রোকেয়া হলে ৭মার্চ ভবন নির্মাণ
নারী শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক ভূমিকার দালিলিক প্রমাণ
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭মার্চ ভাষণ নিপীড়িত, শোষিত প্রান্তিক বাঙালী জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার একটি সমাজতাত্ত্বিক ডিসকোর্স। ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও শোষণের ঐতিহাসিক দলিলপত্র। কন্ঠস্বরহীন নিম্নবর্গ বাঙালি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকামনা বাস্তবায়নের রাজনৈতিক মেনিফেস্টো। ৭ই মার্চের ভাষণ তাই গণঅভ্যুত্থান এবং জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির একটি পতাকা, মানচিত্র এবং ঠিকানা পাবার সংগ্রামের গৌরব গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ
ঔপনিবেশবাদ, বর্ণবৈষ্যম্যবাদ, জাতি নিধনবাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ও মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে তৈরি করেছে একটি নতুন প্যারাডাইম। এটি তাই এখন আর সময়ের পরিসীমায় গণ্ডিবদ্ধ নেই। বরং তার এ ভাষণ হয়েছে কালোত্তীর্ন এবং সকল জাতিগোষ্ঠীর জন্য প্রেরণাদায়ী। জাতি, বর্ণ, গোষ্ঠী ভেদে তার এ ভাষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম, বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতা ও মুক্তির সংগ্রামের এক অনন্যসাধারণ ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে পেয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি।
সারাবিশ্বে মানবজাতির অমূল্য সম্পদ হিসাবে হয়েছে গৃহীত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীগণের রয়েছে ঐতিহাসিক সংগ্রামী ভূমিকা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭মার্চ ভাষণ স্মরণে রোকেয়া হলের পরিত্যক্ত অনার্স ভবন তথা মল্লিকা ভবনটি ভেঙ্গে নির্মিত হয় ১১তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ৭মার্চ ভবনটি। এ ভবন নির্মাণ মূলত: বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে রোকেয়া হলের নারী শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ভূমিকার দালিলিক স্বীকৃতির প্রমাণ।
২০১৮ সালের ০১ সেপ্টেম্বর তারিখটি তাই রোকেয়া হল পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এ দিনটিতে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে নির্মিত ৭মার্চ ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও ২০১৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও, এ ভবনটির উদ্বোধন কাজটি অসম্পূর্ন রয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে নবনির্মিত হওয়া সত্ত্বেও ভবনটি অব্যবহার্য অবস্থায় থেকে যায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে রোকেয়া হলে প্রাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ ভবনটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ছাত্রীদের দাবি ও আকাঙ্খা পূরণ করা আমার জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বস্তুতঃ আমাদের সকলেরই আকাঙ্খা ছিল রোকেয়া হলের প্রাক্তন ছাত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক এ ভবনটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল মনস্তাত্ত্বিক ও প্রশাসনিক জটিলতা। ৭মার্চ যেহেতু একটি পূর্নাঙ্গ হল নয়, ভবন, এমন একটি ক্ষুদ্র পরিসরের আয়োজনে সরকার প্রধানের আগমন বিষয়ে অনেকে আশংকা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ৭মার্চ ভবন উদ্বোধনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘটবে রোকেয়া হল সীমানায়। মূলত এর পিছনে দুটি কারণ ছিল (১) ভবনটি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বখ্যাত ৭মার্চ ভাষণের স্মরণে নির্মিত (২) রোকেয়া হলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসাবে এ হলের প্রতি রয়েছে তার বিশেষ আবেগ ও ভালোবাসা।
তবে আরও একটি বিশেষ কারণ ছিল বলে আমার বিশ্বাস। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এ হলে প্রথমবারের মত শেখ কামাল স্মৃতি বিতর্ক ও সুলতানা কামাল স্মৃতি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মাশুরা হোসেন আপা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাষ্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য এবং শেখ কামাল ও সুলতানা কামালের সহপাঠী বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। ৭মার্চ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাশুরা আপার সাথে প্রধানমন্ত্রীর ট্রাষ্টি বোর্ডের একটি সভা ছিল। আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন মাশুরা আপার কাছে আমি আমার আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করি এবং একটি ভিজিটিং কার্ডের পিছনে আমার আকাঙ্খার কথা লিখে তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিতে বলি। মূলতঃ ১২ আগষ্টের এ অনুষ্ঠানের পর ১৬ আগষ্ট আমরা সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৭মার্চ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সম্মতি পত্রটি পেয়ে যাই।
সুতরাং এ বিষয়টি আমাকে যেমন আনন্দিত করেছিল তেমনি করেছিল আবেগআপ্লূত। এ লেখাটিতে শেখ কামাল স্মৃতি বিতর্ক ও সুলতানা কামাল স্মৃতি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। ২০০৯ সালে সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর হিসাবে আমি প্রথমবারের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল স্মরণে একটি স্মৃতি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। তবে পরবর্তিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খানের অসহযোগিতার কারণে সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং সোসাইটির পক্ষ থেকে আর কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই রোকেয়া হলে প্রাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের পর থেকেই পুনরায় আমি শেখ কামাল ও সুলতানা কামাল স্মরণে হলে বিতর্ক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করি।
শেখ কামাল শুধু মাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জৈষ্ঠ্য পুত্র সন্তানই ছিলেননা, তিনি ছিলেন একাধারে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব, ক্রীড়া সংগঠক এবং আধুনিক রুচিশীল তারুণ্যের প্রতীক। তিনি আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও স্পন্দন শিল্পিগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশে পপ সংগিত জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে একজন মূখ্যব্যক্তি। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণতম শিক্ষক অধ্যাপক সাদ্উদ্দীন স্যারের ভাষ্য অনুযায়ী শেখ কামাল ছিলেন একজন ভদ্র, নম্র ও শান্ত স্বভাবের তরুন যিনি কখনোই পিতৃপরিচয় নিয়ে কোনো অহমিকাবোধ বা দাম্ভিকতার পরিচয় দেননি। বরং তিনি নিয়মিত ভাবে সাদ্উদ্দীন স্যারের ক্লাশ করেছেন এবং স্যারের লেকচার নোট করেছেন অত্যন্ত গোছালোভাবে। কার্ল মার্কস, ম্যাস্ক ওয়েবারের তাত্ত্বিক ধারণাগুলো তার নোটখাতাতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখিতভাবে পাওয়া যেত। শেখ কামাল যেমন ছায়ানটের সদস্য হিসাবে সেতার বাজানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তেমনি তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
শুধুমাত্র ফুটবল নয়, শেখ কামাল সম্পৃক্ত ছিলেন ক্রিকেট খেলার সাথেও এবং ‘‘আযাদ বয়েজ’’ ক্লাবের হয়ে প্রথম ডিভিশনে নিয়মিতভাবে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করে। ক্রীড়া জগতের প্রতি তিনি তার ভালোবাসাকে আবারও প্রমাণ করেছিলেন। বাস্কেটবল, ভলিবল খেলার সাথেও তিনি সমভাবে যুক্ত ছিলেন। বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী শেখ কামাল মুক্তি বাহিনী গেরিলা যোদ্ধাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তিনি কমিশন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ক্রিকেট খেলায়ই শুধুমাত্র অংশগ্রহণ করেননি তিনি এ-বিভাগের খেলোয়ারদের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও অত্যন্ত বন্ধুবৎসল শেখ কামালের এ গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন তারই সহপাঠি মাশুরা হোসেন।
জাতির জনকের পুত্র সন্তান হওয়া সত্ত্বেও আর দশটা সাধারণ শিক্ষার্থীর মতই ছিল তার চাল-চলন, আচার আচারণ। দেশের রাষ্ট্রপতির সন্তান হিসাবে যেমন তিনি কোন বাড়াবাড়ি করেননি তেমনি বিভাগ বা শিক্ষকমণ্ডলীর কাছ থেকেও কোনো বাড়তি সুবিধা প্রাপ্তির কোন অপচেষ্টা করেননি। সুলতানা কামাল ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াজগতের নক্ষত্র। প্রথম নারী ব্লু । তৎকালীন পাকিস্তানে তিনি ‘‘পূর্ব পাকিস্তানের স্বর্ণালী কন্যা (Golden Girl)’’ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য। সুলতানা কামাল ছিলেন শেখ কামালের সহপাঠী এবং তৎকালীন সময়ের একজন স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ। আধুনিক, স্মার্ট, ক্রীড়া অনুরাগী এবং উন্নত সাংস্কৃতিক রুচিবোধ সম্পন্ন এ দুজন শিক্ষার্থীকে আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের জন্যেই রোকেয়া হলে তাদের স্মরণে বিতর্ক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে।
