রোজায় বেড়েছে আনারসের চাহিদা, দ্রুত পাকাতে রাসায়নিক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

টাঙ্গাইলের মধুপুরে পাহাড়ি অঞ্চলের নানা জাতের আনারস চাষ ও রাসায়নিক ব্যবহার। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
পবিত্র মাহে রমজানে টাঙ্গাইলের মধুপুরের ‘জিআই’ পণ্য আনারসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে হাট-বাজারে যেসব আনারস পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশই জলডুগি জাতের। তবে চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেলেও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে আনারস বিক্রি করছেন, এমন অভিযোগ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
অপরদিকে, দ্রুত লাভের আশায় কৃষকরা ব্যাপক হারে রাসায়নিক ব্যবহার করছেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে একদিকে যেমন আনারস দ্রুত বড় ও পাকছে, অন্যদিকে এর স্বাদ, গুণগতমান এবং নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন বাগানে প্রানোফিক্স, সুপারফিক্স, রাইপেন, ইথোফন, জিব্রেলিক এসিডসহ নানা রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ৬০ পাতা হওয়ার আগেই কৃত্রিমভাবে ফল ধরানোর জন্য রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এক চাষি আক্কাস আলী বলেন, “প্রাকৃতিকভাবে আনারস একসঙ্গে পাকে না, কিন্তু রাসায়নিক ব্যবহার করলে সব আনারস একসঙ্গে পেকে যায়। এ কারণে শিয়াল, বানর, টগা, কটাবানরও এখন আর আনারস খায় না। মানুষও খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে, তবে দেশের বাজারে ঠিকই বিক্রি হচ্ছে।”

একজন ব্যবসায়ী আব্দুল বারেক জানান, “রমজানের আগে বাগান কিনে নেই। কিন্তু ক্রেতারা বড় ও উজ্জ্বল রঙের আনারস চান, তাই রাসায়নিক ব্যবহার করতে বাধ্য হই। এতে লাভও বেশি হয়।”
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ তালুকদার বলেন, “এভাবে রাসায়নিক ব্যবহারে মানবদেহে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তাই অসময়ে রাসায়নিক মিশ্রিত আনারস না খাওয়াই ভালো।”
তিনি আরও বলেন, “টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী আনারস ‘জিআই’ পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কৃষি বিভাগকে আরও কঠোর মনিটরিং করতে হবে, যাতে চাষিরা রাসায়নিকের অপব্যবহার না করেন।”
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রাকিব আল রানা জানান, “মধুপুরের আনারস সুস্বাদু ও রসালো। কিন্তু অনেকে দ্রুত পাকানোর জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করছেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আমরা কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধের দোকানও মনিটরিং করছি।”

রমজানে আনারসের চাহিদা বাড়লেও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে এর গুণগতমান ও নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি মনিটরিং বৃদ্ধি এবং চাষিদের সচেতনতা বাড়ানো না গেলে আনারসের ঐতিহ্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
