বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বাংলার বাউলের প্রাণপুরুষ মহাত্মা লালন: বিশেষজ্ঞ ভাবনা

লালন গবেষকরা তাদের গবেষণায় লালনের জীবনদর্শন থেকে শুরু করে শৈল্পিক ও কবিত্বশক্তি উদঘাটনে এবং শিল্পী সত্তার মূল্যায়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। লালনের গান বাংলা সাহিত্যের একটি সম্পদ, লালন সাধনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, সুফিদর্শন, বৈষ্ণবশাস্ত্র সম্পর্কে তত্ত্বজ্ঞান, দিব্যদৃষ্টি সবই তার অসামান্য অবদান। দেশি-বিদেশি গবেষকেরা লালন নিয়ে গবেষণার জ্যোতি ছড়িয়ে চলেছেন। লালন দেশের কাঁটাতার ছিন্ন করে বিশ্বের ওপাড়ে ও মনের মানুষের হৃদয়েও তুলেছেন সুরের প্রাণবস্ত মূর্ছনা:
‘মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে’...

ফকির লালন শাহ্’র জীবদ্দশায় তৈরি করা একমাত্র চিত্র

৫ মে ১৮৮৯ সালে শিলাইদহে পদ্মা বোটের উপর বসা অবস্থায় এঁকেছিলেন চিত্রশিল্পী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, যা বর্তমানে ভারতের যাদুঘরে রক্ষিত আছে। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম প্রধান ও ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, যার যুগান্তকারী গানের মাধ্যমে উনিশ শতকে বাউল গান অধিকতর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। লালনকে বাউল মত এবং গানের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাউল মত সতেরো শতকে জন্ম নিলেও লালনের গানের জন্য আঠার শতকে বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাউল গান যেমন মানুষের জীবন দর্শন সম্পৃক্ত বিশেষ সুর সমৃদ্ধ ধারা তেমনই বাউলরা সাদামাটা জীবনযাপন করেন। মীর মশাররফ হোসেন সম্পাদিত তৎকালীন পাক্ষিক পত্রিকা ‘হিতকরী’তেই প্রকাশিত রাইচরণ দাস এর এই একটি রচনায় সর্বপ্রথম তাকে ‘মহাত্মা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ গান্ধীজীর ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম লালনকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেওয়া হয়েছিলো।

রবীন্দ্রনাথের ওপর লালনের প্রভাব পড়েছিল। গীতাঞ্জলির অনেক গানে-তার জীবনদর্শনে লালন তাকে প্রভাবিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ধারণায়--Lalon is the king of the Bauls--সবচেয়ে বড় মরমি-শ্রেষ্ঠ বাউল। সুফিকবি জালালউদ্দিন রুমিকে নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় যে ধরনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে-চেতনা জেগেছে, লালনকে নিয়েও এমন হবে। মুচকুন্দ দুবের লালনের গানের হিন্দি অনুবাদের বই ‘লালন শাহ ফকির কী গীত’ প্রকাশ পায় ভারতের দিল্লির সাহিত্য একাডেমি থেকে। এতে মুচকুন্দ দুবের দীর্ঘ ভূমিকাসহ লালনের ১০৫টি গান স্থান পেয়েছে।

