উত্তরা দুর্ঘটনা: ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি দেখছে তদন্ত কমিটি
উত্তরার দুর্ঘটনা ঘটেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরের পর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব তদন্ত প্রতিবেদনটির বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিকুল ইসলাম।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকালে উত্তরার জসিম উদ্দিন সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার উপরে উঠানোর সময় প্রাইভেট কারের উপর পড়লে কারটি চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা আরোহীদের পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরপরই বিআরটি কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং রাতের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
তদন্ত কমিটির একাধিক সূত্রে এবং বিআরটি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কমিটি যে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে এই দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির চরম গাফিলতি ও অবহেলাকে দায়ী করেছে। এই ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করতে কমপক্ষে আরও দুই দিন সময় লাগবে। যেহেতু বিআরটি কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন চেয়েছিল তাই তদন্ত কমিটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এবং স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এখন কমিটি বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি; নিরাপত্তা ব্যবস্থা; ক্রেনের ক্যাপাসিটি; ক্রেন চালকের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, চালকের লাইসেন্স আছে কিনা; ট্রেন যেখানে ফিট করা হয়েছিল সে স্থানটি যথাযথ ছিল কিনা এবং সঠিকভাবে ফিট করা হয়েছিল কিনা এই সব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
কমিটি সূত্রে আরও জানা গেছে, নির্মাণ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল একেবারেই দুর্বল। এর জন্য নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তারা এই দায় এড়াতে পারে না। একইসঙ্গে বিআরটি কর্তৃপক্ষের তদারকি ব্যবস্থাও দুর্বল। তারাও এ দায় এড়াতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য যেসব সেগমেন্ট (বক্স গার্ডার) তৈরি করা হয়েছে সেগুলো রাস্তার মধ্যেই রাখা হয়েছে। যা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। নির্মাণ এলাকায় সেগমেন্ট ইয়ার্ড তৈরি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এজন্য বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি দায়ী। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটি এই বিষয়টিও তুলে ধরবে।
এদিকে বিআরটি প্রকল্প একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনে ক্রেন চালকের অদক্ষতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও ক্রেন চালককে পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পরপরই চালক পালিয়ে যান।
বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা প্রকাশ’কে জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন তাদের হাতে এসেছে। দুপুরের পর সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরি প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবেন।
এদিকে উত্তরা দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় সোমবার রাতেই একটি মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্না আক্তারের ভাই আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। এতে ক্রেনের চালকসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসিন জানিয়েছেন, ‘উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত দুই বোনের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অবহেলাজনিতভাবে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, সিজিজিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
এনএইচবি/আরএ/