো স্মৃতি কথা যদি বলেন।

মতিয়া চৌধুরী: ৭ই মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে সেখানে বঙ্গবন্ধুর যে আহ্বান এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেটাই আমাদের ভেতরে আমাদের যে দিকনির্দেশনা, এটা বঙ্গবন্ধু তরফ থেকে সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে আলোচনা চলছিল এবং আলোচনায় ফলাফল কী হবে সেটা খুবই অনিশ্চিত ছিল বরং নেতিবাচকের দিকে যাবে সেটা প্রত্যেকটি বাঙালি জানতো। এই অবস্থায় ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়া সেখানে বাঙালি তার প্রস্তুতি নিয়েছিল। আমি তখন থাকতাম সিদ্দিক বাজার। কিন্তু নানান কাজে তখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় থাকতাম। ২৫শে মার্চ রাতে আমি ছিলাম খিলগাঁও আমার খালার বাড়ি। তখন এত দালানকোঠা ওঠে নাই। খিলগাঁও রেলগেট থেকে রাজারবাগের কিছু অংশ সকাল বেলা দেখা যেত। তখন তো মানুষের পদচারণ এতটা ছিল না। বিশেষ করে রেললাইনের এখানে আসলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন এটা একেবারে পরিষ্কার দেখা যেত। ওই রাতে যখন গুলি শুরু হয় রাজারবাগের পুলিশরা তারা বীরত্বপূর্ণভাবে তাদের থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে এটা প্রতিরোধের চেষ্টা করে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা প্রতিরোধের সেই লড়াই চালিয়ে যায়। কিন্তু তারা তো (পাক সেনারা) এসেছে মেশিনগান, এসএমজি নিয়ে,  সেই অবস্থায় এটা কতক্ষণ টিকতে পারে? ওই রাতেই আমি প্রথম ট্রেসার বুলেট দেখলাম। কীভাবে ম্যাগনেসিয়াম প্লেয়ার দিয়ে আকাশটা একদম ঝকঝকে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। অন্ধকারের ভেতর লোকেশনগুলো খুঁজে বের করা। এগুলো পরে শুনেছি ।

তখন তো দেখেছি হঠাৎ আকাশ সকালের চাইতেও ফর্সা। অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুকে খোঁজার জন্য তারা এটা ব্যবহার করেছে। সারারাতই হত্যাযজ্ঞ চলে এবং ভোরের দিকে যখন তারা টিকতে পারেনি। ওদিক দিয়ে যেহেতু খোলা ছিল। রাজারবাগ থেকে লুঙ্গি পরা, গেঞ্জি গায়ে সিভিল ড্রেসে সব আসতে থাকে। সেই অবস্থায় অনেককেই আমরা তখন পানি খাওয়াই। কারণ সারারাত তারা লড়াই করে ক্লান্ত। তাছাড়া বহুদূর হেঁটে তারা আসছেন। কিন্তু আমি একবারও কাউকে বলতে শুনি নাই যে আমরা পারব না। তারা তাদের সঙ্গী-সাথী যারা ছিল যারা মারা গেছেন কিন্তু তারপরেও বলছে যে যাইয়া নিই, গ্রামে যাইয়া নিই দেখুম পাক বাহিনীদের, পশ্চিমাদের। ওইভাবে কথাটা বলতো। সেইদিন অনেক জায়গায় এই যে ক্রল করে হাঁটা বা এভাবে আগানো এটাও সেই রাত্রেই আমার প্রথম দেখা। মাঝে মধ্যে খিলগাঁও থেকে আগানোর চেষ্টা করেছি, দেখার চেষ্টা করেছি রিস্ক ছিল কিন্তু তবুও একদিকে আমাদের প্রতিরোধের যে স্পৃহা। সেই স্পৃহা আবার অন্যদিকে আমাদের সোলজারদের বিশেষ করে সেই পুলিশ ভাইয়েরা তারা যে লড়াই করতেছে সেটা দেখেছি। আমি একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

