বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিতে হবে
বাজেট ভাবনা নিয়ে বলতে গেলে এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই আসবে। এবারের বাজেট অপেক্ষাকৃত সম্প্রসারণমূলক হওয়া জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অধিকহারে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আবার শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। তা যেন সুষ্ঠুভাবে ব্যয় হয়, সেদিকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে।
করোনাকালে আমরা প্রতিটি খাতেই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। বিশেষ করে অর্থনীতির উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার ফলশ্রুতিতে একটির পর একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তেল সংকট একটি উদাহরণ। আগামীতে খাদ্য সংকট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়গুলো চক্রাকারভাবেই তৈরি হচ্ছে অথবা তৈরি করা হচ্ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্বাস্থখাতেও একই অবস্থা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এসব খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দিতে হবে। বরাদ্দ যেন সুস্থভাবে ব্যয় হয় সেদিকটি নিশ্চিত করতে হবে।
সামজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এর আওতায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেদিকেও আমাদের সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। বাজেট বরাদ্দ এবং এর অপব্যবহার নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে, অনেক বিতর্ক আছে। সেগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।
এবার বাজেটের আকার স্বভাবতই বাড়বে। ঘাটতির মাত্রা আমাদের দেশে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ যেভাবে রাখা হয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব যেভাবে আশা করা হচ্ছে ৫ থেকে ৬ শতাংশ রাখা হয়, সেটিও গ্রহণযোগ্য। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের সরকারি বিনিয়োগ যেটি বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয় সেখান থেকে আমাদের যে চিরকালের সমস্যা,কোন বছরই পুরোপুরি ব্যয় করা সম্ভব হয় না। যতটুকুই ব্যয় হয়, অর্থবছরের শেষের দিকে তাড়াহুড়ো করে ব্যয় হয়। কাজ না করেই সেটা লেখা হয়। যথাযথভাবে কাজ হয় না। এসব সমস্যা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
তিনটি ক্ষেত্রের উপর গুরুত্বারোপ করতে বলব বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুষ্ঠুভাবে যেন বরাদ্দ ব্যবহার করা হয় সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। বলা হয়,বাংলাদেশ অনেকটাই সাহসিকতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে। আমি নিজেও কথাটির সঙ্গে একমত। তবে করোনা মহামারি তার যে ক্ষতিকর প্রভাব রেখে গেছে সেটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। শিক্ষাব্যবস্থা বা স্বাস্থব্যবস্থা সব ক্ষেত্রেই করোনা একটি নেতিবাচক প্রভাব রেখে গেছে। সে ব্যাপারে সরকারকে এখন থেকেই সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে এবং কিছু সুনির্দিষ্ট এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এসব বিপর্যয়ে দেশের ছাত্রছাত্রীরা এভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। আশা করি সরকার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিষয়গুলোতে নজরদারি বাড়াবে।
আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা খুব একটা যেহেতু ভালো নয়। সন্তোষজনক নয়। সে ক্ষেত্রে সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলো আরও বেশি সচেতন হবে এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করে যাবে–এটুকুই আশাবাদ এবং এবারের বাজেট সত্যিকারভাবেই ফলপ্রসূ হোক জনকল্যামুখী হোক সেটিই কাম্য।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
এসএ/