বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ | ১৩ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

রেনু থেকে আমাদের বঙ্গমাতা

রেনু গোলাপ গঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায় ১৯৩০ সনের ৮ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান, মাকে হারান পাঁচ বছর বয়সে। তিনি দাদার আদরে বড় হয়েছেন এবং দাদা তার দুই নাতনিকে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর মাতা ও পিতা বাবা-মা হারা পুত্রবধু রেনুকে তাদের কাছে নিয়ে এনে পরম আদর-যত্নে বড় করতে থাকেন। তাদের স্নেহ-মমতায় রেনুকে পিতা-মাতার অভাব তেমন অনুভব করতে হয়নি। সকলের প্রিয় রেনু বঙ্গবন্ধুর ভাই-বোনদের সঙ্গে একই পরিবারিক আদর্শ বেড়ে উঠেন।

রেনুর শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের ছেলে সম্পর্কে জানতেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ, দেশপ্রেমের বিষয়টি তারা বুঝতেন। তিনি যে একদিন বাংলার কাণ্ডারি হবেন, এতে তাদের কারোরই কোনো সন্দেহ ছিল না। এমন একজন ব্যক্তির জন্য যে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটিও তারা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন। আর সে লক্ষ্য নিয়েই বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতা পুত্রবধূ রেনুকে শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো দেশপ্রেমিক নেতার উপযুক্ত সঙ্গী হিসেবে গড়ে তোলেন। রেনুও তার পরবর্তী জীবনে সে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট বেবী মওদুদ ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনে মাইলস্টোনে ফজিলাতুনেসা রেনু’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী ফজিলাতুন নেসা রেনু শৈশবে বাবা-মা হারালে বঙ্গবন্ধুর মা তাকে পুত্রবধূ করে নিজের কাছে রেখে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন। গ্রামে জন্ম, গ্রামীণ জীবনধারায় লালিত-পালিত হলেও দিনে দিনে রেনু একজন আদর্শ ও মমতাময়ী নারীর প্রতিকৃতি হয়ে ওঠেন। শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা- আস্থা এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি নীরবে নিভৃতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা- ভাবনার অংশীদার হয়ে উঠেছিলেন। পরম প্রিয় ভালোবাসার এই জীবনসঙ্গীকে শেখ মুজিব তার জীবনের সব খুঁটিনাটি কথা শোনাতেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ও স্বপ্নের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে প্রস্তুত করে তোলেন। রেনু ছিলেন অসীম ধৈর্য, উপস্থিত জ্ঞানসম্পন্ন এক প্রেমিময়ী স্ত্রী ও মমতাময়ী জননী। পুত্রবধূ হিসেবে রেনু তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে জীবন চলার এই পাঠকে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে রপ্ত করতে পেরেছিলেন তার স্বভাবাজাত বুদ্ধিমত্তা দ্বারা।

বেবী মওদুদ আরও লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য, জন্মদাতা পিতা-মাতা স্নেহ, যত্ন ও পরিচর্যা যেমন ছিল, তেমনি তাদের পরে তার জীবনসঙ্গী রেনুর ছিল সজাগ দৃষ্টি। তিনি বঙ্গবন্ধুর মিশন ও ভিশনকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করেছিলেন।

বঙ্গমাতা অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। ছোট্ট রেনুর বিয়ে হলে, বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতা রেনুকে আদর-যত্নে বেড়ে ওঠায় সাহায্য করেন এটি যেমন সত্য, তেমনি রেনু তার দাম্পত্য জীবনে স্বামীকে একটানা কাছে পাননি, এটিও সত্য। স্বামীকে কাছে না পাওয়ার ধৈর্যের পরীক্ষায়ও তিনি উর্ত্তীণ হয়েছেন।

কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য বঙ্গমাতা সন্তানদের নিয়ে কারাগারে যেতেন। কারাগারে সাক্ষাতের সময় অতিক্রান্ত হলেও অবুঝ সন্তানরা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চাইত না। বিশেষ করে শেখ রাসেলের বায়না এবং তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসাটা বঙ্গমাতার জন্য যেমন ছিল কষ্টের, তেমনি তারা চলে যাওয়ার পর জেলখানার ছোট্ট একটি কক্ষে রাতযাপন ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য আরো বেদনার। জাতির পিতা এবং বঙ্গমাতা দেশের প্রতি, দেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ করেছেন তার তুলনা তারা নিজেরাই। ইতিহাস খুঁজে দ্বিতীয় পাওয়া যাবে না।

