যে কারণে কেনা যাচ্ছে না রাশিয়ার ‘সস্তার তেল’
সস্তায় বাংলাদেশকে জ্বালানি তেল দিতে চায় রাশিয়া। দেশটি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও দিয়েছে বাংলাদেশকে। রাশিয়ার তেল কীভাবে নেওয়া যায় সে সম্পর্কে নয়াদিল্লির কারছে ‘বুদ্ধি’ও চেয়েছিল ঢাকা।
বর্তমানে তেল-গ্যাসের সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের শিডিউল তৈরি করতে যাতে মানুষের কষ্ট কম হয়। তার মানে লোডশেডিং আপাতত বন্ধ হচ্ছে না।
এই সংকট মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই সংকটকালে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেন নিচ্ছে না বাংলাদেশ।
এক্ষেত্রে মার্কিন চাপের কথা বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাশিয়া থেকে তেল কিনলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হবে। এ কারণেই মূলত রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ সস্তায় পেলেও তেল নিচ্ছে না।
এই বিষয়টি নিয়েই সম্প্রতি ভারত সফর শেষে দেশে ফিরলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের কাছে বুদ্ধি চেয়েছি যে কীভাবে আমরা রাশিয়ার তেল নিতে পারি।
ভারতের বিখ্যাত আউটলুক পত্রিকার সম্পাদক প্রণয় শর্মা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে এ সম্পর্কে বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আবার রাশিয়াকেও ভারতের ত্যাগ করা সম্ভব নয়। এটা যুক্তরাষ্ট্রও বোঝে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও এখন ভালো সম্পর্ক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ক্ষেত্রে যে নীতি নিয়েছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই নীতি মনে চলবে না। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বাংলাদেশ নিলেও লাভ নাই। কারণ এই তেল পরিশোধন করার মতো রিফাইনারি বাংলাদেশে নাই। বাংলাদেশ মূলত তেল কেনে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, রাশিয়া দূরের দেশ। তাই খরচ বেশি পড়বে সেজন্য স্বাভাবিক সময়েও রাশিয়া থেকে তেল কিনেনি বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের তেল রাশিয়ার তেলের মতো নয়। মধ্যপ্রাচ্যের তেল পরিশোধন যত সহজ রাশিয়ার তেল পরিশোধন বেশ জটিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে কম দামে তেল নেওয়ার জন্য রিফাইনারি স্থাপন করতেও দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগবে। কিন্তু রাশিয়া যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সস্তায় তেল দেওয়া বন্ধ করে দেয়? এ কারণে রিফাইনারি স্থাপন করার বিষয়টিও সরকারের চিন্তায় নেই।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমাদের দেশের পরিশোধনাগারে ব্যবহারের উপযোগী নয়। তাই রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা যাচ্ছে না।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে তেল কেনার ব্যাপারে ভারতের ‘বুদ্ধি’ চেয়েছেন সে প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উনি আসলে পরিশোধিত তেল কেনার কথা বলেছেন।
আরইউ/এনএইচবি/এসআইএইচ