চিকিৎসক ও নার্স ছাড়া চলছে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুর ক্লিনিকগুলো
সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, অভিজ্ঞ নার্স ও টেকনিশিয়ান বাদে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ক্লিনিক ও প্যাথলজিগুলো । ফলে প্রায় প্রতি মাসেই প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ২৩ এপ্রিল ভাই ভাই ক্লিনিকে হরিণাকুন্ডুর দখলপুর গ্রামের আব্দুর রহিম লিটু (৪৮) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। পরে ভাই ভাই ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেয় সিভিল সার্জন অফিস। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে নামমাত্র তদন্ত হয়। তারপর বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার চলে ডাক্তার ও নার্স ছাড়াই। এ ধরণের আরেকটি ক্লিনিক হচ্ছে হরিণাকুন্ডুর নিউ রেসিডো হাসপাতাল।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জামিনুর রশিদ গত বছরের ২১ এপ্রিল সরেজমিনে তদন্ত করে দেখেন ১০ বেডের ওই হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসক ও ৬ জন নার্স থাকার বিধান থাকলেও ক্লিনিকে কোনও ডাক্তার বা নার্স নেই।
পরিদর্শনের পরদিন ২২ এপ্রিল হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার দপ্তরের ৩০৩ নম্বর স্মারকে বিষয়টি সিভিল সার্জন অফিসকে অবগত করলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন তিনি। এর চার মাস পর গত বছরের ১৬ আগষ্ট নিউ রেসিডো প্রাইভেট হাসপাতালের পক্ষে আক্তারুজ্জামান কুসুম চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিয়ে জবাব দাখিল করেন। জবাবে উল্লেখ করা হয় করোনাকালীন দুর্যোগ ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে চিকিৎসক ও নার্সরা নিউ রেসিডো প্রাইভেট হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে পারেননি। নিউ রেসিডো প্রাইভেট হাসপাতালের এই হাস্যকর জবাব দাখিলের এক বছর পার হয়েছে। ডাক্তার-নার্স ছাড়াই হাসপাতালটি এখনও চলছে। তারপরও ক্লিনিকটি বন্ধ করতে পারেনি ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস।
সূত্র জানায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জামিনুর রশিদ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে একই কর্মস্থলে কর্মরত। তিনি নিজেই এসব মানহীন ক্লিনিকে অপারেশন করে থাকেন। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও জামিনুরের ভয়ে কোনও ডাক্তার মুখ খুলতে সাহস পায় না। অনিয়ম করে পার পেয়ে যান তিনি। তার বদলির দাবি করেছেন উপজেলাবাসী।
এদিকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, একই অপরাধ ও শর্ত ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে হরিণাকুন্ডুর আনোয়ারা ক্লিনিক, আলহেরা ক্লিনিক, জনতা ক্লিনিক ও জনসেবা ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে কাগজ কলমে ডাক্তার-নার্স দেখানো হলেও বাস্তবে সার্বক্ষণিক কোনও ডাক্তার বা নার্স নেই। গত বছরের ডিসেম্বরে সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম তদন্তের পর আনোয়ারা, ভাই ভাই ও আলহেরা ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হলেও তা আবার পুরোদমে চলছে। অভিযোগ উঠেছে, অনলাইনে লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করে চিকিৎসক, অভিজ্ঞ নার্স ও টেকনিশিয়ান বাদেই চলছে হরিণাকুন্ডুর ৬টি ক্লিনিক ও ৬টি ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জামিনুর রশিদ জানান, ক্লিনিকগুলোতে আমরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্স রাখার জন্য চাপ দিয়ে আসছি। কিন্তু ক্লিনিক মালিকরা স্বাস্থ্য বিভাগের কোনও কথাই শোনেন না। যদি কোনও ক্লিনিক বন্ধ করাও হয় তবে রাজনৈতিক চাপে খুলে দিতে হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন হরিণাকুন্ডুর মতো কোনও ক্লিনিকেই সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নেই।
এদিকে অন্য একটি সূত্র জানায়, সরকারি তদন্তের সময় ঝিনাইদহ থেকে ভাড়া করে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান এনে বসিয়ে রাখা হয়। জেলার বেশির ভাগ ক্লিনিকেই একই চিত্র বলে সূত্রটি জানায়।
এসআইএইচ