ঐতিহ্য কৃষি পর্যটন
যত ধরনের পর্যটন আছে, কৃষি পর্যটন এদের মধ্যে অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন কৃষি পর্যটনে পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় দুইটি দেশ। এ ছাড়া ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া পর্তুগাল, নেপাল, উগান্ডা, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ভারতও কৃষি পর্যটনে বেশ এগিয়ে গেছে। পর্যটকরা কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি সম্বন্ধে চাক্ষুষ জ্ঞান আহরণ করা ও স্থানীয় কৃষি পণ্য উপভোগ ও ক্রয় করা ইত্যাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চায়। অর্থাৎ কৃষি পর্যটন কৃষিকে দেখা, জানা ও উপভোগ করার সুযোগ তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, দিনাজপুরের লিচু, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ইত্যাদি কৃষি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই কৃষি পর্যটন পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে কৃষির ঐতিহ্যসমূহ নিয়ে গড়ে উঠতে পারে আরও একটি বিশেষায়িত পর্যটন- ঐতিহ্য কৃষি পর্যটন।
ঐতিহ্য কৃষি পর্যটনের মাধ্যমে পর্যটকরা গ্রামীণ কৃষির ঐতিহ্য দর্শন, সংরক্ষণ ও উক্ত অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবনধারা উপলব্ধি করবে। এই জাতীয় পর্যটন গ্রামীণ সংস্কৃতির স্থায়ীত্বকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে। ভ্রমণকারীরা আবিষ্কার করবে জীবনের নতুন গল্প ও প্রশান্তির সবুজ বাতাবরণ। তারা তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশবে, অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে এবং সর্বোপরি উক্ত কৃষি ঐতিহ্যকে ধারণ করতে শিখবে।
বাংলাদেশের ভাসমান সবজি চাষ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতির স্বীকৃতি পেয়েছে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে। বিশ্ব ঐতিহ্যের এই স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ইউনেস্কো, জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক তহবিল (জিইএফ) যৌথভাবে এই স্বীকৃতি দেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ফুল চাষ, প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান চাষ, পাহাড়ে জুমচাষ এবং একসঙ্গে ধান ও মাছ চাষের পদ্ধতি বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতির সম্ভাব্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, কৃষি ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে চীনের ১১টি, জাপানের ৮টি, ভারতের ৩টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২টি এবং আলজেরিয়া, চিলি, কেনিয়া, মরক্কো, পেরু, ফিলিপাইন, তানজানিয়া, তিউনিসিয়া, ইরান ও আরব আমিরাতের একটি করে অর্থাৎ মোট ১৫টি দেশের ৩৫টি চাষ পদ্ধতি এই স্বীকৃতি পেয়েছে। আশা করা যায়, ১৫টি দেশ আগামীতে ঐতিহ্য কৃষি পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
পৃথিবীতে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটে। তাই কৃষিকে প্রাচীনতম সংস্কৃতি বলা হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, আমাদের এই ভূখণ্ডে ধান চাষ শুরু হয় প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। কৃষি সভ্যতার বিকাশের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় কৃষি, শিল্প ও সংস্কৃতির। এই ঐতিহ্য পর্যটনে ব্যবহৃত হতে পারে সহজেই।
দোন এ দেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন সেচযন্ত্র, যার মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সেচ দেওয়া হতো। আজ এটি বিলুপ্তপ্রায় এক কৃষি ঐতিহ্য। কৃষি জাদুঘর তৈরি করে এদের বাঁচিয়ে রেখে পর্যটকদের আদি কৃষি উপকরণের সঙ্গে পরিচিত করানো যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি কৃষি জাদুঘর রয়েছে।
মোখলেছুর রহমান: রেক্টর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম স্টাডিজ, ঢাকা।
এসএন