সেই রাতে তারা যেভাবে অকাতরে মারা গেছে, অকাতরে তারা জীবন দিয়েছে। এটা খুব স্বাভাবিক মেশিনগানের সামনে কতক্ষণ টিকে? আর এদের তো এদেশের সাপ্লাইয়ার ছিল, কিন্তু রাজারবাগে পুলিশের যা ছিল তা-ই ছিল, তাদের-তো সাপ্লাই ছিল না। ৭ই মার্চের পর থেকে খানসেনারা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র আরও বাড়িয়ে নিয়েছিল। অন্যদিকে একটা গাড়ি সামনে পড়ে তাতে তারা একটু কাবু হয় এরপর পেছনের গাড়িটারে সামনে আসে। কিন্তু বাঙালি খালি হাতে সত্য কথা বলতে গেলে নিরস্ত্র বাঙালির সশস্ত্র করার যে একটা ভাব এটা ছিল রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ির সেই ২৫শে মার্চের রাত থেকে ২৬শে মার্চ। সেদিন থেকেই নিরস্ত্র একজন আনসার সে একটা লাঠি নিয়ে প্যারেড করেছে। তারপর পুলিশ আসে তাও ডিউটি করে সে অস্ত্র জমা দিয়ে আসতে হয়। সেই অস্ত্র কিন্তু সে নিজে বহন করতে পারত না। পুলিশ যখন সে ছুটিতে যায় সে অস্ত্র জমা দিয়ে যেতে  হতো। ওরা (পাকিস্তানিরা) ভাবছিল বাঙালিরা ৩ দিনে শেষ হয়ে যাবে। সেদিন খালি রাজারবাগ না, সেই রথখোলা বংশাল এ সমস্ত জায়গায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড তারা করেছিল। বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে টার্গেট করেছিল, ইউনিভার্সিটিতে তখনতো হলে থাকার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু তারপরেও ওরা.. মোটকথা ইয়াহিয়া খান বলেছিল যে, ‘আদমি নেহি মান্তা’ মানে আমি মানুষ চাই না মাটি চাই। তবে মানুষ আছে, শেষ হয় নাই, মাটিও আমাদের আছে। এটি হলো ২৬শে মার্চের সেই ভয়াল স্মৃতির শিক্ষা। মাটিও আছে, মানুষ আছে শেষ হয় নাই।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনারা কখন স্বাধীনতার যুদ্ধের বিষয়টা বুঝতে পারেন?

মতিয়া চৌধুরী: পাকিস্তানিরা তো যাবে না। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর ছবিটা দেখছেন। নারীরা ডামি রাইফেল নিয়ে প্যারেড করেছে। পাকিস্তানিরা তারা বেলুচিস্তানে ঈদের নামাজের জামাতে বোম্বিং করে নাই? ঈদের জামাতে বেলুচিস্তানে প্লেন থেকে বোম্বিং করা হয়। যুদ্ধ বিমান থেকে বোম্বিং করা হয়। এটা-তো ইতিহাস, লিপিবদ্ধ আছে, ডকুমেন্টারি। বঙ্গবন্ধু এইজন্য ১০ জানুয়ারিতে বলেছিলেন ভুট্টো সাহেব আপনারা সুখে থাকেন। তার ভাষণে কিন্তু এই কথাটা ছিল। পাকিস্তান নামের যে মোহ সৃষ্টি হয়েছিল সেই মোহ বাঙালির পুরা হয়নি।

ঢাকাপ্রকাশ: বঙ্গবন্ধু যখন গ্রেপ্তার হয় তখন আপনাদের মধ্যে কোন চিন্তার ভাঁজ পড়ে ছিল কিনা?

মতিয়া চৌধুরী: বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে বাঙালি লড়াইয়ের আন্দোলন-সংগ্রামের বিজয়ী হয়ে আমাদের ভেতরে আসতেন। তিনি তো বলেছিলেন আমি যদি হুকুম দেবার  নাও পারি, হুকুম তো তিনি এটা দিয়িই দিয়ে গেলেন। কাজেই হুকুম দেওয়ার জন্য মুখে বলার সময় টুকু যদি নাও পান কিন্তু তাঁর আহ্বানটা তো সেই নির্দেশনাতেই দিয়ে গেলেন। হুকুম দেবার নাও পারি তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। আর কীভাবে বোঝাবেন। এত সহজে তিনি কথা বলেছেন। এটা বুঝতে আর কারো কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।

ঢাকাপ্রকাশ: স্বাধীনতাবিরোধীরা অনেকেই বলে বঙ্গবন্ধু আত্মসমর্পণ করেছিলেন, এবিষয়ে কী বলবেন?

মতিয়া চৌধুরী: হ্যাঁ। কিন্তু তাদের কারও তো.. তাদের কি কেউ এভাবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পড়েছিল? তাদেরকে কেউ এভাবে.. সে রাত্রের কথা চিন্তা করেন, বেগম মুজিবের কথা? সে রাত্রে চিন্তা করেন শেখ হাসিনা, রেহেনা এদের কথা, কী অবস্থা। এই অবস্থার ভেতরে যদি তিনি কি ইয়ে করতেন তাহলে তো তারা অনেক খাতির তোয়াস করত। এগুলি অক্ষমের আস্ফলন। এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। অক্ষমের আস্ফলন নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

ঢাকাপ্রকাশ: মুক্তিযুদ্ধের সময় বাম জোটের যারা ছিলেন তাদের প্রশিক্ষণ নিতে কোনো জটিলতা তৈরি হয়েছিল কি-না?

মতিয়া চৌধুরী: প্রশিক্ষণ। যখন আমরা ভারতে গেলাম তখন আরকি, তখনতো আলাদাভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল। ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষক শ্রমিক লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন। কেন মহাবুবের ছবি দেখেন নাই ডাকসুতে? ব্যবস্থা যদি না হয় তাহলে রাইফেলটা এলো কোত্থেকে তার হাতে? আসলে যারা কিছু পারে না তারাই এ সমস্ত ছোট চিন্তা করে। মহৎ জিনিসকে খাটো করে দেখে। সবার অবদান কেউ অস্বীকার করবে না। আর অস্বীকার করলেই বা কি হবে সেটা ইতিহাসে থাকবে। সূর্যটা কে? কা-রে কেন্দ্র করে বাঙালি জেগেছিল? ৬ দফা কে দিয়েছিল? ৬ দফা তো বঙ্গবন্ধু দিয়েছিল, অন্য কেউ তো দেন নাই। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফাঁসির মঞ্চে, আগরতলাতে তাঁর ফাঁসি দিতে পারতো। যারা এটা বলেন, ইয়াহিয়ার ভাষণটা দেখেন, সেদিন কী বলেছিল ইয়াহিয়া, মুজিব উইল নট গো অন পানিস্ট। সেখানে তো আর কোন নেতার নাম বলে নাই? দিস টাইম মুজিব উইল নট গো অন পানিস্ট। কেন্দ্রবিন্দু একজন তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর আহ্বানে বাঙালি অকাতরে জীবন দিয়েছে। ভেতো বাঙালি লড়াকু বাঙালিতে পরিণত হয়েছে।

ঢাকাপ্রকাশ: যে লক্ষ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে?

