পলাশ সার কারখানায় চলতি বছরই উৎপাদনের আশা
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা নির্মাণ হচ্ছে নরসিংদীর পলাশে। আর কারখানার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরই উৎপাদনে আসার প্রত্যাশা করছে কর্তৃপক্ষ। উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে চলছে শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
সার কারখানা দুইটিতে প্রতি টন ইউরিয়া উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার, ডাউন টাইম ও রক্ষণাবেক্ষণ পুনরাবৃত্তির হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং কারখানাগুলো অতি পুরাতন হওয়ায় ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পমন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে উক্ত জায়গায় একটি নতুন, আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী সার কারখানা নির্মাণ করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরই প্ররিপ্রেক্ষিতে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই সার কারখানা নির্মাণ হচ্ছে নরসিংদীর পলাশে। যা থেকে দৈনিক উৎপাদন হবে প্রায় ২ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়া। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সার কারখানা হবে এটি। ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কারখানা ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন লাভ করে। কারখানাটি ২০২২ সালে শেষ করার কথা থাকলেও নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি মেয়াদ কালও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কারখানাটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। দেশের একমাত্র পরিবেশবান্ধব কারখানাটি পরিবেশ দুষণকারী কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে ব্যবহার করে দশ ভাগ ইউরিয়া সারের উৎপাদন বৃদ্ধি করার আশা। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে ২০২০ সাল থেকে বিশ্ব বাজারে এক নম্বরে থাকা চায়না ন্যাশনাল ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং কস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিএনসিইসি) কোম্পানি কারখানাটি নির্মাণ করছেন। পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. হু চিয়াংগং সম্প্রতি কারখানাটির নির্মাণকাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, চায়না সেভেন্থ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (সিসি সেভেন) মাধ্যমে এই প্রকল্প নির্মাণের সাফল্য কেবল বাংলাদেশের রাসায়নিক শিল্প ব্যবস্থায় একটি নতুন ধাপ চিহ্নিত করে না এমনকি এই প্রকল্প একটি সম্পূর্ণ আধুনিক, পরিবেশবান্ধব, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সারকারখানা প্ল্যান্ট প্রকল্পে পরিণত হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, এ প্রকল্প থেকে দেশীয় সারের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে দারুণ সাহায্য করবে। বাংলাদেশের শিল্প ব্যবস্থার উন্নতিতে বিরাট অবদান রাখবে। এটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের একটি ফলপ্রসূ প্রকল্প। যা বাংলাদেশের মানুষ ও বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আগ্রহ থাকলে বাংলাদেশে আরও কাজ করতে চায় চীনের সিসি সেভেন নামের এই প্রতিষ্ঠান।
ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানার প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, দেশের একমাত্র পরিবেশবান্ধন সারা কারখানাটি এবছরের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে এর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ মেয়াদ শেষ হওয়ার দু-একমাস আগেই শেষ করা সম্ভব। কারখানাটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিসি সেভেনের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটি খুবই ভালো মানের কাজ করেছে। তারা ভালো মানের উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি আধুনিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্রমবর্ধমান ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সুলভ মূল্যে কৃষকদের নিকট ইউরিয়া সারের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ইউরিয়া সারের আমদানি হ্রাস করে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় করা এবং দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।
এসএন