বঙ্গবন্ধু ১৭ বার কারাগারে যান। এই সময়ে দীর্ঘ ৩০৫৩ দিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়। নাসিমা বেগম, ‘রেনু থেকে বঙ্গমাতা’। অথচ বঙ্গমাতা রেনুর জীবনে স্বামীকে কাছে না পাওয়ার যে দীর্ঘ সময় কারাগারে থামতে হয়। আমরা দেখতে পেলাম এবং এটি মেনে নিয়ে আমরণ বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়ার মতো থেকে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। তিনি স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কখনো কোনো বিরোধিতা তো করেইনি; বরং তার অনুপস্থিতিতে সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বামীর খাবার নিয়মিত জেলখানায় পাঠিয়েছেন। কতটা ধৈর্যশীল হলে নিজের চাওয়া-পাওয়া তুচ্ছ করে এ ধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব, তা সহজেই অনুমেয়।

বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সকল কাজের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস দিয়ে, শক্তি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতেন। তিনি কখনোই বঙ্গবন্ধুকে পেছনে টেনে ধরেননি। তার জীবনে শত যন্ত্রণার ভেতরও ভেঙে পড়েননি। আমরা জানি, বঙ্গমাতা রেনু এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবের শৈশব কেটেছে একসঙ্গে। বড় হয়েছেন একই পরিবারে। তাদের স্বভাব ও চরিত্র প্রায় একই। অভিন্ন সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিক গুন, শুভবুদ্ধি ও সামাজিক কল্যাণে উদ্বুুদ্ধ ছিলেন দুজনেই। তারা দুজনেই মানুষকে ভালোবেসে অপরের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সচেষ্টা ছিলেন। মানুয়ের আপদে-বিপদে, রোগে-শোকে তাদের পাশে দাঁড়াতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটির রচনা প্রসঙ্গে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধে আব্বা লিখতে শুরু করেন। তিনি যতবার জেলে গেছেন আমার মা খাতা কিনে জেলে পৌঁছে দিতেন। আবার যখন মুক্তি পেতেন, তখন খাতাগুলি সংগ্রহ করে মা নিজের কাছে সযত্নে রেখে দিতেন। তার এই দূরদর্শী চিন্তা যদি না থাকতো তাহলে এই মূল্যবান লেখা আমরা জাতির কাছে তুলে দিতে পারতাম না।’

কারাগারের রোজনামচা’র ভূমিকা লিখতে গিয়ে কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং কারাগরে বন্দি করে রাখে। এরই একটি পর্যায়ে তারা এক মাসে ১৯ বার জায়গা বদল করেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাননি, তারা ধরা পড়ে যান এবং তাদের ধানমন্ডি ১৮ নম্বর থেকে সড়কে (বর্তমানে ৯/এ ২৬ নম্বর বাড়ি) একটি একতলা বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়।

রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গ এমনভাবে জড়িয়েছিল যে, বারবার তাকে কারাবরণ করতে হতো। আর এ সময় বঙ্গমাতা অত্যন্ত শক্তহাতে দলের হাল ধরতেন। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি দলের নোতাকর্মীদের সঙ্গে যোাগাযোগ রাখা শুরু করতেন। তিনি ধীরস্থির এবং প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। বিপদে-আপদে, দুঃখ-বেদনায় কখনো ভেঙে পড়েননি। বরং সেখান থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় তার সঠিক পথ তিনি খুঁজে বের করতেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা তোফায়েল আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেক সময়ে দলের নেতাকর্মীরাও গ্রেপ্তার হতেন। যখন মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ থাকতো না, বঙ্গমাতা দলের সারথির ভূমিকায় থাকতেন। কারাগারে যতবার তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেনম ততবারই তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে কথা বলার আগে দলের সংবাদ পরিবেশন করেছেন। আর বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্তা তিনি গোপনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিকট তা পৌঁছে দিতেন। তিনি নিজের ভালো-মন্দের কথা চিন্তা করেন নাই। চিন্তা করেছেন দেশ, জাতিকে নিয়ে। তিনি চিন্তা করেছেন দল, আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগকে নিয়ে। এভাবে তিনি রেনু থেকে হয়ে যান সবার বঙ্গমাতা।

তিনি ছিলেন কোমলে-কঠোর এক শুদ্ধ নারী। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সকল করে সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে শুধু এগিয়ে গিয়েছেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহস নিয়ে সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে বাংলা ও বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে থেকে ভালোবেসেছেন সংসার-জীবন। জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুঃখ-কষ্ট সয়ে জীবন সমর্পিত করেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, অসামান্য আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের জন্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে শহিদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

বঙ্গমাতা একদিন ড. নীলিমা ইব্রাহিমকে বললেন, “নিজের ভাইকে বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আর আমাকে বঙ্গমাতা, বেশ আমি বুঝি ‘বঙ্গবান্ধবী’ হতে পারি না। এতই কী বুড়ো হয়েছি।” তবে রেনু কৌতুক করে যা-ই বলুন না কেন, তিনি আমাদের বঙ্গমাতা থেকে গিয়েছেন এবং থাকবেনও।
বঙ্গবন্ধুর স্বীকারোক্তিতেই আছে। ১৯৭২- এর ২ মার্চ আজিমপুর গার্লস স্কুলে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন-

“আমি আমার জীবনে দেখেছি আমি বুলেটের সামনে এগিয়ে গেলেও আমার স্ত্রী কোনোদিন বাধা দেননি। আমি দেখেছি ১০/১১ বছর জেলখানায় থাকলেও তিনি কোনোদিন মুখ খুলে প্রতিবাদ করেননি। যদি তিনি তা করতেন তাহলে আমি জীবনে অনেক বাধার মুখোমুখি হতাম। এমন অনেক সময় ছিল যখন আমি জেলে যাবার সময় আমার সন্তানদের জন্য একটি পয়সাও রেখে যেতে পারিনি। আমার নিরন্তর সংগ্রামী জীবনে তার প্রচুর অবদান আছে।”

বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষায় “রেনু আমার পাশে না থাকলে, আমার সব দুঃখ-কষ্ট অভাব অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলে মেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না।”

রেনু তার জীবনের শেষ অগ্নিপরীক্ষা দিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বেগম মুজিবকে ঘাতকরা বলল, আমাদের সাথে চলেন। তিনি বললেন, ‘তোমাদের সাথে কোথাও যাব না। তাকে মেরেছে, আমাকেও গুলি কর। আমি এক পা-ও নড়ব না।’ ঘাতকের হাতের বন্দুক গর্জে উঠল। বত্রিশ নম্বরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল তার দেহে। তার শরীরের রক্ত গড়িয়ে গিয়ে মিশে যায় সিঁড়িতে পড়ে থাকা স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্তের সাথে। আর সে রক্তের শ্রোতধারা গড়িয়ে মিশে যায় বাংলার মাটিতে।

যিনি বঙ্গবন্ধুর শৈশবের সঙ্গী থেকে জীবনসঙ্গী হয়েছেন। সবশেষে একই সাথে বঙ্গবন্ধুর সাথে মৃত্যুতে আলিঙ্গন করেন। ভাবলে বিস্ময় জাগে এক আটপৌরে সাধারণ চিরায়ত মাতৃরূপে যিনি হাজারো বাঙালি হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে আছেন। যতই দিন যাচ্ছে এই মহীয়সী নারীর প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে। তেজস্বিনী অথচ চলনে বলনে এক সাধারণ গৃহবধূ। সেই গৃহবধূ রেনু আজ আমাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

ড. মাহবুবা রহমান, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা।

এসএন

Header Ad
Header Ad

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে ২৪ জনের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ায় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র আগুনে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ধ্বংস হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু একে "অভূতপূর্ব সংকট" হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার দাবানলের ইতিহাস নতুনভাবে লিখছে। গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার সানচিয়ং কাউন্টি থেকে দাবানল শুরু হয়, যা দ্রুত পার্শ্ববর্তী উইসিয়ং, আন্দং, চেওংসং, ইয়ংইয়াং ও ইয়ংডক শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

এই ভয়াবহ আগুনে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন। দাবানলের কারণে ২৩,০০০-এরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটি বর্তমানে ভয়াবহ খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে দাবানলের মাত্রা আরও বেড়েছে। দাবানল ইতোমধ্যে ১৭,০০০ হেক্টর বনভূমি পুড়িয়ে ফেলেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম দাবানল হিসেবে রেকর্ড হয়েছে।

বিশেষভাবে উইসিয়ং শহরে দাবানল গৌনসা বৌদ্ধ মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মন্দির ছিল প্রদেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় স্থাপনা। এছাড়া, জোসন রাজবংশের (১৩৯২-১৯১০) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য, যা জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত ছিল, দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হাজার হাজার দমকলকর্মী এবং ৫,০০০-এরও বেশি সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারও আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। বুধবার দুপুরে উইসিয়ং অঞ্চলের পাহাড়ে একটি দমকল হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়, যার কারণ এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জাতীয় দমকল সংস্থা মঙ্গলবার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা জারি করেছে, যা এই বছরের জন্য প্রথমবারের মতো ঘোষণা করা হলো।

ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু জানিয়েছেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ জনবল ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু প্রবল বাতাস দমকলকর্মীদের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। তিনি বলেন, "আমরা আজ বা আগামীকাল বৃষ্টির জন্য আশায় আছি, যা আগুন নেভাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার কোনো বৃষ্টি নেই এবং বৃহস্পতিবার মাত্র ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।"

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দাবানল প্রতিরোধে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দাবানলের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অবৈধভাবে আগুন লাগানোর ঘটনা ও ব্যক্তিগত অসতর্কতা চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে এসব কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং নতুন দমননীতি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া, দাবানল পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন সরকার প্রধান।