বিশিষ্ট লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী ‘লালন সাঁই ও উত্তরসূরি’ গ্রন্থে (উপসম্পাদকীয় ‘মহাত্মা লালন ফকীর’ পাক্ষিক ‘হিতকরী’, ১ম ভাগ, ১৩শ সংখ্যা, ১৫ কার্তিক ১২৯৭, ৩১ অক্টোবর ১৮৯০) অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন: ‘আখড়ায় ইনি সস্ত্রীক বাস করিতেন; সম্প্রদায়ের ধর্ম্ম-মতানুসারে ইহার কোনো সন্তান-সন্ততি হয় নাই। ...ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশত: কিছুই বলিতে পারে না।’ লালনের জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লালন নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। লালন গবেষণার পথিকৃত শ্রীবসন্ত কুমার পাল এর মতে, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাঁড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। ‘হিতকরী’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিবন্ধে বলা হয়েছে, লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথিরা তাকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। কালীগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মওলানা মলম শাহ। মওলানা মলম শাহ ও তার স্ত্রী মতিজান বিবি তাকে সেবা-শুশ্রুষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। গুটি বসন্ত রোগে তিনি একটি চোখ হারান। ছেঁউড়িয়াতে পালিত মাতা ও পিতার অনুরোধে লালন বসবাস শুরু করেন এবং ছেঁউড়িয়াতেই থাকাকালীন বিভিন্ন জায়গার সাধক-সন্ন্যাসীরা তার এখানে আসা-যাওয়া শুরু করেন। এই সময় সিরাজ সাঁই নামক একজন সুফি দরবেশ ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাত হয় এবং তার দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন। লালনের অনেক পদে দরবেশ সিরাজ সাঁই এর নাম উল্লেখ আছে। তার পালিত মাতা বসবাসের জন্য নিজ বাড়ির কাছেই (বর্তমান মাজার আঙ্গিনায়) ঘর তুলে দেন। লালন অশ্বারোহণে দক্ষ ছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়স অব্দি অশ্বারোহণের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যেতেন। (হিতকরী পাক্ষিক, ৩১ অক্টোবর ১৮৯০)


লালন ফকিরের মাজার, ছেঁউড়িয়া, কুষ্টিয়া। ছবি. সুধীর চক্রবর্তী, ১৭ অক্টোবর ২০০১

লালনের পরিচয় দিতে গিয়ে সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন: ‘কাঙ্গাল হরিনাথ তাকে জানতেন, মীর মশাররফ তাকে চিনতেন, ঠাকুরদের হাউসবোটে যাতায়াত ছিলো, লেখক রায় বাহাদুর জলধর সেন, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় তাকে সামনাসামনি দেখেছেন, গান শুনেছেন, তবু জানতে পারেন নি লালনের জাত পরিচয়, বংশধারা বা ধর্ম।’ লালনের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘লালন ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু কোনো বিশেষ ধর্মের রীতিনীতি পালনে আগ্রহী ছিলেন না। সব ধর্মের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন জীবনে।’ (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ‘মনের মানুষ’, ২০০৮, পৃ. ১৯৭)। লালন ছিলেন মানবতাবাদী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ্, মহাত্মা লালন ফকির, বাউল সম্রাট বিভিন্ন উপাধিতে ভক্ত ও সুধী-সাধারণের মাঝে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক সাধক, বাউল ঘরানার মরমি সাধক, বাউল, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। লালনের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে গবেষকদের মাঝে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, যা তার জীবদ্দশায়ও বিদ্যমান ছিলো। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকার ‘মহাত্মা লালন’ নিবন্ধে প্রথম লালন জীবনী রচয়িতা শ্রীবসন্ত কুমার পাল বলেছেন: ‘সাঁইজি হিন্দু কি মুসলমান, এ কথা আমিও স্থির বলিতে অক্ষম।’ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, লালনের জীবদ্দশায় তাঁকে কোনো ধরনের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে দেখা যায় নি। নিজ সাধনা বলে তিনি হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম উভয় শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। লালন বিশ্বাস করতেন সকল মানুষের মাঝে বাস করে এক মনের মানুষ। তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবতাবাদকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে যখন হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে জাতিগত বিভেদ-সংঘাত বাড়ছিলো তখন লালন ছিলেন এর বিরূদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। সমাজের নানান কুসংস্কারকে তিনি তাঁর গানের মাধ্যমে করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। আর সে কারণেই লালনের সেই সংগ্রামে বহু ভূস্বামী, ঐতিহাসিক, সম্পাদক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাধু বাউল এমনকি গ্রামের নিরক্ষর সাধারণ মানুষও আকৃষ্ট হয়েছিলেন। মানবতাবাদী লালন দর্শনের মূল কথা হচ্ছে মানুষ। লালনের প্রতিটি গানে তিনি নিজেকে ফকির (আরবি ‘সাধু’) হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। লালন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন: ‘লালন ফকির নামে একজন বাউল সাধক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সমন্বয় করে কী যেন একটা বলতে চেয়েছেন- আমাদের সবারই সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

বাউলগান ইউনেস্কো কর্তৃক World Heritage (২০০৫ সালের ২৭ নভেম্বর) এর অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় লালন ফকিরের গান দেশ ও বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। মকছেদ আলী শাহ ও গোলাম ইয়াছিন শাহ্ সম্পাদিত দ্বিভাষিক ‘সেদিনের এইদিনে’ And this Day (১৯ মার্চ ১৯৮১) পুস্তিকায় মকছেদ আলী শাহ-কৃত লালনের কয়েকটি গানের অনুবাদ সংকলিত হয়েছে। উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লালনের গান বিশ্লেষণ করে অভিমত প্রকাশ করেছেন যে: ‘সবদিক দিয়া বিবেচনা করিলে বাউলগান রচয়িতা হিসাবে মুসলমান বাউল লালন ফকিরই সর্বশ্রেষ্ঠ। ড. উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন: ‘শরীয়তবাদী মুসলমানগণ লালনকে ভালো চোখে কোনদিনই দেখেন নাই। এ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল লালনের খ্যাতি-প্রতিপত্তির দিনেও তাঁহাকে নিন্দা করিয়াছে।...এই বাউল-পন্থী নেড়ার ফকিরেরা চিরকাল...অপমানিত ও লাঞ্ছিত হইয়াছে।’ অত:পর লালন সবিশেষ একটি গানে আক্ষেপ করে বলেছেন-
‘এ দেশেতে এই সুখ হলো, আবার কোথা যাই না জানি’...
মার্কিন কবি এলেন গিন্সবার্গ লালনের দর্শনে প্রভাবিত হন এবং তার রচনাবলীতেও লালনের রচনা শৈলীর অনুকরণ দেখা যায়। তিনি After Lalon নামে একটি কবিতাও রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন তিনি লালনের ‘আছে যার মনের মানুষ সে মনে’ এই গানে উল্লেখিত মনের মানুষকে তা আবিষ্কার করতে পেরেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস ‘গোরা’ শুরু হয়েছে লালনের গান দিয়ে-
‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখী কেম্নে আসে যায়’

লালন আখড়াবাড়িতে দৃষ্টিনন্দন একতারা

রবীন্দ্রনাথের পর দেশ-বিদেশে অনেকেই গবেষণা-লেখালেখি-সংগীতসাধনের মধ্য দিয়ে লালনকে সুপরিচিত করে তুলেছেন। বিদেশি গবেষকদের মধ্যে মার্কিন গবেষক ক্যারল সলোমনের (২৮ জুলাই ১৯৪৮-১৩ মার্চ ২০০৯) কর্মসাধনা অনন্য। শ্রেষ্ঠ বাউল সাধকশিল্পী লালনের টানে তাঁর বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু। দীর্ঘদিন ধরে বাংলার পথে-প্রান্তরে ঘুরে, বাউলের আখড়া-আসরে গমন করে বাউল গান শোনেন, তত্ত্বজ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান বাউল-গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী থেকে শুরু করে তরুণ লোকগবেষক সাইমন জাকারিয়াসহ অনেকের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে। প্রচুর অডিও-ভিডিও ও অন্যান্য মাধ্যমের প্রমাণাদি সংগ্রহসাপেক্ষে, বাংলা কথনে চৌকস ও বাঙালি পোশাকে অভ্যস্ত ক্যারল একসময় বাউল ও লালন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। বাউল বিষয়ে একাধিক রচনা ও লালনের কিছু গানের তরজমা করে জীবদ্দশায় ইউরোপ-আমেরিকায় বিশেষ পরিচিতি পান। তার আন্তরিক অভিপ্রায় ও প্রচেষ্টা ছিল লালনের গানের প্রামাণিক পাঠ তৈরি করে তা ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে লালনকে যথার্থভাবে তুলে ধরা। এ বিষয়ে তিনি যথেষ্ট এগিয়েছিলেন; প্রায় দেড়শত গানের পাঠ-নির্ণয় ও ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন করেন। কিন্তু তার বহু দিনের বহু শ্রমের যে স্বর্ণফসল, নিজে তা তুলে দিয়ে যেতে পারেননি। মৃত্যুর পূর্বে তিনি লালনের গানের অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথ-সংগৃহীত লালনের গানের খাতা থেকে। তার অনুবাদ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য। কেননা ঈধৎড়ষ তাঁর অনুবাদের জন্য প্রামাণ্য লালনগীতি ব্যবহার করেছেন এবং বাউল-সাধনতত্ত্ব ও বাউলজীবন সম্বন্ধে তার রয়েছে প্রাজ্ঞ ধারণা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। লালনের কথায় যে ব্যাকুলতা ও নিবেদন ভাষা পেয়েছে তা গানের মধ্যে লক্ষ্যণীয়:
‘তোমার মতো দয়াল বন্ধু আর পাবো না, দেখা দিয়ে ওহে রাছুল ছেড়ে যেও না’...

