নতুন বছর নতুন উদ্দীপনা নতুন কিছু প্রত্যাশা
নতুন বছর নতুন উদ্দীপনা নতুন কিছু প্রত্যাশা। যদিও আমরা এখনও কোভিড থেকে বেরুতে পারিনি। এখন নতুন এসেছে অমিক্রন । এটা যদিও খুব বিপজ্জনক নয়, তবুও ছড়াচ্ছে খুবই দ্রুতবেগে এবং ছড়ানো মানেই হচ্ছে অসুস্থতা বাড়া, মানুষের উপর চাপ বাড়া। সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়ে গেছে। তারপরও আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিও চলছে। সেভাবে যদি চলতে পারে তাহলে বলতে পারি আগামী বছর আমাদের জন্য সহনীয় হবে এবং বছর শেষে অতীতকে পেছনে ফেলে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পাশের হার ৯৩.৫৮%। আমি মনে করি এটি একটি সুসংবাদ। কোভিডের সময় আমরা এত চুলচেড়া বিচার বিশ্লেষণ করতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা যে পরীক্ষা দিয়েছে এবং তার যে ফল প্রকাশ হয়েছে,এটিই বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক বড় একটি প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি। অনেকে হয়তো এর সংখ্যা নিয়ে কথা বলবেন। অনেকগুলি স্কুলে শতভাগ পাশ করেছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলবেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে গ্রাম পর্যায়ে যত শিক্ষার্থী সফল হবেন, তাদেরও সংকল্প দাঁড়াবে ভবিষ্যতে ভাল করার। আমি মনে করি প্রতিক্রিয়াটি এমন হওয়া উচিত যে, আমি খুবই আনন্দিত। বিশেষ করে এসএসসি’র ফলটা বেরিয়েছে এবং তাদের সাফল্য দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে।
যদি স্বাভাবিক সময় থাকতো তাহলে হয়তো পাশের হার আরেকটু কম হতো বলেই মনে হয়। পাশ করে গেছে বলেই যে, তাদের অবহেলা করতে হবে তা নয়, বরং যত্ন করে তাদের এইচএসসি’র পড়াশোনার কাজটি শেষ করতে হবে যাতে এইচএসসি’তে আরও ভাল করতে পারে। আমাদের এই সন্তানেরা, তাদের যদি সামস্টিকভাবে যত্ন নেয়া হয়, তারা ভাল করবে। গ্রাম থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আসে, তাদের প্রথম বছরেই বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। কারণ তাদের ইংরেজির জ্ঞ্যন খুব একটা থাকে না। কিন্তু দেখা যায়, দুই তিন বছরের মধ্যে তারা নিজেদের মানিয়ে নেয়। কলেজগুলি যেন সত্যিকার অর্থেই সচল হয় এবং যখন কলেজে যাবে শিক্ষার্থীরা, তারা যেন ভালভাবে শিক্ষটুকু পায়। আর এখন যেহেতু সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়ে গেছে সেই শিক্ষা যেন যত্ন করে দেয়া হয়। যারা ভাল করতে পারেনি বিশেষ করে মেয়েরা, তারা এমনিতেই সুযোগ সুবিধা কম পায় এবং পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করলেই বাবা মায়েরা বিয়ে দিয়ে দিতে চায়। তাদের পড়াশনার দিকেও বিশেষ নজর দেয়া উচিত সরকারের।
যে কথাটি না বললেই নয়, যতদিন পর্যন্ত আমাদের মুখস্ত বিদ্যার দিন শেষ না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত শিক্ষা নিয়ে আশা ভরসা আলোর মুখ দেখবে না। অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোচিং এ শিক্ষাদান করে থাকেন। যে শিক্ষার্থী পঞ্চম শেণিতে পরীক্ষা দিবে তাদের কোচিংএ ক্লাস করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবেই। তারপর নোটবই গাইড বই কোচিং সিন্ডিকেট ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ছিল না। এ থেকে যদি মুক্তি না পায় শিক্ষার্থীরা, তাহলে নোটবই গাইড বইতো লাগবেই এবং যখন এই শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যখন তারা যাবে এবং পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, তাদের জ্ঞ্যনের কোন পরিপূর্ণতা থাকবে না বলাই বাহুল্য।
শিক্ষাক্ষেত্রে তিনটি পরিবর্তন খুবই জরুরি। প্রথমত, পরীক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন । দ্বিতীয়ত, শিখন পদ্ধতির পরিবর্তন। বিদেশে আমি দেখেছি এমনকি এ বিষয়ে আমি প্রচুর লিখেছি। নাহিদ সাহেব যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন তখন বাইশ পৃষ্ঠার একটি লেখা জমা দিয়েছিলাম । বিষয়গুলি আমাদের ভাবতে হবে।
আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্নরকম ক্লাবের সদস্য হবে । তিন থেকে চারটা ক্লাবের মেম্বার হবে তারা। লাইব্রেরি অর্থাৎ বই পাঠ ক্লাব, প্রকৃতি দর্শন ক্লাব, এডভেঞ্চার ক্লাব, খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাব ইত্যাদি। তাদেরকে সেভাবে যদি প্রেজেন্টেশন দেয়া হয় ক্লাসে, সেক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের মেধাবিকাশের সুযোগ সঠিকভাবে পাবে। কুইজের মাধ্যমে যদি তাদের পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়, তাহলে কোচিং এর কোন প্রয়োজন পড়বে না। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, শিক্ষক যদি প্রজাপতি নিয়ে লিখতে বা ছবি আঁকতে বলেন, সে গুগল দেখে জেনে নিয়ে তারপর নিজেই সেটি করে ফেলতে পারবে। শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদানের ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সমাজকে বেঁধে রাখে যেমন প্রতিবন্ধকতা, যেমন দুর্নীতি ,অপশাসন ,সুশাসনের অভাব পিতাহীনতার সংস্কৃতি, এটা চালু হয়ে গেছে। একেবারে ঘুণ ধরে গেছে। তারপর বৈষম্য বাড়ছেই। আমাদের কোটিপতির সংখ্যা এক লাখ কিন্তু হতদরিদ্রর সংখ্যা কয়েক কোটি। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে শিক্ষা আমাদের স্কুলের শিশুদের শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা। সেইগুলি যেন দূর হয় এই বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশ একটি বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
আমি ঢাকাপ্রকাশ পরিবারের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুভকামনা জানাই। প্রত্যেকের জন্য নতুন বছর সুন্দর হোক শুভ হোক। নতুন বছরের একটি স্লোগান হওয়া উচিত আমরা সবাই সবার জন্য। কেউ একা নই । বিপদে আমাদের প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে থাকা উচিত। সেরকম আনন্দটিও ভাগ করে নেয়া উচিত। এভাবে সবাই যদি আমরা আমাদের আনন্দ এবং প্রাপ্তিটুকু ভাগ করে নিতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই সকল প্রতিকূলতা, সকল বাঁধা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে।
ঢাকাপ্রকাশ পত্রিকাটি সফল হোক এবং এক্ সময় একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হয়ে যেন দাঁড়ায় এবং পাঠকদের স্বস্তিদান করে একইসাথে দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের জন্য যেন স্বস্তিহীন হয়ে দাঁড়ায়। আর এটা যদি হতে পারে তাহলে সবচেয়ে বড় অর্জন ঢাকাপ্রকাশ করায়ত্ত্ব করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক