নরসিংদীতে বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের উদ্যোক্তা কর্তৃক ইউনিয়নের বয়স্ক ভাতার বই নিজের হাতে রেখে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্তমান সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বয়স্ক ভাতা একটি বিশেষ উদ্যোগ। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ, দুস্থ ও স্বল্প আয়ের অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে, পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছর থেকে ‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি চালু করে বর্তমান সরকার। আর এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকায় উন্নীত করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই কর্মসূচির আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির অর্থ নগদ, বিকাশ এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় বয়স্ক ভাতার টাকা এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করে থাকে। আর এই সুযোগে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা (ইউডিসি) খালেদা আক্তার এনআরবিসি ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ভাতা বিতরণের দায়িত্ব পায়। দায়িত্ব পাওয়ার পর ইউনিয়নের বিভিন্ন ভাতাভোগী মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা খালেদা আক্তার। পরে ভাতাভোগীদের বই সরবরাহ না করে নিজেরে হাতে বই রেখে নিজেই অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠে। এক পর্যায়ে বার ইউনিয়নের ১৫২ জনের বয়স্ক ভাতা থেকে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে আত্মসাতের ঘটনায় খালেদার মুখোশ উন্মোচিত হয়।
এনআরবিসি ব্যাংক ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়, ১৫২ জন বয়স্ক ভাতাভোগীর সবগুলো বই নিজের হাতে রেখে প্রতি মাসে জনপ্রতি ৫০০ টাকা হিসেবে ১৫ মাসের সাড়ে সাত হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন উদ্যোক্তা খালেদা আক্তার। পরে ভাতাভোগীদের জানানো হয় ৬ হাজার টাকা আসছে। আর সেই মতো বইয়েও লেখা হয়। এ ছাড়াও জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে রেখে দিয়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়। তবে ভাতাভোগীরা এনআরবিসি ব্যাংকে গিয়েও জানতে পারেন তাদের নামে সাড়ে সাত হাজার করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ইউনিয়নজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে কিছু ইউপি সদস্যের সহায়তায় উদ্যোক্তা খালেদা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেস্টা করছে। এ অবস্থায় উদ্যোক্তা কর্তৃক আত্মসাৎ হওয়া অর্থ ফেরতসহ তার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে দুলালপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) উদ্যোক্তা খালেদা আক্তার বলেন, ব্যাংক থেকে যা টাকা দেওয়া হয়েছে তাই বইয়ে উঠেছে। আর বই প্রতি যে টাকা রাখা হয়েছে তা ভাতাভোগীদের বলেই রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে বইয়ে ভুল রয়েছে তাই আমার কাছে বই রয়েছে।
এ বিষয়ে দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুর রহমান শামীম বলেন, এ বিষয়ে কোনো ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেনি। এক ইউপি সদস্যের কাছে শুনে তা মিমাংসা করার জন্য উদ্যোক্তাকে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিবপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্যতম বিশেষ উদ্যোগে এটি। এ বিষয়ে কোনো প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় নিলে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের মহতি উদ্যোগকে যারা বাধাগ্রস্ত করবে এমন ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় এনে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল করার পাশাপাশি আত্মসাৎ হওয়া অর্থ ফেরত পাবেন, এমনটাই আশা ভুক্তভোগীদের।
এসআইএইচ