এমনিভাবে বিস্ময়কর বিবেচনা-পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে তিন দশক ধরে যেসব লালন সংগীতের পাঠ তিনি নির্ণয় করেছিলেন এবং ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন সেগুলোর একশ সাইত্রিশটি গান নিয়ে সম্পূর্ণ বাংলা ও ইংরেজিতে দ্বিভাষিক সংকলন বের হয়েছে। বইটির নাম ‘লালন সাঁইজির গান 'City of Mirrors: Songs of Lalon Sai’। প্রকাশক আমেরিকার নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিয়ন প্রেস। সম্পাদনা করেছেন ক্যারলের বাংলাদেশের বিশস্ত সহচর শ্রমনিষ্ঠ লোকগবেষক-লেখক-উপস্থাপক সাইমন জাকারিয়া ও আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়ান ওপেনশাও। আমরা মনে করি, পাশ্চাত্যে লালন নিয়ে যে আগ্রহ-উৎসাহ রয়েছে, তা পূরণে সংকলনটি অত্যন্ত সহায়ক হবে।’ অসমীয় ভাষায় অনুবাদ করেছেন মণিপুরি নৃত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি দেবযানী চহিলা (জন্ম ১৯৩৪) এবং ‘লালন সাঁইর গীত’ নামক গ্রন্থটির মূল্যবান ভূমিকা লিখে দিয়েছেন প্রখ্যাত লালন গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। ড. সনৎকুমার মিত্র ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে ‘লালন ফকির: কবি ও কাব্য’ নামক গ্রন্থে লালনের আসল প্রতিকৃতি বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। বাউলগান ও লালন ফকির নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা গবেষণা পুস্তক দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি বৎসর দুবার কুষ্টিয়ায় ছেঁউড়িয়াতে অনুষ্ঠিত লালন মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিদেশ থেকে গবেষক, মিডিয়া, টেলিভিশন ও ফিল্ম সভাসদের সমাবেশ ঘটে। এই সময় কুষ্টিয়া জেলা শহর এবং ছেঁউড়িয়া গ্রাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসব প্রাঙ্গণে পরিগণিত হয়। মৃত্যুর বহু বছর পরেও লালন ফকিরের খ্যাতি আজ তুঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের পরে এমন খ্যাতি এ দেশে অন্য কারো ভাগ্যে জোটেনি।

