সমালোচনার মুখে সেই শিক্ষক
চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রশ্ন তৈরি করে সমালোচনা মুখে পড়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। তিনি এই বিতর্কিত প্রশ্নপত্রটি প্রণয়ন করেন বলে বোর্ড সূত্রে জানা যায়।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বিষয়টি জানাজানি হলে গা ঢাকা দেন প্রশান্ত কুমার পাল। তিনি ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাজরা খানা গ্রামের মৃত দুলাল চন্দ্রপালের ছেলে।
ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বলায় চন্দ্র পাল জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ভাইরাল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর তিনি বিষয়টি জানতে পারেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে শিক্ষক প্রশান্ত কুমার পাল সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রশ্ন তৈরির জন্য ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে ফোন করেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, ঢাকা বোর্ডে তিনি একটি সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন। সেটি মনোনীত হয়ে প্রশ্নের ১১নং ক্রমিকে স্থান পেয়েছে। তার করা প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক ও সাম্প্রদায়িক উসকানি তৈরি হওয়ায় তিনি মর্মাহত। এরপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ। এমনকি তাকে বাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এখন শিক্ষা বোর্ড বা মন্ত্রণালয় যে শাস্তির নির্দেশনা দেবে, সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল প্রশ্নের ১১নং এ নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে অনুচ্ছেদে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপক ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়। অভিযোগ উঠেছে, ওই প্রশ্নে ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে যে প্রশ্ন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সে প্রশ্নটি হলো- ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন। (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব। ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।”
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু তা না করে এখানে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়নের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত এই প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। বিষয়টি জানতে ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক প্রশান্ত কুমারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব বলেন, এ জাতীয় প্রশ্ন যারা করেছেন তারা জঘন্য কাজ করেছেন। এতে কারও দ্বিমত থাকার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, প্রশান্ত কুমার একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। তার ২২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া তার লেখা বেশ কিছু বইও আছে। সে কারণে তিনি হয়তো জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব আরও বলেন, যে মডারেটর প্রশ্ন করেন, সেই প্রশ্ন আমাদের দেখার কোনো সুযোগ নেই। কোনো ভুল ভ্রান্তি থাকলে তারাই আবার সংশোধন করে সিলগালাসহ বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেন। ফলে দায়ভার বোর্ডের নয়।
এসজি