রবিবার, ১২ মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আইনে পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব

মানবজাতির পৃথিবীতে আগমনের মাধ্যম হলো তার পিতামাতা। তাই মানুষের জীবনে পিতামাতার মর্যাদা ও অধিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে একজন মানব সন্তানকে পিতামাতা সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেন। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনায় পিতামাতা তিলে তিলে নিজেদের জীবন ও সামর্থ্যকে বিসর্জন করে এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হন। কর্মক্ষম শরীর নিশ্চল হয়ে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে থাকেন সন্তানের উপর।

তাই সন্তান কর্মক্ষম ও সামর্থ্যবান হওয়ার পর থেকেই পিতামাতার সার্বিক ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করার দায়িত্ব সন্তানদের উপর বর্তায়। নৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পিতামাতার অজান্তে সন্তানের ক্ষতি হলেও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।

সন্তানের কাছ থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সদাচরণ পাওয়া পিতামাতার নৈতিক ও আইনগত অধিকার। বিশেষভাবে তারা যখন বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হন এবং কর্মক্ষম থাকেন না, তখন তারা ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন পাওয়ার জন্য সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। সন্তানের কর্তব্য, তার পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা, অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তাদের সঙ্গ দেওয়া এবং তাদের মনে কষ্ট পাবার মতো কোনো ব্যবহার না করা।

বর্তমান সমাজে পিতামাতার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার যথেষ্ট চিত্র রয়েছে। অনেক সন্তানের সক্ষমতা থাকার পরেও তারা আদর্শ শিক্ষা বা সদিচ্ছার অভাবে পিতামাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পিতামাতার ব্যয়ভার বহন না করে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে বা রাস্তায়, রেলওয়ে বা বাস স্টেশনে ফেলে যাওয়ার অনেক ঘটনা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে, যা চরম অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এমন পরিস্থিতি অনুধাবন করে নৈতিক ও মানবিকবোধ থেকে বাংলাদেশ সরকার সন্তান কর্তৃক পিতামাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩ সালে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়ন করে।

এ আইন তৈরির পূর্বে পিতামাতার দেখোশোনা করা সামাজিক স্বীকৃত রীতি ছিল। সামাজিক বাস্তবতার কারণে প্রবীণ পিতামাতার পরিস্থিতি অমানবিক হওয়ায় সন্তানের দায়-দায়িত্বকে আইনী বাধ্যবাধকতায় আনতে হয়েছে। মানুষ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন হলে আইনের বাস্তবায়ন সামাজিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হবে। এ ছাড়া ইসলাম ধর্মে ও অপরাপর অন্যান্য সব ধর্মে পিতামাতার সার্বিক সেবা-যত্নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। পিতামাতার প্রতি সদাচরণের বিষয়টিতে অন্যান্য ধর্মেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সব ধর্মে পিতামাতার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সন্তানদের উপর তাদের অধিকারের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে পিতামাতার প্রতি কর্তব্য

সব ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু সন্তানদের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসার মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও পিতামাতা সন্তানদের সুখী দেখতে চান। এ কারণে পৃথিবীর সব ধর্মে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বাধ্যকরী নির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামসহ অন্যান্য সব ধর্মেই সৃষ্টিকর্তার পরেই পিতামাতার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদাতের পরই পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের প্রতি পবিত্র কোরআনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্-তে পিতামাতার মর্যাদা ও সদাচরণের বিষয়ে সব সময় গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

পিতামাতার প্রতি আচরণ ও ব্যবহার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
‘তোমার রব ফয়সালা করে দিয়েছেন তোমরা তাঁর ইবাদত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদত করো না, পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদের ‘উহ্’ পর্যন্তও বলো না এবং তাদের ধমকের সুরে জবাব দিও না বরং তাদের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা (দয়া, মায়া, মমতাসহকারে) শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন (আল-কোরআন, ১৭: ২৩-২৪)।

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং ভূমিষ্ঠের পর তার দুধ ছাড়ানোর দুই বছর পর্যন্ত। আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। পিতামাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরিক স্থাপন করতে পীড়াপীড়ি করে, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করব (আল-কোরআন, ৩৯: ১৪-১৫)।

এতো সব আমলের মধ্যে পিতামাতার প্রতি সদাচরণকে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল বলে ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে সন্তানদের অবশ্যই পিতামাতার সাথে নম্রভাবে কথা বলতে হবে, পিতামাতার আদেশ নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। পিতামাতার সাথে কোমল ব্যবহার এবং নম্র ভাষায় বিনয়ী হয়ে কথা বলার নির্দেশ দেওয়ার কারণ হলো, বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে তারা অনেক সময় স্বাভাবিক আচরণ নাও করতে পারেন। তখন তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে বা কোনো বিষয়ে অধৈর্য হয়ে পড়তে পারেন। সেই অবস্থায়ও সন্তানদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং কোমল ভাষায় কথা বলতে হবে। কেননা, বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছ থেকে ভরণপোষণ ও সেবা-যত্ন পাওয়া পিতামাতার আইনগত ও ধর্মীয় অধিকার।

এ ছাড়া পিতামাতার সেবা-যত্নের গুরুত্ব বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আপনার রব নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে’।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেন, যথাসময়ে নামাজ পড়া। আমি বললাম, তারপর কোন কাজ? তিনি বলেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, হাদিস নং ২৭৮২; মুসলিম: ৮৫)।

ইসলামে এভাবে প্রবীণদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। প্রবীণদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে আল-কুরআন ও হাদীসে সুবিস্তৃত নির্দেশনা রয়েছে, যাতে জীবনের এ ক্রান্তিকালে প্রবীণদের অবহেলার শিকার হতে না হয়। সমাজের বয়স্ক প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে বয়সে ছোটদের সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে সমাজে প্রবীণদের মধ্যে কল্যাণ ও বরকত সুরক্ষিত। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবীণদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘প্রবীণদের সঙ্গেই রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ ও বরকত’।

সনাতন ধর্মে পিতামাতার ভক্তির ওপর জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে- ‘দশজন উপধ্যায় থেকে একজন আচার্য উত্তম, শত আচার্যের চেয়েও পিতা উত্তম এবং হাজার পিতার চেয়ে মাতা সম্মানিত।’ তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে নিজের পিতামাতার প্রতি যথাযথ সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করা।

বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী পিতামাতার সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি স্বর্গে যেতে পারে না। পিতামাতার সাথে অশোভনীয় আচরণ করলে পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি পারলৌকিক জীবনেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। খ্রিস্টান, ইহুদি, জৈন, শিখ, কনফুসীয়ানসহ অন্যান্য ধর্মে পিতামাতার আইনী অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে নানা দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আইনে পিতামাতার ভরণপোষণ

বাংলাদেশে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য একটি আইনী কাঠামোতে আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে গৃহীত পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে দায়িত্ব লঙ্ঘনের অপরাধে দণ্ডিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রণীত এটিই প্রথম আইন। সাধারণ মানুষের মধ্যে পিতামাতার ভরণপোষণের প্রতি অবহেলা ও অসচেতনতা দূর করতে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এশিয়ায় ভারত ও সিঙ্গাপুরেও পিতামাতার ভরণপোষণের আইন আছে। উভয় দেশেই সন্তানরা পিতামাতার ভরণপোষণ দিতে আইনগতভাবে বাধ্য। তবে পার্থক্য হলো, তাদের আইনে আদালত দেওয়ানী প্রতিকার হিসেবে ভরণপোষণ বাবদ নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের আইনে ভরণপোষণকে যখন অর্থের পরিবর্তে সেবা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে এবং আইনের লংঘনকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ফলে আইনটি বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বৃদ্ধ পিতামাতার সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ ধরনের সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে হবে সামাজিকভাবেই, কঠোর আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। বৃদ্ধ পিতামাতাকে যখন তার সন্তানেরা একাকিত্বে ঠেলে দেন, তখন এর সামাজিক বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে আমাদের দুর্বল সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোরও দায় রয়েছে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর সেই সমস্যাগুলোকে, যা বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতাকে সন্তানের মুখাপেক্ষী করতে বাধ্য করে। যে হারে আমাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে বয়স্কভাতা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। মূলত পিতামাতার প্রতি সদাচরণ যতটা না আইনগত তার চেয়ে বেশি নৈতিক ও ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত। মৌলিক নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়ে পতিত কোনো সমাজে আইনের মাধ্যমে নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য জনসাধারণকে বাধ্য করা সম্ভব নয়। বরং সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অনুশীলন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতার অনুশীলন চর্চা করতে হবে। কারণ, মানুষ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন হলে আইনের বাস্তবায়ন সামাজিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়। শিক্ষা ব্যবস্থা সকল স্তরে বিষয়টি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তকরণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনটি আরও সময়োপযোগী ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ড. নাহিদ ফেরদৌসি: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

আরএ/

Header Ad

ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে তা জানতে শিক্ষাবোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের সময়ও এই বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করতে বলেছেন।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের তিনি বলেন, যার যার বোর্ডে আপনারা খবর নেন, কী কারণে ছেলেরা পিছিয়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাং দেখছি। এগুলো তো আমরা দেখতে চাই না। সেখান থেকে তাদের বিরত করা, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিবিএসকেও বলবো দেখতে।

রোববার (১২ মে) সকাল সোয়া ১০টার পর গণভবনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পাস করেছে, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। এ জন্য বাবা-মা-অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও অভিনন্দন জানাই।। যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, আমি বলবো, তাতে মন খারাপ করার কিছু নেই। আবার চেষ্টা করলে হয়ত ভালো করতে পারবে। বাবা-মা অভিভাবক যেন এ বিষয়ে গালমন্দ না করেন তাদের। এমনিতেই তো মন খারাপ, তার ওপর অভিভাবকরা রুষ্ট হলে আরও মন খারাপ হবে। কেনো খারাপ ফল করলো, সে কারণ বের করে, তাদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখে পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হতে সুযোগ দেওয়া দরকার।

তিনি বলেন, ফলাফলে দেখলাম, তিন বোর্ডে ছাত্রের সংখ্যা বেশি। কিছু জায়গায় সমান। অধিকাংশ জায়গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। এটা আমাদের জন্য সুখবর। এসএসসি পর্যন্ত নারীদের শিক্ষা আমরা অবৈতনিক করেছি। পরীক্ষায়ও ছাত্রী সংখ্যা বেশি। কেনো ছাত্রের সংখ্যা কম। কী কারণে আমাদের ছাত্ররা কমে যাচ্ছে। পাসের ক্ষেত্রেও মেয়েরা অগ্রগামী। এটা ভালো কথা। কিন্তু ছেলেরা কেনো পিছিয়ে? এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দিনে দিনে শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও কেউ কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তারা শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, এটা আমাদের দায়িত্ব। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা একটা শিক্ষানীতি করেছি, এখন সেটা বাস্তবায়ন করছি। বিনামূল্যে আমরা বই বিতরণ করছি। আজকে ৭৬ শতাংশ বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার, এটা আমাদের অর্জন।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ, ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ ভাগ করার পরিকল্পনা আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যাতে খেলতে খেলতে শিখতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে আমাদের ছেলেমেয়েদের শিখাতে হবে। জাতির পিতা বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হবে। সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ অপরিহার্য।

আজ সোয়া ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা। এতে মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ

ফাইল ছবি

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (১২ মে) ১১টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ বছর ৯টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ।

এর আগে, সকাল ১০টার দিকে বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম রুমানা আলী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুপুর সাড়ে ১২টায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে এর আগেই ফল জানা যাবে। সকাল ১১টা থেকেই এসএসসি পরীক্ষার ফল স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অনলাইনে জানা যাবে। এছাড়া এসএমএস-এর মাধ্যমেও ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১২ মার্চ। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।

৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষায় ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করে।

সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারির কারণে দেশের শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। ২০২০ সালে বিষয় ও নম্বর কমিয়ে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ নম্বরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়।