সূত্র: বিবিসি

Header Ad
Header Ad

বিএনপি বিনা ভোটের সরকার গঠন করতে চায় না: সামসুজ্জোহা খান

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার ও নজিপুর পৌরসভায় বিএনপি উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আরাফাত রহমান কোকো এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার  (২৬ মার্চ) নজিপুর সরকারি কলেজ মাঠে পত্নীতলা উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি আক্কাস আলী'র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য  মো. সামসুজ্জোহা খান জোহা।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক  আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, সদস্য সচিব বায়োজিত হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ হাসান তুহিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম টুকু, জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী সামিনা পারভিন পলি,  নজিপুর পৌর বিএনপি'র সভাপতি আলহাজ্ব মো. ওয়াজেদ আলী, জেলা যুবদলের আহবায়ক মাসুদ হায়দার টিপু সহ জেলা উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সামসুজ্জোহা খান বলেন, বিএনপি বিনা ভোটের সরকার গঠন করতে চায় না, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে, জনগণের অংশগ্রহণমূলক ভোটের মাধ্যমে আমরা সরকার গঠন করতে চাই।  

স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আমরা ধর্মের নামে রাজনীতি করিনা। আমরা এখনো ক্ষমতায় যাইনি, দেশ সৈরাচারের শোষন থেকে মুক্ত হয়েছে তবে সেটার প্রত্যাবর্তন যেন আমাদের দ্বারা না ঘটে। ঘুষ দূর্নিতী বা চাঁদাবাজির মত অপকর্মে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর  ব্যবস্থা গ্রহনের হুশিয়ারি দেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

নায়ক নিশো এবার গায়ক, ‘দাগি’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে দিলেন কণ্ঠ

আফরান নিশোর। ছবি: সংগৃহীত

নাটক ও ওয়েব সিরিজের পর এবার বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে আফরান নিশোর। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি এবার নতুন পরিচয়ে চমক দিলেন তিনি—গায়ক হিসেবেও দেখা গেল তাকে। ঈদে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘দাগি’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে কণ্ঠ দিয়েছেন নিশো। গানটির কথা- ‘তোমাদের চোখে দাগি, সমাজের চোখে দাগি, যতবার খুশি মারো, তত বারবার জাগি।’ গানের কথাগুলো যেন সিনেমার মূল চরিত্রের আত্মকথন।

২৬ মার্চ গানটি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। গানটির কথা লিখেছেন রাসেল মাহমুদ, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন আরাফাত মহসীন। গানে মূলত নিধির সঙ্গে কিছু অংশ গেয়েছেন নিশো।

গানের বিষয়ে নিশো জানান, তিনি পরিকল্পনা করেই গানটি গাইতে যাননি। বিষয়টি তার জন্য সারপ্রাইজ ছিল। প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল তাঁকে গানটির একটি ডেমো শুনিয়ে মতামত জানতে চান। পরে নিশোকেই গানটির কণ্ঠ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। নিশো বলেন, ‘গানটির কথা এবং ভাবনা আমার কাছে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে, তাই গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

 

 আফরান নিশোর। ছবি: সংগৃহীত

সৈয়দপুর, রাজশাহী ও ঢাকায় শুটিং করা ‘দাগি’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শিহাব শাহীন। তিনিই এর গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন। এতে অভিনয় করেছেন তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, মিলি বাশার, রাশেদ মামুন অপু, এ কে আজাদ সেতুসহ অনেকে। ‘দাগি’ সিনেমাটি আসছে ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে ২৪ জনের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ
বিএনপি বিনা ভোটের সরকার গঠন করতে চায় না: সামসুজ্জোহা খান
নায়ক নিশো এবার গায়ক, ‘দাগি’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে দিলেন কণ্ঠ
২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল ইরান
ধানমন্ডিতে র‍্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৪
শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলব: সারজিস আলম
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান লা লিগা খেলা জিদান মিয়া
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত
মুসলিম উম্মাহকে শবে কদরের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান
চার দিনের সফরে চীন পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
ভারতে ভয়ংকর মাদক ফেন্টানিলের উৎস! দাবি তুলসী গ্যাবার্ডের দপ্তরের
ছায়ানটে অশ্রু-গানে সন্‌জীদা খাতুনের শেষ বিদায়
মুক্তিযোদ্ধা সনদ ফেরত দিতে ১২ জনের আবেদন
রাজধানীর যেসব এলাকায় বৃহস্পতিবার গ্যাস থাকবে না
বেনাপোলে ৯৬ কেজি ভারতীয় গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক
মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৩০
র’কে নিষিদ্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা  
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান, আটক ৩ (ভিডিও)
শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক লিখে পোস্ট, এসিল্যান্ডকে অব্যাহতি
স্যামসাং সিইও হান জং-হি মারা গেছেন