বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

‘ঢাকাই মসলিন’ ফিরছে স্বরূপে

রাজধানীর ফার্মগেট থেকে সুলতানা কামাল সেতুর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সেতু থেকে নেমে বাম দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ধরে প্রায় ৩০০ গজ সামনে এগোলেই দেখা মিলবে বিজেএমসি’র বন্ধ জুটো ফাইবার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের। এখন যেটি নাম পরিবর্তন করে রূপ নিয়েছে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’-এ।

একেবারে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে বিজেএমসি’র ২ দশমিক ৮৫৪৬ একর জমির উপর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনের এই কারখানা। যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

যেভাবে ঢাকাই মসলিনকে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী প্রায় নিয়মিতই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যেতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। ওই দিন তিনি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন।

এরপর মসলিন পুনরুদ্ধারে ২০১৮ সালে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর শুরু হয় ঢাকাই মসলিন তৈরির প্রযুক্তি পুনুরুদ্ধারের তোড়জোড়। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহবায়ক করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বিটিএমসি, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় বিশেষজ্ঞ কমিটি।

এর পরপরই সারাদেশে ‘ফুটি কার্পাস’ জাতের তুলার অনুসন্ধান শুরু করে গবেষক দল। গাজীপুরের কাপাসিয়া, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বাগেরহাট সদর, লালমনিরহাটের মোঘলহাট, নীলফামারীর ডিমলা, রাজশাহী, নওগাঁর মান্দা এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর জার্মপ্লাজম সেন্টারে ‘ফুটি কার্পাস’ জাতের তুলার সন্ধান চালিয়ে এসব স্থান থেকে প্রয়োজনীয় ৩৯টি নমুনা তুলা ও জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে চাষাবাদ করা হয়। এই ৩৯টি নমুনা থেকে ৬টি জাত সনাক্ত করা হয়।

এরপর বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের চেষ্টায় বিভিন্ন উৎস হতে চারটি মসলিন কাপড়ের সংগৃহিত নমুনা সুতা এবং ছয়টি জাতের ডিএনএ সিকুয়েন্স বের করা হয়। এরমধ্যে ‘ফুটি কার্পাস’ এর ডিএনএ সিকুয়েন্সের সঙ্গে মসলিন কাপড়ের সুতার ডিএনএ পর্যালোচনা করে মিল পাওয়া যায়।

তারপর সনাক্তকৃত ফুটি কার্পাস জাতের তুলা পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা মাঠ, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের শ্রীপুর খামার এবং বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের নরসিংদীর পলাশে।

চলছে সুতা উৎপাদন

ফুটি কার্পাস জাতের তুলা চাষ করে সেই তুলা থেকে এখন পুরোদমে চলছে সুতা তৈরির কাজ। শীতলক্ষ্যার পাড়ে বিজেএমসি’র যে জমিতে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে ছায়াঘেরা নিবিড় পরিবেশে নারী শ্রমিকরা একমনে সুতা তৈরি করছেন।

কঠিন এবং কঠোর পরিশ্রমের এই কাজ করতে ৩০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই নারীদের একটা অংশকে সংগ্রহ করা হয়েছে কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলা থেকে। আর কিছু স্থানীয় রূপগঞ্জ, তারাবো, নারায়ণগঞ্জ এলাকার।

এসব প্রশিক্ষিত নারীরা মসলিন হাউসের বিশাল শেডের নিচে একটি কক্ষে বিশেষ এক ধরনের চরকা দিয়ে হাতের সাহায্যে মসলিনের সুতা তৈরি করছেন। এজন্য তাদের গভীর মনোযোগ দিতে হয়। একটু অন্যমনস্ক হলেই ছেদ পড়ে সুতা তৈরির কাজে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে তাদের এই সুতা তৈরির কাজ।

মসলিন শাড়ি তৈরি হচ্ছে যেভাবে

‘ঢাকাই মসলিন হাউস’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও, এমনকি মসলিন হাউসের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের বিল না পেলেও ইতিমধ্যে মসলিন শাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে পূর্ণ উদ্যোমে।

গত ২ মার্চ শীতলক্ষ্যা তীরের তারবোতে বিজেএমসি’র জমিতে গড়ে উঠা ঢাকাই মসলিন হাউস সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ‘মলমল খাস স্পিনিং ও উইনিং শেড’-এর ভেতর একটা বড় অংশ জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ২০টি তাঁত। এর মধ্যে ১১টি তাঁত ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে। একটি তাঁতে একসঙ্গে দুজন তাঁতি কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ একটি মসলিন শাড়ি তৈরি করতে দুজন তাঁতি লাগে।

সরেজমিন দেখা গেল, ১১টি তাঁতে একাগ্র চিত্তে শাড়ি তৈরি করছেন ২২ জন তাঁতি। তাদের মধ্যে দুজন নারী।

মসলিনের কারিগররা যা বললেন

একেকটি তাঁতে দুজন করে বসে নিবিড় মনে শাড়ি বুনছেন মসলিনের কারিগররা। অদ্ভুত সুন্দর সব নকশি দেওয়া শাড়ি বুনছেন আপন মনে। মাথার উপর সুতার রোল। শাড়িতে এক পেছ সুতা বুননের সঙ্গে সঙ্গে রোল ঘুরে নেমে আসে আরেক হাত সুতা। খুবই সতর্কতার সঙ্গে সেই সুতা বুনতে হয়। ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে সব সময়।

মফিজুল ইসলাম। বাড়ি সোনারগাঁও। শাড়ি বুনেই পার করে দিয়েছেন ২৪ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি বেশ কিছু মসলিন শাড়ি তৈরি করেছেন। নিজের তাঁত ছিল। পাশাপাশি অসংখ্য জামদানি শাড়ি বুনেছেন। এখন তিনি আবার মসলিন শাড়ি বুননের কাজ করছেন। তাঁত বোর্ডের মসলিন হাউসে তিনি শাড়ি তৈরির একজন কারিগর হিসেবে চাকরি করছেন।

মফিজুল জানালেন, আগে অনেক মসলিন কাপড় তৈরি করে বিক্রি করেছেন। এরপর সুতাসহ অন্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মসলিন তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ায় তিনি মসলিন তৈরির কাজ বাদ দিয়ে দেন; কিন্তু গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে তিনি আবারও সরকারি প্রতিষ্ঠানে মসলিন শাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন।

মফিজুল জানালেন, নিজের তাঁতে কাজ করার সময় গত দুই যুগে তিনি অন্তত ৮০টি মসলিন শাড়ি তৈরি করেছেন। বেশি নকশা না হলে বছরে অন্তত তিনটা শাড়ি তৈরি করা যায়। বললেন, নিজের তাঁতে কাজ করলেও বেশিরভাগ সময়ই ফরমায়েশি কাজ করেছেন। অনেকে অর্ডার করে শাড়ি তৈরি করাতেন। এতে তার খুব বেশি লাভ হত না। এতে থার্ড পার্টির লাভই বেশি হত। তিনি শুধু শ্রমের মূল্য পেতেন। তিনি আরও জানান, তিনি যখন নিজের তাঁতে মসলিন শাড়ি বুনতেন সেই সময় একেকটা শাড়ি ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি হত।

মফিজুল এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানে মসলিনের একজন কারিগর হিসেবে যোগ দিয়েছেন। গত নভেম্বর থেকে মসলিনের জন্য তৈরি কারখানায় মসলিন শাড়ি বুনার কাজ করছেন। এর আগেও নিজের বাড়িতে বসে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের হয়ে মসলিন শাড়ি তৈরির কাজ করেছেন।

মসলিন বুনার পাশাপাশি নিজের কষ্টের কথা জানাতেও ভুললেন না মফিজুল। বললেন, ‘একটা শাড়ি বুনতে যে কষ্ট হয়, সেই তুলনায় যে বেতন পাই সেটা দিয়ে সংসার চলে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়ার খরচ চালাতে পারি না।’

একেবারে প্রথম তাঁতে আপন মনে শাড়ি বুনছেন আছিয়া বেগম ও সালমা বেগম। আছিয়া বলছিলেন, তিনি একেবারেই নতুন। চার মাস ধরে কাজ করছেন। এর আগে মসলিন কাপড় বুনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

বললেন, দুই বছর ধরে মসলিনের কাপড় তৈরির কাজ করছেন। আর এখানে কাজ করছেন চার মাস ধরে। চার মাসে মাত্র পাঁচ হাত শাড়ি বুনছেন। বাকি সাত হাত বুনতে আরও চার থেকে পাঁচ মাস লাগবে। অর্থাৎ পুরো শাড়িটি তৈরি করতে তাদের দুই জনের সময় লাগবে আট থেকে নয় মাস।

আছিয়া জানালেন, হালকা নকশি বা কম নকশির শাড়ি হলে বছরে দু্ই থেকে তিনটা শাড়ি তৈরি করা যায়। আর যদি গর্জিয়াস বা জাঁকজমকপূর্ণ নকশির হয় তাহলে বছরে একটা শাড়ি তৈরি করা যায়। তাও অনেক কষ্ট হয়।

আছিয়া বলেন, সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত কাজ করেন। মাসিক বেতনে চাকরি করেন। আগে বাড়িতে নিজের তাঁতেই কাজ করতেন। তখন জামদানি শাড়ির পাশাপাশি মসলিনের শাড়ি, ওড়না ও রুমাল তৈরি করতেন।

মসলিন যাবে বর্হিবিশ্বে

ঢাকাই মসলিনকে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে তার রং গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে। আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগে এই ‘ঢাকাই মসলিন’ ছিল বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য ও বিশ্ববিখ্যাত ব্রান্ড। হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

মসলিনের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিদেশের বাজারে এর চাহিদা বিবেচনায় রপ্তানি করা হবে। মসলিনের কারিগররা বলছেন, এখন যে মানের মসলিন তৈরি হচ্ছে তাতে একেকটা শাড়ির যে মূল্য পড়বে, সেই হিসেবে দেশের বাজারে এটা খুব একটা বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এটা বিক্রি করতে হবে বিদেশের বাজারে।

তাঁতিরা জানান, শাড়ি তৈরি হচ্ছে মূলত বিদেশের বাজারে রপ্তানির জন্য। যার মধ্য দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘ঢাকাই মসলিন’ যাবে বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্র্যান্ড হিসেবে। বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে দেশে দেশে। তাঁতিদের আশা, চলতি বছরেই তাদের হাতে বুনা মসলিন যাবে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের নানান দেশে।

যেমন হতে পারে মসলিনের দাম

‘ঢাকাই মসলিন’ শুধু নামে নয়, দামেও থাকবে আকাশ ছোঁয়া। মসলিন এর কারিগররা যেমনটা জানালেন, এখন যে মানের মসলিন তৈরি হচ্ছে তার একেকটির মূল্য সাত-আট লাখ টাকার কম হবে না। তবে সরকার সেটি কি মূল্যে বিদেশে রপ্তানি করবে সেটা নির্ভর করবে রপ্তানির সময় সরকারের সিদ্ধান্তের উপর।

তাঁতিরা জানান, সাধারণ একটি মসলিন যেগুলো খুব একটা নকশা থাকবে না সেগুলোর দাম কম পড়বে। কিন্তু চোখ ধাঁধানো সব নকশি করা ঢাকাই মসলিন এর দাম হবে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তবে দেশের ভিতরে শুধু সৌখিন ক্রেতারা কিনতে পারবেন।

প্রস্তুত কারখানা, উদ্বোধনের অপেক্ষা

শীতলক্ষ্যার পাড়ে তারাবোতে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ এখন পুরোদমে প্রস্তুত। রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে এই মসলিন হাউসে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ‘মলমল খাস স্পিনিং ও উইনিং শেড’। যেখানে ২০টি তাঁত এবং মহিলাদের সুতা তৈরির একটি কক্ষ। থাকবে মসলিনের একটি আধুনিক প্রদর্শনী কেন্দ্র, বেবি ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ছাড়া মসলিন হাউসে ঢুকতেই প্রধান ফটকে চোখে পড়বে প্রধানমন্ত্রীর একটি ম্যুরাল। সব মিলিয়ে এখন শুধুই অপেক্ষা ঢাকাই মসলিনের উদ্বোধন এবং তার বাজারজাতকরণের।

এসএ/

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান

সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম ও খুন করে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে। যে কোন মূল্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে। এই প্রশ্ন গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে 'আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় জুলাই আগস্ট বিপ্লবে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান এবং ‌র‌্যাবের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর উপহার উপলক্ষ্যে সোনাগাজী সরকারি ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলে যে সময়ক্ষেপণ করছে এবং সংস্কার কাজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে, তা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না সে ব্যাপরে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং ২৪এর জুলাই আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। এখন দেশে যে সংস্কারের আলোচনা চলছে সেই সংস্কার প্রস্তাব বিগত আড়াই বছর পূ্র্বে আমরাই দিয়েছিলাম। স্বৈরাচার আমাদের সংস্কার প্রস্তাব আমলে নেয়নি। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। কারণ বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং শহীদদের স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ হবে।

বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এর বড় কারণ হলো- দেশের জনগণ বিএনপির উপর আস্থা রাখতে চায়। কীভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও ফেনী পৌর বিএনপি'র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভেকেট রুহুল কবির রেজভী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক,জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, আবদুল লতিফ জনি, জালাল আহমদ মজুমদার, মামুনুর রশিদ মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লব, ফেনী জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু, সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঞা, শহীদ ছাত্রদল নেতা কাওছার উদ্দিনের পিতা ফিরোজ আলম, শহীদ মেহাম্মদ মাসুদের কন্যা মুনতাহা বিনতে মাসুদ ও শহীদ জাফর আহমদের কন্যা জাহানারা বেগম প্রমুখ।

এসময় ২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর এবং ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারসহ আহতদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।

Header Ad
Header Ad

মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর বদলগাছীতে মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে স্থানীয় আ'লীগের কর্মিরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কটকবাড়ি এলাকায় তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সিহাব নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য ও একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছী সদর এলাকার রাসেল ও সাথী নামে দুই যুবক-যুবতী গতকাল বিকালে নওগাঁ থেকে মার্কেট করে ফেরার পথে কটকবাড়ী এলাকায় মোটরসাইকেল থামিয়ে নদীর ধারে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্দেহ হলে ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মি প্লাবন,অনিক,আশিক, রাকিব,ইয়াজুলসহ ১০-১৫ জন কর্মি তাদের আটক করে মারধর করে। পরে তাদের নদীর ধারে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রদল কর্মী সিহাব সহ গ্রামবাসি ঐ ছেলে মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মি কয়েকজন অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সিহাব কে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সিহাব কে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।

বদলগাছি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাহিদ রানা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা কর্মি। মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় তার ওপরে হামলা করেছে।’

বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুমন হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের কর্মী সিহাব। ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’

তবে অভিযোগ ওঠা যুবকদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তাদের মধ্যে রিয়াজুল নামের এক অভিভাবক দায়সারা জবাব দেন। তিনি বলেন, ওই দুই যুবক-যুবতী অনৈতিক কার্যকলাপ করার জন্য এসেছিল। তাদের সন্দেহ হলে এলাকার ছেলেরা ধরে বিচার করতে চেয়েছিল। সিহাব এখানে এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একটু হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (৫ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন , ‘ছাত্রদল কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো অভিযোগ হাতে আসেনি। তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