ফল জানবেন যেভাবে:

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট www.dhakaeducationboard.gov.bd-এ রেজাল্ট কর্নার-এ ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন এন্ট্রি করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।

এ ছাড়া, www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে ক্লিক করে রোল ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা যাবে। সেক্ষেত্রে SSC Board name (প্রথম তিন অক্ষর) Roll Year টাইপ করে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। উদাহরণ: SSC Dha 123456 2024 Send to 16222

দাখিলের ফল পেতে Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2024 লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে।

কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে SSC লিখে স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2024 লিখে 16222 নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে ফলাফল পাওয়া যাবে।

সৌদি আরবে এবার হজযাত্রীদের জন্য থাকছে উড়ন্ত ট্যাক্সি

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের পরিবহণমন্ত্রী সালেহ আল-জাসের জানিয়েছেন, এ বছরই হাজিদের পরিবহণের জন্য উড়ন্ত ট্যাক্সি এবং ড্রোনের ব্যবহার শুরু করবেন তারা। পবিত্র মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলকে স্বাগত জানানোর পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সালেহ আল জাসের এ কথা ঘোষণা করেন।

সৌদি পরিবহনমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অত্যাধুনিক পরিবহনব্যবস্থার আওতায় এবার উড়ন্ত ট্যাক্সির ব্যবহার করবেন তারা।

সামনের বছরগুলোতে হজযাত্রী পরিবহনে এ উড়ন্ত ট্যাক্সি সরবরাহ করার জন্য পরিবহন খাতের কয়েকটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলেও জানান আল জাসের। পরিবহন খাতে এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে বোঝাপড়া ও হজ মৌসুমে এগুলোর ব্যবহারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

পরিবহনমন্ত্রী আল জাসের বলেন, সৌদি আরব এমন আধুনিক পরিবহনসেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্মুখসারির দেশ হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ আধুনিক পরিবহনব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগানো হবে হজ মৌসুমে।

গত বছর হজ মৌসুমে উড়ন্ত ট্যাক্সির পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন মন্ত্রী আল জাসের। জেদ্দায় কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পবিত্র মক্কার হোটেলগুলোর মধ্যে হাজিদের যাতায়াতে ইতিপূর্বে উড়ন্ত ট্যাক্সি পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছিল সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস বা সৌদিয়া। এই সেবা দিতে বিমান পরিবহন সংস্থাটির লক্ষ্য আনুমানিক ১০০টি এমন আকাশযান সংগ্রহ করা। এসব লিলিয়াম আকাশযান পুরোপুরি বিদ্যুৎ-চালিত ও পরিবেশবান্ধব বলে জানান হয়।

সর্বশেষ সংবাদ

ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ
সৌদি আরবে এবার হজযাত্রীদের জন্য থাকছে উড়ন্ত ট্যাক্সি
আজ বিশ্ব মা দিবস
বিয়ের ৪ মাসেই সন্তান প্রসব করেলেন নববধূ
রাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, রাতভর উত্তেজনার পর শান্ত
এসএসসির ফল প্রকাশ আজ, যেভাবে জানবেন
ঈদুল আজহায় সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি মিলবে যে কয়দিন
স্বর্ণের দাম আরও বাড়ল
আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যা, একদিনে দুই শতাধিক মৃত্যু
রংপুর মেডিকেলের আইসিইউ ইউনিটে আগুন
আওয়ামী লীগ নয়, দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি: মির্জা ফখরুল
পতঞ্জলি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভারতের যোগগুরু বাবা রামদেব
রাত ১টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের ‍পূর্বাভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল ঘোষণা আগামীকাল
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন 'অড সিগনেচার'-এর পিয়াল
অর্থনীতি চাঙা করতে গাঁজা চাষ বৈধ করতে যাচ্ছে পাকিস্তান!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে ‘বিসিএস প্রস্তুতি’ বন্ধ হচ্ছে
বিদেশিদের এনআইডি করতে লাগবে না দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ
চুয়াডাঙ্গায় বজ্রাঘাতে প্রাণ গেল ২ কৃষকের