লালনকে নিয়ে যেসব গবেষণা এখন পর্যন্ত উপস্থিত ও অধীত, তা ব্যক্তি লালনকে অনেকখানি করেছে ধোঁয়াশামুক্ত। পূর্বসূরিদের লালন গবেষণার বিতর্কিত ও সংশয়িত বিষয়সমূহের খোলনলচে পাল্টে দিয়ে হাজির করেছেন যুক্তিসঙ্গত ও প্রশ্ননির্ভর বিবেচনাসমূহ। আহমদ শরীফ, অন্নদাশঙ্কর রায়, সুধীর চক্রবর্তীর মতো বিদ্বজ্জনরা লালন বিষয়ক প্রবন্ধাদি মারফত লালন গবেষণায় যুক্ত করেছেন গতি ও নতুন অভিঘাত।” আমরা লালন রচিত প্রায় এক হাজার গানের সন্ধান পেয়েছি। এসব গান সংগ্রহের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ পথিকৃৎ। শ্রীবসন্তকুমার পাল, ‘হারামনি’ প্রণেতা মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, কবি জসীমউদ্দীন, ড. উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, লালন গবেষক ম. মনিরউজ্জামান, মুহম্মদ আবু তালিব, ড. আনোয়ারুল করীম, খোন্দকার রিয়াজুল হক, শক্তিনাথ ঝা, ড. আবুল আহসান চৌধুরী প্রমুখ প-িত-গবেষক প্রাণান্ত শ্রম-মেধা-মনন দিয়ে লালনের গানের একটি সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়ে তুলেছেন। রণজিৎ কুমার লালন সম্পর্কে ‘সেনবাউল রাজারাম’ নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। পরেশ ভট্টাচার্য রচনা করেন ‘বাউল রাজার প্রেম’ নামে একটি উপন্যাস। ভারতের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লালনের জীবনী নিয়ে রচনা করেন ‘মনের মানুষ’ উপন্যাস। ১৯৩৬ সালে সুনির্মল বসু ‘লালন ফকিরের ভিটে’ নামে একটি ছোট গল্প রচনা করেন। শওকত ওসমান ১৯৬৪ সালে রচনা করেন ‘দুই মুসাফির’ নামের একটি ছোটগল্প। লালন সাঁইজির জীবনীর নির্ভরযোগ্য তথ্য ও লালন-দর্শনের মূল কথা নিয়ে ড. সাইমন জাকারিয়া রচনা করেছেন ‘উত্তরলালনচরিত’ শীর্ষক নাটক। লালনকে নিয়ে কয়েকটি চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে সৈয়দ হাসান ইমাম পরিচালনা করেন ‘লালন ফকির’ চলচ্চিত্রটি। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৬ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ম. হামিদ ১৯৮৮ সালে পরিচালনা করেন তথ্যচিত্র ‘দ্যাখে কয়জনা’ যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রদর্শিত হয়। তানভীর মোকাম্মেল ১৯৯৬ সালে পরিচালনা করেন তথ্যচিত্র ‘অচিন পাখি’। ২০০৪ সালে তানভির মোকাম্মেলের পরিচালনায় ‘লালন’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এ চলচ্চিত্রটিতে লালনের ভূমিকায় অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০১০ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে গৌতম ঘোষ ‘মনের মানুষ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা ২০১০ সালে ৪১তম ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। উল্লেখ্য যে, এই চলচ্চিত্রে লালনকে কোন উল্লেখযোগ্য সূত্র ছাড়াই হিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং চলচ্চিত্রটি অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হয়। ২০১১ সালে মুক্তি পায় হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ‘অন্ধ নিরাঙ্গম’ নামের চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রটিতে লালনের দর্শন ও বাউলদের জীবনযাপন তুলে ধরা হয়েছে। লালনের পদ লালনগীতি বা লালন সংগীত হিসেবে পরিচিত। মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন একাই তিন শতাধিক লালন গীতি সংগ্রহ করেছেন যা তার হারামনি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। লালনের গানের কথা, সুর ও দর্শনকে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন ভাবে উল্লেখ করেছেন। লালন গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেন: ‘অনেক গান আছে যেখানে লালন বলে কথাটির উল্লেখ আছে, তার সবই প্রকৃতপক্ষে লালনের নয়।’ আলাউদ্দীন মন্টু শাহ নামের একজন বাউল তিন খণ্ডের একটি বই প্রকাশ করেছেন, যাতে তিনি পণ্ডিত মনিরুদ্দিন শাহ্ নামক লালনের সরাসরি শিষ্যের সংগৃহীত লালন সংগীতগুলো প্রকাশ করেছেন। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় ফকির লালন শাহ্ দুই হাজারেরও অধিক পদ বা গান রচনা করেছেন।

বাউলের সাধনা-দর্শন-সংগীতের প্রধান ব্যক্তিত্ব লালন সাঁইকে নিয়ে ভিন্ন-ভাষাভাষীদের মধ্যেও আগ্রহ-সন্ধিৎসার পরিচয় মেলে ক্যারল সলোমন, মাসাউকি ও’নিশি, মাসাহিকো তোগাওয়া, ম্যান্ড্রিন উইনিয়স, ব্রাদার জেমস্, ফাদার মারিনো রিগন, দেবযানী চলিহা এবং আরো কারো কারো রচনা ও অনুবাদে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক লোকগবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ও অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী এক আলোচনায় অংশ নেন। ঐ আলোচনা সভায় প্রায় আধ ঘন্টার বক্তৃতায় বিশিষ্ট কূটনৈতিক, সমালোচক ও গবেষক অধ্যাপক মুচকুন্দ দুবে লালন-প্রতিভার নানা দিক এবং তাঁর লালন-অনুবাদের প্রসঙ্গ ও তার তাৎপর্য বিবৃত করেন। তাঁর বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলো ১. ‘অবিভক্ত ভারতের সাধু-কবিদের শ্রেষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম লালন। তিনি এক মহান সমাজসংস্কারক। বিভিন্ন ধর্মের ঐতিহ্যের মূল বাণী খুবই সরল ভাষায় প্রকাশ করেছেন লালন। আর তা মানুষের মনে অক্ষর দাগ রেখে গেছে। কেন হিন্দিভাষীরা এই মহামানবের অপূর্ব বাণী থেকে বঞ্চিত হবে? ২. ‘লালন জাত-পাত, বর্ণ-সম্প্রদায়, উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ মানতেন না। আজকের পৃথিবীতে তিনি বিপুলভাবেই প্রাঙ্গিক। মানব প্রজাতি যে এক, আমাদের নিজ নিজ দীনতা বিষয়ে সচেতন হওয়া যে উচিত, লালনের এ ধরনের বার্তার জন্য আজকের দুনিয়া আকুল। পৃথিবী এ কথা শুনতে চায়।’ ৩. ‘সাহিত্যিক মূল্য ও সৃষ্টিশীল ভাবের সরল ও গভীর প্রকাশের অপার ক্ষমতা দেখিয়েছেন লালন। খুবই গভীর দর্শনে তিনি যে সারল্য প্রকাশ করেছেন, তা অনন্য। নিরক্ষর হলেও তিনি তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন। তিনি তাঁর জনগণের মুখের ভাষা, মাটির ভাষাতে রতেœর মতো সুন্দর ও অমূল্য করে তুলেছেন।’ ৪. ‘ভারতে লালনকে প্রয়োজন, ভারতের বৈচিত্র্যে বিভক্ত সমাজ লালনের জন্য অপেক্ষা করছে।’

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিব্যদ্যুতি সরকার লালন সম্পর্কে বলেন: ‘রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি আর লালনের আখড়ার দূরত্ব ছিলো মাত্র ছয় মাইল, একজন শিলাইদহে অন্যজন ছেঁউড়িয়ায়। লালন রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মসংগীতসহ কোনোটায় আগ্রহ বোধ করেননি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আগ্রহ বোধ করেছিলেন লালনের গানে। সেই আগ্রহের কারণে তিনি লালনের ২৯৮টি গান সংগ্রহও করেছিলেন। দৃশ্যত এই দুইজনের পৃথিবী ছিলো বিপুল ব্যবধানের। একজন ফকির, পথেঘাটে থাকেন। অন্যজন অভিজাত জমিদার, ক্ষণে ক্ষণে বাড়ি গাড়ি পাল্টান, পাল্টান বাড়ির নামও। একজন জীবদ্দশাতেই বিশ^ময় ছড়িয়ে পড়েছিলেন। অন্যজন প্রাণপণে নিজেকে আড়ালে রাখতেন।’ লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন লালন সম্পর্কে লিখেছেন: “লালন (লালন মানে লালন সাঁই ও ওর গান) যেহেতু এখনও আমাদের মাঝে রয়েছে ডগমগে রূপে বিরাজিত, তাই বলা যেতেই পারে লালন আছেন এবং আমরা তাঁকে চিনেছি। সেই অর্থে অবশ্যই লালন আমাদের চেনা। একথা তো সত্যি, লালনের গান এখন ছেঁউড়িয়ার আখড়া থেকে বেরিয়ে, নদীয়ার ভূগোল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে গেছে অনেক দূর। লালন এখন বাঙাল মুলুকে তো বটেই, বাঙালির বিশ্বঅভিবাসনের নিমিত্তে পৃথিবীব্যাপীই গেছে ছড়িয়ে। বেড়েছে লালনপ্রেমী গবেষক, শুভানুধ্যায়ী, অনুরাগীর সংখ্যা। দেশ বিভাজনের সীমারেখা ছাড়িয়ে, কাঁটাতার পেরিয়ে ওপারেও লালন খুঁজে ফিরছেন মনের মানুষ। সুমনকুমার দাশ (লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক) লালন সম্পর্কে লিখেছেন: ‘বাউলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মানুষবন্দনার জয়গান। মানুষবন্দনার পাশাপাশি দেহতত্ত্ব ও সাধনসংক্রান্ত নিগৃঢ় তত্ত্বগুলোও তাঁদের গানে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে লালনের পদাবলি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে।’ লেখক ও গবেষক সিরাজ প্রামাণিক (আইনগ্রন্থ প্রণেতা, সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’) লালন সম্পর্কে বলেছেন মানবধর্মের কথা, অমৃতের সন্ধান করেছেন আত্মজ্ঞানের মধ্য দিয়ে। আজ সেই অমৃতের সন্ধানেই সাঁইজির ধামে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী, অনুসারীরা ছুটে আসেন। বাঙালির এক শ্রেষ্ঠ সন্তান লালন আজ বিশ^সমাজের মহান আদর্শ, মানবতাবাদী চিন্তার ক্ষেত্রে লালন আজ মহান আইকন।

‘মহাভারতের সমাজ’ নিয়ে সুখময় শাস্ত্রীর যে অভিধানিক অবদান তার নেপথ্যে তো ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই। একারণেই এ প্রসঙ্গের অবতারণা যে রবীন্দ্রনাথ লালনের গানের খাতা সংগ্রহ করেছিলেন, ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লালনের গান প্রকাশ করেছিলেন, হিবার্ট বক্তৃতায় লালনকে উল্লেখ ও মূল্যায়ন করেছিলেন। এতদ্বিধ ঋণ স্বীকার ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেও বলতে হয় তার প্রযত্ন ও দিকনির্দেশনায় লালনকে চেনার জন্য যদি কেউ নিবিষ্ট হতেন, তা’হলে হয়তো আজকে আর লালন ততোটা অচেনা থাকতো না, যতোটা রয়েছে আজও। ফকির লালন শাহ্ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালীন তার বিচিত্রতা লক্ষণীয়! বিশিষ্ট লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী ‘লালন সাঁই ও উত্তরসূরি’ গ্রন্থে (‘মহাত্মা লালন ফকীর’ পাক্ষিক ‘হিতকরী’, ১ম ভাগ, ১৩শ সংখ্যা, ১৫ কার্তিক ১২৯৭, ৩১ অক্টোবর ১৮৯০) উল্লেখ কাহিনির বর্ণনায় নিবন্ধকার রাইচরণ দাসের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন: 'ইনি ১১৬ বৎসর বয়সে গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার প্রাতে মানবলীলা সম্বরণ করিয়াছেন।...মরণের পূর্ব্বে রাত্রিতেও প্রায় সমস্ত সময় গান করিয়া রাত্রি ৫টার সময় শিষ্যগণকে বলেন ‘আমি চলিলাম’।...লালনভক্ত অনুসারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার গান ও দর্শন সমগ্র বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলার বাউলের প্রাণপুরুষ মহাত্মা লালন নিয়ে গবেষণা থেমে নেই। যুগে যুগে লালন গবেষণার পরিধি কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায় লালন একাডেমি থেকে বের হয়ে তামাম পৃথিবীর লালন বিশেষজ্ঞ ও আপামর মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত