বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

আইনে পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব

মানবজাতির পৃথিবীতে আগমনের মাধ্যম হলো তার পিতামাতা। তাই মানুষের জীবনে পিতামাতার মর্যাদা ও অধিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে একজন মানব সন্তানকে পিতামাতা সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেন। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনায় পিতামাতা তিলে তিলে নিজেদের জীবন ও সামর্থ্যকে বিসর্জন করে এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হন। কর্মক্ষম শরীর নিশ্চল হয়ে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে থাকেন সন্তানের উপর।

তাই সন্তান কর্মক্ষম ও সামর্থ্যবান হওয়ার পর থেকেই পিতামাতার সার্বিক ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করার দায়িত্ব সন্তানদের উপর বর্তায়। নৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পিতামাতার অজান্তে সন্তানের ক্ষতি হলেও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।

সন্তানের কাছ থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সদাচরণ পাওয়া পিতামাতার নৈতিক ও আইনগত অধিকার। বিশেষভাবে তারা যখন বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হন এবং কর্মক্ষম থাকেন না, তখন তারা ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন পাওয়ার জন্য সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। সন্তানের কর্তব্য, তার পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা, অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তাদের সঙ্গ দেওয়া এবং তাদের মনে কষ্ট পাবার মতো কোনো ব্যবহার না করা।

বর্তমান সমাজে পিতামাতার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার যথেষ্ট চিত্র রয়েছে। অনেক সন্তানের সক্ষমতা থাকার পরেও তারা আদর্শ শিক্ষা বা সদিচ্ছার অভাবে পিতামাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পিতামাতার ব্যয়ভার বহন না করে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে বা রাস্তায়, রেলওয়ে বা বাস স্টেশনে ফেলে যাওয়ার অনেক ঘটনা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে, যা চরম অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এমন পরিস্থিতি অনুধাবন করে নৈতিক ও মানবিকবোধ থেকে বাংলাদেশ সরকার সন্তান কর্তৃক পিতামাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩ সালে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়ন করে।

এ আইন তৈরির পূর্বে পিতামাতার দেখোশোনা করা সামাজিক স্বীকৃত রীতি ছিল। সামাজিক বাস্তবতার কারণে প্রবীণ পিতামাতার পরিস্থিতি অমানবিক হওয়ায় সন্তানের দায়-দায়িত্বকে আইনী বাধ্যবাধকতায় আনতে হয়েছে। মানুষ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন হলে আইনের বাস্তবায়ন সামাজিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হবে। এ ছাড়া ইসলাম ধর্মে ও অপরাপর অন্যান্য সব ধর্মে পিতামাতার সার্বিক সেবা-যত্নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। পিতামাতার প্রতি সদাচরণের বিষয়টিতে অন্যান্য ধর্মেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সব ধর্মে পিতামাতার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সন্তানদের উপর তাদের অধিকারের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে পিতামাতার প্রতি কর্তব্য

সব ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু সন্তানদের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসার মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও পিতামাতা সন্তানদের সুখী দেখতে চান। এ কারণে পৃথিবীর সব ধর্মে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বাধ্যকরী নির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামসহ অন্যান্য সব ধর্মেই সৃষ্টিকর্তার পরেই পিতামাতার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদাতের পরই পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের প্রতি পবিত্র কোরআনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্-তে পিতামাতার মর্যাদা ও সদাচরণের বিষয়ে সব সময় গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

পিতামাতার প্রতি আচরণ ও ব্যবহার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
‘তোমার রব ফয়সালা করে দিয়েছেন তোমরা তাঁর ইবাদত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদত করো না, পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদের ‘উহ্’ পর্যন্তও বলো না এবং তাদের ধমকের সুরে জবাব দিও না বরং তাদের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা (দয়া, মায়া, মমতাসহকারে) শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন (আল-কোরআন, ১৭: ২৩-২৪)।

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং ভূমিষ্ঠের পর তার দুধ ছাড়ানোর দুই বছর পর্যন্ত। আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। পিতামাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরিক স্থাপন করতে পীড়াপীড়ি করে, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করব (আল-কোরআন, ৩৯: ১৪-১৫)।

এতো সব আমলের মধ্যে পিতামাতার প্রতি সদাচরণকে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল বলে ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে সন্তানদের অবশ্যই পিতামাতার সাথে নম্রভাবে কথা বলতে হবে, পিতামাতার আদেশ নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। পিতামাতার সাথে কোমল ব্যবহার এবং নম্র ভাষায় বিনয়ী হয়ে কথা বলার নির্দেশ দেওয়ার কারণ হলো, বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে তারা অনেক সময় স্বাভাবিক আচরণ নাও করতে পারেন। তখন তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে বা কোনো বিষয়ে অধৈর্য হয়ে পড়তে পারেন। সেই অবস্থায়ও সন্তানদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং কোমল ভাষায় কথা বলতে হবে। কেননা, বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছ থেকে ভরণপোষণ ও সেবা-যত্ন পাওয়া পিতামাতার আইনগত ও ধর্মীয় অধিকার।

এ ছাড়া পিতামাতার সেবা-যত্নের গুরুত্ব বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আপনার রব নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে’।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেন, যথাসময়ে নামাজ পড়া। আমি বললাম, তারপর কোন কাজ? তিনি বলেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, হাদিস নং ২৭৮২; মুসলিম: ৮৫)।

ইসলামে এভাবে প্রবীণদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। প্রবীণদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে আল-কুরআন ও হাদীসে সুবিস্তৃত নির্দেশনা রয়েছে, যাতে জীবনের এ ক্রান্তিকালে প্রবীণদের অবহেলার শিকার হতে না হয়। সমাজের বয়স্ক প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে বয়সে ছোটদের সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে সমাজে প্রবীণদের মধ্যে কল্যাণ ও বরকত সুরক্ষিত। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবীণদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘প্রবীণদের সঙ্গেই রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ ও বরকত’।

সনাতন ধর্মে পিতামাতার ভক্তির ওপর জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে- ‘দশজন উপধ্যায় থেকে একজন আচার্য উত্তম, শত আচার্যের চেয়েও পিতা উত্তম এবং হাজার পিতার চেয়ে মাতা সম্মানিত।’ তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে নিজের পিতামাতার প্রতি যথাযথ সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করা।

বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী পিতামাতার সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি স্বর্গে যেতে পারে না। পিতামাতার সাথে অশোভনীয় আচরণ করলে পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি পারলৌকিক জীবনেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। খ্রিস্টান, ইহুদি, জৈন, শিখ, কনফুসীয়ানসহ অন্যান্য ধর্মে পিতামাতার আইনী অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে নানা দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আইনে পিতামাতার ভরণপোষণ

বাংলাদেশে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য একটি আইনী কাঠামোতে আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে গৃহীত পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে দায়িত্ব লঙ্ঘনের অপরাধে দণ্ডিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রণীত এটিই প্রথম আইন। সাধারণ মানুষের মধ্যে পিতামাতার ভরণপোষণের প্রতি অবহেলা ও অসচেতনতা দূর করতে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এশিয়ায় ভারত ও সিঙ্গাপুরেও পিতামাতার ভরণপোষণের আইন আছে। উভয় দেশেই সন্তানরা পিতামাতার ভরণপোষণ দিতে আইনগতভাবে বাধ্য। তবে পার্থক্য হলো, তাদের আইনে আদালত দেওয়ানী প্রতিকার হিসেবে ভরণপোষণ বাবদ নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের আইনে ভরণপোষণকে যখন অর্থের পরিবর্তে সেবা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে এবং আইনের লংঘনকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ফলে আইনটি বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বৃদ্ধ পিতামাতার সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ ধরনের সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে হবে সামাজিকভাবেই, কঠোর আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। বৃদ্ধ পিতামাতাকে যখন তার সন্তানেরা একাকিত্বে ঠেলে দেন, তখন এর সামাজিক বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে আমাদের দুর্বল সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোরও দায় রয়েছে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর সেই সমস্যাগুলোকে, যা বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতাকে সন্তানের মুখাপেক্ষী করতে বাধ্য করে। যে হারে আমাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে বয়স্কভাতা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। মূলত পিতামাতার প্রতি সদাচরণ যতটা না আইনগত তার চেয়ে বেশি নৈতিক ও ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত। মৌলিক নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়ে পতিত কোনো সমাজে আইনের মাধ্যমে নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য জনসাধারণকে বাধ্য করা সম্ভব নয়। বরং সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অনুশীলন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতার অনুশীলন চর্চা করতে হবে। কারণ, মানুষ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন হলে আইনের বাস্তবায়ন সামাজিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়। শিক্ষা ব্যবস্থা সকল স্তরে বিষয়টি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তকরণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনটি আরও সময়োপযোগী ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ড. নাহিদ ফেরদৌসি: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

আরএ/

Header Ad
Header Ad

সাতক্ষীরায় মদপানে দুই যুবকের মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯

ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় মদপানের ফলে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় আরও ৯ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগে, ঈদের সন্ধ্যায় তারা মদপান করেন এবং রাতের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন আশাশুনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের জাফর আলী খাঁর ছেলে জাকির হোসেন টিটু (৪০) ও সোহরাব গাজীর ছেলে নাজমুল গাজী (২৬)।

এ ঘটনায় অসুস্থদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণ তেতুলিয়া গ্রামের সাইদ সরদারের ছেলে ফারুক হোসেন, মোকামখালী গ্রামের কুদ্দুস সরদারের ছেলে ইমরান, মিত্র তেতুলিয়ার মর্জিনা খাতুনের ছেলে ইকবাল, কামরুলের ছেলে লিফটন, আজিবার সরদারের ছেলে রবিউল, শহীদ গাজীর ছেলে তুহিন, আনিসের ছেলে নাজমুলসহ আরও কয়েকজন।

গুরুতর অসুস্থদের মধ্যে ফারুক হোসেনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইমরানকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের দিন সন্ধ্যায় আশাশুনির তেতুলিয়া শ্মশানঘাট মাঠে বসে জাকির হোসেন টিটু, নাজমুল গাজীসহ মোট ১১ জন একসঙ্গে মদপান করেন। মদপানের পর তারা বাড়ি ফিরে যান এবং ঘুমিয়ে পড়েন।

এরপর রাত ১২টার দিকে একে একে সবাই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাকির হোসেন টিটু ও নাজমুল গাজী মারা যান। বাকি ৯ জনের চিকিৎসা চলছে।

আশাশুনি থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফিরোজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, "অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যু অন্য কোনো কারণে হয়েছে কিনা, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।"

নিহতদের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Header Ad
Header Ad

ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র নেটওয়ার্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইরানের অস্ত্র সংগ্রহ নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়।

এই পদক্ষেপকে ইরানের ওপর আরও চাপ সৃষ্টির একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেছিলেন, নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে রাজি না হলে দেশটির ওপর বোমা হামলা চালানো বা নতুন শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ও বিচার বিভাগ যৌথভাবে জানিয়েছে, ইরানের ড্রোন কর্মসূচির অন্যতম প্রধান নির্মাতার জন্য মানববিহীন এয়ার ভেহিকল (ইউএভি)–এর উপকরণ সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি সংস্থা ও দুই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, "ইরান তাদের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়াসহ তাদের প্রক্সিদের সরবরাহ করছে। রুশ বাহিনী এগুলো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, যা বেসামরিক নাগরিক, মার্কিন বাহিনী ও মিত্রদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা ইরানের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স এবং তাদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রচলিত অস্ত্রের বিস্তার ব্যাহত করতে কাজ চালিয়ে যাব।"

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে একটি ইরান-ভিত্তিক সংস্থা, দুইজন ইরানি নাগরিক, একটি চীন-ভিত্তিক সংস্থা এবং চারটি সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক সংস্থা।

এ বিষয়ে জাতিসংঘে ইরানের মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

Header Ad
Header Ad

বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, "পরাজিত শক্তি নিউইয়র্ক টাইমসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। তারা এই অবৈধ টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করতে চায়।"

বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, "শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনের নামে একটি নাটক সাজিয়ে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করেছেন। এটি মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকার একটি রাজনৈতিক কৌশল ছিল। এমনকি একজন সাবেক আইজিপির বইয়েও এটি উঠে এসেছে।"

তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো উত্থান ঘটেনি। বরং বর্তমানে দেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ছোবল নেই, মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্মপালন করতে পারছে, কথা বলতে পারছে। এবার মানুষ নির্ভয়ে ঈদ উদযাপন করেছে, যা অতীতে সম্ভব হয়নি।"

আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, "আওয়ামী লীগ বসে নেই, তারা কালো টাকা ব্যবহার করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তারা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারাই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।"

তিনি আরও বলেন, "শেখ হাসিনার নির্দেশে মুগ্ধ ফাইয়াজদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু এ নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই। প্রশাসনের চারপাশে আওয়ামী লীগের দোসররা বসে আছে, যার ফলে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।"

রিজভী আহমেদ দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, "নির্বাচনী সরকারই হচ্ছে বৈধ সরকার। নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হবে।"

তিনি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দ্রুত নির্বাচনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সাতক্ষীরায় মদপানে দুই যুবকের মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯
ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র নেটওয়ার্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা: রিজভী
দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ঘটনা ঘটেনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আখাউড়ায় ট্রেনের ছাদে টিকটক বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনা, নিহত ২
বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ভারতের ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের
বিএনপি কখনোই নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলেনি: মির্জা ফখরুল
বিরামপুরে জমি নিয়ে বিরোধ, চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনায় আটক ৫
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ভ্যাল কিলমার আর নেই
ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২