মতিয়া চৌধুরী: সব পেয়েছির দেশে আমরা আছি সেটা আমি বলব না, কিন্তু দু ‘বেলা দু’মুঠো ভাত, মাথা গোঁজার ঠাঁই পরনে কাপড় এবং শিক্ষাব্যবস্থাটা প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। দেখুনতো পৃথিবীতে কয়টা দেশ বছরের প্রথমে নতুন বইয়ের গন্ধ শুকতে পারে। আসলে শেখ হাসিনা যা করেন আমাদের কাছে, অনেকের কাছেই মূল্যবান। কিন্তু অনেকের কাছে সেটা মনে হয় এটা কি? কিছুই না। তা মূল্যহীন। কিন্তু যারা বাইরে থেকে দেখে তারা বোঝেন। আসলে মানুষ সুখ পেলে দুঃখের দিন ভুলে যায়। শেখ হাসিনা সুখের দিনগুলি দিচ্ছেন, ফলে আমরা দুঃখের দিন ভুলে যাচ্ছি।

 

এসএম/

 

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান

সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম ও খুন করে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে। যে কোন মূল্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে। এই প্রশ্ন গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে 'আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় জুলাই আগস্ট বিপ্লবে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান এবং ‌র‌্যাবের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর উপহার উপলক্ষ্যে সোনাগাজী সরকারি ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলে যে সময়ক্ষেপণ করছে এবং সংস্কার কাজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে, তা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না সে ব্যাপরে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং ২৪এর জুলাই আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। এখন দেশে যে সংস্কারের আলোচনা চলছে সেই সংস্কার প্রস্তাব বিগত আড়াই বছর পূ্র্বে আমরাই দিয়েছিলাম। স্বৈরাচার আমাদের সংস্কার প্রস্তাব আমলে নেয়নি। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। কারণ বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং শহীদদের স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ হবে।

বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এর বড় কারণ হলো- দেশের জনগণ বিএনপির উপর আস্থা রাখতে চায়। কীভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও ফেনী পৌর বিএনপি'র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভেকেট রুহুল কবির রেজভী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক,জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, আবদুল লতিফ জনি, জালাল আহমদ মজুমদার, মামুনুর রশিদ মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লব, ফেনী জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু, সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঞা, শহীদ ছাত্রদল নেতা কাওছার উদ্দিনের পিতা ফিরোজ আলম, শহীদ মেহাম্মদ মাসুদের কন্যা মুনতাহা বিনতে মাসুদ ও শহীদ জাফর আহমদের কন্যা জাহানারা বেগম প্রমুখ।

এসময় ২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর এবং ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারসহ আহতদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।

Header Ad
Header Ad

মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর বদলগাছীতে মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে স্থানীয় আ'লীগের কর্মিরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কটকবাড়ি এলাকায় তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সিহাব নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য ও একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছী সদর এলাকার রাসেল ও সাথী নামে দুই যুবক-যুবতী গতকাল বিকালে নওগাঁ থেকে মার্কেট করে ফেরার পথে কটকবাড়ী এলাকায় মোটরসাইকেল থামিয়ে নদীর ধারে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্দেহ হলে ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মি প্লাবন,অনিক,আশিক, রাকিব,ইয়াজুলসহ ১০-১৫ জন কর্মি তাদের আটক করে মারধর করে। পরে তাদের নদীর ধারে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রদল কর্মী সিহাব সহ গ্রামবাসি ঐ ছেলে মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মি কয়েকজন অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সিহাব কে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সিহাব কে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।

বদলগাছি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাহিদ রানা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা কর্মি। মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় তার ওপরে হামলা করেছে।’

বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুমন হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের কর্মী সিহাব। ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’

তবে অভিযোগ ওঠা যুবকদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তাদের মধ্যে রিয়াজুল নামের এক অভিভাবক দায়সারা জবাব দেন। তিনি বলেন, ওই দুই যুবক-যুবতী অনৈতিক কার্যকলাপ করার জন্য এসেছিল। তাদের সন্দেহ হলে এলাকার ছেলেরা ধরে বিচার করতে চেয়েছিল। সিহাব এখানে এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একটু হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (৫ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন , ‘ছাত্রদল কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো অভিযোগ হাতে আসেনি। তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