মূলত: বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। বাংলাদেশ নামক একটি আধুনিক জাতি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন অনশন ও আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারিদের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়েছিলেন বহিষ্কৃত।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ভাষা ভিত্তিক অসম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনাবোধের স্ফূরণ ঘটে, সে চেতনার আলোকেই বঙ্গবন্ধু- শত সহস্র বছরের নিপীড়িত, নির্যাতিত, নিম্নবর্গের নৃতাত্বিক বাঙালি গোষ্ঠীকে একটি জাতিরাষ্ট্রে পরিণত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। বস্তুতঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭মার্চ ভাষণ স্মরণে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে ৭মার্চ ভবনটির নির্মাণ তাই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ছাত্রীদের আবাসন সংকটের সমাধান হয়েছে তেমনি একইভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের অবদান। নীরবতার সংস্কৃতি ভেঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা তথা বাঙ্গালি নারী সমাজ যে মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও ভূমিকা রেখেছে, ৭মার্চ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাসই কালের সাক্ষী হয়ে রইলো। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন, ছাত্রীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও সশস্ত্র বিদ্রোহ তৈরিসহ এ হলের অনেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অনেক ছাত্রী সাংস্কৃতিক কর্মী ও শব্দ সৈনিক হিসাবেও ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ২০০২ সালে পুলিশ বিরোধী নির্যাতন ও ২০০৭-২০০৮ এ তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে হলের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চ ভাষণের স্মরণে নির্মিত এ ভবনটি তাই একদিকে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক, তেমনি অন্যদিকে শিক্ষা ক্ষেত্রে গুনগত পরিবর্তন আনয়নে একটি নূতন মাত্রার সংযোজন। অত্যাধুনিক এ ভবনটির সাথে রয়েছে ৫তলা বিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ব্লক, সার্ভিস ব্লক, ১১তলা বিশিষ্ট আবাসিক শিক্ষক ভবন ও একটি যাদুঘর। ৭মার্চ ভবনস্থ যাদুঘরে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭মার্চ ভাষণ, বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রাম, দুর্লভ ছবি এবং মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ ও অবদান সংক্রান্ত তথ্যাবলী। বাংলদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রীদের আবাসন সংকট লাঘবে এ ভবনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সকলে যেমন আশা করেছিলেন, তেমনভাবেই এ ভবনটি সে আশা পূরণ করে চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রোকেয়া হলের সাথে শেখ হাসিনার সম্পর্কও অত্যন্ত নিবিড়। তিনি যেমন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন, তেমনি ছিলেন রোকেয়া হলেরও ছাত্রী। আমরা সকলেই জানি যে, বর্তমান সরকার শিক্ষা-বান্ধব সরকার। নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নারী উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে। বস্তুতঃ নারীর ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ একটি রোল মডেল। সকল ধরনের সামাজিক বাঁধা, কুসংস্কার, গোড়ামিকে ডিঙ্গিয়ে আজকে বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ তাই উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে ধাবমান। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে, পেয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার স্বীকৃতি।
ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ সামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ অগ্রযাত্রা আরো বেগমান হবে যখন আগামীর টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গসমতা নিশ্চিত হবে জাতি, ধর্ম, বর্ণভেদে সকল শ্রেণীর নারীর জন্য, প্রণীত হবে সমাজ উন্নয়নের নতুন ডিকোর্স নারীর মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে।
লেখক: বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত (২০২১), অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, প্রভোস্ট, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়