সীমান্তে উত্তেজনা: ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা
ফাইল ছবি
মিয়ানমারে উত্তেজনার কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত থেকে স্থানীয় ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার সদস্যকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে ঝুঁকি বিবেচনা ও তুমব্রুবাসীর মতামতের পরই তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার পর ঘুমধুম থেকে সরিয়ে নেওয়া কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম।
পরে তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে যান ডিসি ও এসপি। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের কোথায় সরিয়ে নেওয়া হবে সেজন্য কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন তারা। এরপর ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা।
জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন বলেন, পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। গেল কয়েকদিনের গোলাবর্ষণের পর থেকে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতের পর কখন তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে সেটার সিদ্ধান্ত হবে।
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে যেন বাংলাদেশের নাগরিকরা হতাহতের শিকার না হয়, সেদিকেই বেশি জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত নিতে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, আপাতত বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা শুধু আমাদের জনগণকে নিয়ে ভাবছি। তারাও মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের বিষয় আন্তর্জাতিক মহল ভাববে।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কী চলছে, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এখন আমাদের কাজ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দেওয়া। আমরা জনগণকে নিয়ে ভাবছি। সবগুলো পয়েন্টে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ তৎপর রয়েছে। ৪০ জন পুলিশ নিয়মিত এলাকায় টহল জোরদার রেখেছেন। পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও বজায় রেখেছে।
বাসিন্দারের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দাকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তাদের সরানো হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে। তিনি (ডিসি) আপাতত সতর্ক ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের মতামত নিতে বলেছেন।
গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে সীমান্ত শূন্যরেখায় এক রোহিঙ্গা যুবক নিহতের পর সোমবার সকালেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে দফায় দফায় বিকট গোলার শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, ভোর ৫টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৯ বার ভারী গোলার শব্দ শোনা গেছে। স্কুল শিক্ষার্থী, শিশুরা ভয় পাচ্ছে বেশি। মাসখানেক ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে। বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে।
গত ২৮ আগস্ট তুমব্রু উত্তরপাড়ায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা যায়।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
সবশেষ শুক্রবার রাতে তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হয় রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন। একই দিন দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫নং পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন বাংলাদেশি এক যুবক।
এসজি