ভরা মৌসুমেও বাবুরহাটে বেচাকেনা মন্দা!
গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুতাসহ কাপড় তৈরির পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে দেশীয় সব ধরনের কাপড়ের উৎপাদন খরচ। এরফলে বেড়ে গেছে সব ধরনের কাপড়ের দামও। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজারে। ভরা মৌসুমেও বেঁচাকেনা মন্দা দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার বাবুর হাটে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারগুলোতেও।
সম্প্রতি বাবুর হাটে ঘুরে এসে কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর শবে বরাতের পর থেকে পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে নরসিংদীর এই শেখের চর-বাবুরহাট কাপড়ের বাজার।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা চলে বেঁচাকেনা। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, শার্টপিস, প্যান্টপিসসহ গজ কাপড় ক্রয় করতে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন এ হাটে। রোজার ঈদে জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি বেশি বেঁচাকেনার আশায় বসে থাকেন বিক্রেতারা।
চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়া যায় এই হাটে। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতাদেরও আগ্রহ বেশি এ হাটের দিকে। দেশের নানা প্রান্তের পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে এই সময় সরগরম থাকে বাজারটি। এ বছরের দৃশ্য অনেকটা কোলাহলমুক্ত ঢিলেঢালা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশীয় সব ধরনের কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের কাপড়ের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষকে নিত্যপণ্য কিনতে হিসেব করতে হচ্ছে। এ কারণে ঈদ ঘিরে কাপড়ের ক্রেতা এবার খুবই কম।
ফেনী থেকে আসা কাপড় বিক্রেতা আসাদুল হক জানান, সব ধরনের কাপড়ের দাম বাড়তি, নিত্যপণ্যের দাম বাড়তিসহ অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে বেচাকেনা কমে গেছে। ঈদের বেচাকেনার যে আশা থাকে এবছর সেটা ভিন্ন।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, খুচরা বাজারে কাপড়ের বেচাকেনা কম হওয়ার প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারগুলোতেও। দাম বাড়ায় পাইকারি ও খুচরা কাপড় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে কয়েকগুন বেশি।
বাবুরহাটের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, প্রতি গজ কাপড়ে দশ থেকে বিশ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। লুঙ্গি, শাড়ি ও থ্রি-পিসে এবার একশো থেকে দেড়শো টাকা বেড়েছে। কাপড়ের দাম বাড়ার কারণে কাপড় বিক্রিও কম হচ্ছে।
শায়লা থ্রিপিচের মালিক আলামিন জানান, নিত্যপণ্যের সঙ্গে বেড়েছে কাপড়ের দামও। সব মিলিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখন কমেছে। খুচরা বাজারে বেচাকেনা হলেই পাইকারি বেচাকেনা ভালো হয়।
কাপড় বিক্রেতারা জানান, বাজারটিতে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার কাপড়ের দোকান রয়েছে। এ ছাড়া দেশীয় কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে এই হাটে। আসন্ন ঈদুল ফিতর ঘিরে বেচাকেনার আশায় এসব দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, থান কাপড়, বিছানার চাদর, শার্টপিস, প্যান্টপিস, পাঞ্জাবির কাপড়সহ দেশীয় প্রায় সব ধরনের কাপড় নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আশানুরূপ বেঁচাকেনা না হওয়ায় বিক্রেতারা অনেকটা হতাশ।
হবিগঞ্জ থেকে আসা কাপড়ের পাইকারি ক্রেতা সফিক মিয়া জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবছর খুচরা বাজারে কাপড়ের বেচাকেনা এখন পর্যন্ত খুবই কম। ঈদের আগ মুহূর্তে বেচাকেনা বাড়তে পারে।
কাপড় ব্যবসায়ী এমদাদুল জানান, এক হিসেবে বেচাকেনা প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই। কিন্তু বেচাকেনা অনেক কমেছে। আগের তুলনায় পাইকারি ক্রেতারা বিশ থেকে ত্রিশ ভাগ কম কাপড় কিনছেন। এখন ব্যবসায় অর্থ বেশি লাগছে, কিন্তু লাভ কম হচ্ছে।
শেখের চর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জানান, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ কাপড়ের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে শেখেরচর-বাবুরহাট। রং, সুতা, তুলাসহ কাপড় উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেলেও সে তুলনায় কাপড়ের দাম খুব বেশি বাড়েনি। তবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওায় সাধারণ মানুষের খরচের হিসাবে টান পড়েছে।
তিনি আরও জানান, আগে যে পাইকারি ক্রেতা ১০ হাজার পিস কাপড় কিনতেন, তিনি এখন ৬ হাজার পিস কাপড় কিনেন। সাধারণত প্রতি হাটে ২০০ থেকে আড়াইশ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়। ঈদের বাজারে তা বেড়ে তিনশ থেকে চারশত কোটি টাকায় দাঁড়ায়। কিন্তু এবার বেঁচাকেনা কেমন হবে, তা আল্লাহ জানেন।
এএজেড