বরগুনায় শহর রক্ষা বাঁধের সড়কে ফাটল, বাড়ছে আতঙ্ক
বিষখালী নদীর ভাঙনে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতাগী পৌর শহরের শহর রক্ষা বাঁধের প্রধান সড়কটিতে বড় আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে তাদের সময় পার করছেন। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় বার্তা রীতিমতো এই উপজেলাবাসীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
বেতাগী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেতাগী পৌর শহর। পৌরবাসীকে ঝড়-জলোচ্ছাস থেকে এই বাঁধটি রক্ষা করে আসলেও ভাঙনরোধ প্রকল্পের ধীর গতির কারণে এবং বর্ষার আগে কাজ শুরু না হওয়ায় নতুন করে লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের উপর নির্মিত পাকা সড়কের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে সড়ক দেবে যাওয়া অংশসহ দুই পাশের স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা রক্ষাতেই এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এর ফলে নদীর তীরবর্তী বসবাসরত বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। ভাঙন যেভাবে ধেয়ে আসছে তাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম সংকট দেখা দিবে এবং ভাঙন আরও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইতিপূর্বে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লঞ্চঘাট, বন্দর, ছোট ছোট কারখানা, শত শত ঘরবাড়ি ও দোকানপাটসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধ, ধান ক্ষেত। নতুন করে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নবনির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লঞ্চ ঘাটের যাত্রী ছাউনি, শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী কালি মন্দির, বেড়িবাঁধ ও শহরের বাকি এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক একটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই প্রকল্পের দৃশ্যমান যেটুকু রয়েছে তা শুধু ভিত্তি প্রস্তর ফলক। যা এখন ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হতে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এর আগে গত বছরের ২২ ফ্রেরুয়ারি ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুষ্ঠিত ১১তম সভায় বেতাগী শহর রক্ষাসহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষাকল্পে ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্ধ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্ত দিন দিন নদীর ভাঙন তীব্র হলেও অদ্যাবধি ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ শুরু করেনি।
বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি আমরা। বাপ দাদার চিহ্ন বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?’
আবদূর রব নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম চলছে। জানি না আমাদের কপালে এবার কি আছে। বিষখালী এখনই যেভাবে ভাঙছে বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসলে কি অবস্থা হবে ভেবেই বুক কাঁপছে।’
স্থানীয় ওয়াকশর্প মালিক সোহেল হাওলাদার বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে আমার দোকান এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। বর্তমানে পাকা সড়কের ফাটল প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে আসায় নদীগর্ভে বিলীন হতে তা আর সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
করাত কল মালিক আবদুল হালিম বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম যত এগিয়ে আসছে, ভাঙন আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করবে। যা এভাবে অব্যাহত থাকলে ভাঙনের কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়তে হবে। স্থানীয়দের বিকল্প অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে। বহুদিন ধরে শুধুই শুনে আসছি কাজ শুরু হচ্ছে। কিন্ত কোনো অগ্রগতি দেখছি না।
বেতাগী পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন, নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি আটকে ছিল। তবে আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, সরেজমিনে সেখানে গিয়ে শহর রক্ষা বাঁধের সড়কের ভাঙনের অবস্থা পর্যক্ষেণ ও পরিদর্শন করেছি। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জরুরি মেরামতের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