মামলা হলেও বিচার হয় কি?
১০ বছরে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ১১৭৬
সম্প্রতি সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন ফায়ারসার্ভিস। বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই সাধারণ মানুষ ও শ্রমিক। দেখা যাচ্ছে, কোথাও গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আবার কোথাও শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এখন যেমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে কয়েক বছর আগে এতটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল না। হঠাৎ এত অগ্নিকাণ্ড কেন? এসব বিষয় নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ এবং অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় কোনোভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় না যার ফলে অগ্নিকান্ড ভয়াবহ হয়ে ওঠে এবং এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রমিকরা।
বিশ্লেষকদের দাবি, সরকারিভাবে প্রত্যেকটা শিল্প-কলকারখানায় তদারকি করতে হবে। উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ আছে কি না দেখতে হবে। যদি কোনোভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তাহলে তারা যাতে অন্তত জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, শ্রমিক নিয়ে যেসব মানুষ বা শিল্প কারখানার মালিকেরা খেলা করছেন, শ্রমিকদের উপযুক্ত কর্মপরিবেশের ব্যবস্থা করছেন না, নিয়মনীতি মানছেন না, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং প্রতিটি ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে তাহলেই অগ্নিকাণ্ড অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
সাভার আশুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড
একটি তথ্য বলছে, চলতি বছরের গেল ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি সাভারের আশুলিয়া বঙ্গবন্ধু রোডে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে ইউনিওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩ জন মৃত্যুবরণ করেন এর মধ্যে দু’জন নারী অপর ব্যক্তির লাশ এমনভাবে পুড়ে গেছে চিহ্নিত করার কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছে ফায়ারসার্ভিস। এ ঘটনাটি সারাদেশে নতুন করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তেমন কোনো কারখানায় শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই যার কারণে শ্রমিকদের এভাবে নির্বিচারে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
এ ঘটনার পর বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ বলছেন, সম্প্রতি সাভার-আশুলিয়ায় যে ঘটনাটি ঘটেছে সম্পূর্ণ মালিকের অবহেলার কারণে এটি ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর সেখান থেকে শ্রমিকদের বের হবার যথেষ্ট সময় ছিল এরপরও কেন শ্রমিকরা বের হতে পারেননি? সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ, অবিলম্বে আগুনে দগ্ধ হয়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি যাতে সুষ্ঠু তদন্ত হয় এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়।
বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যান বলছে, সাভার আশুলিয়াতেই বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কারণ ঢাকার মধ্যে প্রশাসন কড়া নজরদারি রাখে, আশুলিয়া-সাভার ঢাকার বাইরে হওয়ার কারণে সরকারিভাবে নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে অতিরিক্ত দুর্ঘটনা ঘটছে এসব এলাকায়।
সাভারে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে
ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানার অগ্নিকাণ্ডে বহু হতাহতের ঘটনাটি এখনো দেশের মানুষের হৃদয়কে নাড়া দেয়। এরপর শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও উত্তর মেলেনি সেসব প্রশ্নের। বিগত কয়েক দশকে দেশে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বহু মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নেহায়েত কম নয়।
সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোন মামলা হয়নি। আবার দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজা হয়নি দোষীদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মামলার পর নানামুখী চাপে আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পর জামিন নিয়ে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে রয়েছে নিয়মনীতি না মানা ও নজরদারি না থাকার অভিযোগ এসব কারখানার বিরুদ্ধে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে এসব শিল্প কারখানায় কাজ করা শ্রমিকরাই আগুনে দগ্ধ হয়ে বেশি মারা গেলেও তা দেখার কেউ নেই এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
পরিসংখ্যান বলছে ১০ বছরে অগ্নিকান্ডে ১১৭৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে
ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে কারখানায় আগুনের ঘটনায় ২১০ জন নিহত ও ৮০৩ জন আহত হন, ২০১৩ সালে ১৬১ জন নিহত ও ১ হাজার ৪৭১ জন আহত হন, ২০১৪ সালে ৭০ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হন। একইভাবে ২০১৫ সালে আগুনের ঘটনা ছিল এক হাজার ১৩টি। এত নিহত হন ৬৮ জন।
২০১৬ সালে এক হাজার ১৬৫টি আগুনের ঘটনায় মারা গেছেন ৫২ জন। ২০১৭ সালে ১ হাজার ১৯টি শিল্প কারখানার আগুনে মারা যান ৪৫ জন। ২০১৮ সালে এক হাজার ১৩১টি দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যান ১৩০ জন। ২০১৯ সালে ৯৯৭টি আগুনের ঘটনায় মারা যান ১৩৪ জন। ২০২০ সালে ৭৫৬টি আগুনে ১৫৩ জন মারা যান। তথ্য বলছে, ২০২১ সালেই আগুনের ঘটনায় ১৪২ জন মারা যান। যার বেশিরভাগই শ্রমিক। এর মধ্যে ৫৭ জন পুরুষ ও ৮৫ জন নারী।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, চলতি বছর ২০২২ এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে কারখানায় আগুন লেগে মারা গেছেন ১১৭৫ জন মানুষ। তবে এসব আগুনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কোনো আহত বা নিহত হবার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রানা প্লাজা ধসের পর কারখানাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও বর্তমান তা ঢিলেঢালা
গত এক দশকে তাজরীন ফ্যাশনসের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শিল্প কারখানার বড় দুর্ঘটনা হলো হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানার আগুন। ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনের আগুন এবং পরের বছর রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে নানা উদ্যোগ দেখা গেছে।
এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের পর থেকে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং মৃত্যু অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু একই সময়ে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের বেশিরভাগ ঘটনাই পোশাক খাতের বাইরে শিল্প কারখানায় ঘটছে। এ সময়ে কয়েক বছর নিরাপত্তা উদ্যোগ থাকলেও বর্তমানে তা ঢিলেঢালা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তা ছাড়া, গত বছর এবং চলতি বছরে এ অগ্নিকাণ্ড আবারও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষ মহল।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলে যা হয়
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর মধ্যে মাত্র ৪ টি ঘটনায় মামলা হয়। এর মধ্যে তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত শেষে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হলেও বিচার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আর চকবাজারের চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি ও বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৫২ জন শ্রমিক মারা যায়। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। পরে মালিকসহ ৮জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এ মামলারও তদন্তকাজ আজও শেষ হয়নি। প্রতিটি মামলায়ই বেশিরভাগ আসামিরা জামিনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় ভয়াবহ আগুনে ১১৭ জনের মৃত্যু ও দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন। ওই দুর্ঘটনায় মামলা হলেও আজও বিচার শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহানির পর অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা করার মধ্যেই আইনি প্রক্রিয়া সীমাবদ্ধ রয়েছে। দুই বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি।
বনানী আরএফ টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ২৫ জন ও পরে ১ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এ সময় উদ্ধার অভিযানে আহত উদ্ধারকর্মী ফায়ারম্যান সোহেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত একই বছরের ৩০ মার্চ বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলার ও তদন্ত শেষ হয়নি।
যা বলছেন সচেতন মহল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা
এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এ্যাডভোকেট ফেরদৌস সুলতানা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মামলায় দোষীদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে কারখানাগুলোতে যথাযথ আইন প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই এ ধরনের ঘটনা অনেক কম ঘটবে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতা মোশরেফা মিশু বলেন, অতি লাভের আশায় মালিকপক্ষ অগ্নিনির্বাপন বা সুরক্ষার দিকে তেমন কোনো নজর দেন না। তাদের অবহেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। নানামুখী চাপে দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই।
তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি সেটা না হয় তাহলে শ্রমিকদের জীবনের সুরক্ষার দিকে মালিকরা নজর দেবেন না।’
এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘পরিদর্শন একদমই যে হয় না, সেটা ঠিক নয়। আমাদের সীমাবদ্ধতাও আছে। আমাদেরকে কর্মীদের কিছু ব্যক্তিগত অভিযোগ অ্যাটেইন করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের জনবল ছিল ৩৩৩ জন, এরপরে ৯৩৩ জন হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাইজের সঙ্গে তুলনা করলে শিল্পখাতের উন্নয়ন বা কমার্শিয়াল এন্টারপ্রাইজের ডেভলপমেন্ট আরও দ্রুত হচ্ছে। আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ হাজার ৭৮০ জন জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এ ছাড়া আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করেছি।’
মামলা না হওয়ায় আরও ভয়াবহ হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড
১৯৯৫ সালে ঢাকার ইব্রাহিমপুরের লুসাকা অ্যাপারেলসে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন কর্মী প্রাণ হারান। ১৯৯৬ সালে ঢাকার তাহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন এবং সিনটেক্স লিমিটেডের কারখানায় ১৪ জন পুড়ে মারা যান। ১৯৯৭ সালে মিরপুরের তামান্না গার্মেন্টেসে ২৭ জন এবং মিরপুর-১ নং মাজার রোডের রহমান অ্যান্ড রহমান অ্যাপারেলসে আগুনে ২২ শ্রমিক মারা যান। ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বর নরসিংদীর চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেডে আগুনে ৫৩ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে।
২০০০ সালে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে গ্লোব নিটিং ফ্যাশন লিমিটেডে ১২ শ্রমিক অগ্নিকাণ্ডে মারা যায়। ২০০১ সালে মিরপুরের মিকো সোয়েটার লিমিটেডে আগুনের গুজবে পদদলিত হয়ে ২৪ জন শ্রমিক মারা যান। ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে সান নিটিং গার্মেন্টে আগুনে ২০ জন শ্রমিক মারা যান।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ আগুনে শিশুসহ ১২৫ জন নিহত হয়। এসব ঘটনার একটিতেও মামলা হয়নি। দায়ীরা সবাই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দিনমনি শর্মা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘শিল্প কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।’
প্রতিবছর আগুনে এত মানুষের মৃত্যুতে মালিকদের অবহেলা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো শুধু সেবা দিয়ে থাকি। বিচার করা বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের কাজ নয়। অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা তদন্তকারী সংস্থার কাছে প্রতিবেদন জমা দেই। দোষীদের ব্যবস্থা যারা নেন এ বিষয়টি তারাই বলতে পারবেন। তবে যেকোনো অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত সেবা দিয়ে থাকে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে শিল্প কারখানা স্থাপনে নিয়ম-কানুন আর বিধি-বিধান থাকলেও কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটলেই দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারাখানা মালিকপক্ষ সেটি অমান্য করেছেন। অতি লাভের আশায় মালিকপক্ষের অবহেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। আর সেই সাথে সামনে আসে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অবহেলার বিষয়টিও। নানামুখী চাপে দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই। ফায়ার সেফটি প্রযুক্তি উন্নত করা এবং উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ প্রফেসার মো. আশিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘শিল্প কলকারখানায় যথাযথ মনিটরিং নেই। এবং যথাযথভাবে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামাদি না থাকায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মনিটরিং এর অভাব রয়েছে। বিশেষ করে মনিটরিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলে সেখানে নতুন করে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে শ্রমিকরা অন্তত আগুন ধরলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফ্যাক্টরি বা গার্মেন্টস কারখানা থেকে বের হতে পারে। তা ছাড়া মালিক এবং শ্রমিকরা একটু যদি সতর্ক থাকে তাহলে ধরনের দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোর বেশিরভাগই নজরদারির বাইরে রয়েছে। আর ছোট-বড় আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি প্রতিবেদনও দেয়। তবে সে অনুযায়ী কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যার ফলে বার বার দুর্ঘটনার বলি হন নিরীহ শ্রমিকরা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
কেএম/এমএমএ/