প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে নালিশের বলি শিক্ষক উৎপল
রাজধানীর অদূরে সাভারের হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু তার শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, রিমা নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল তার। ক্যাম্পাসে তাদের এ নিয়ে শিক্ষক উৎপল বকাঝকা করতেন। ঘটনার দু-তিনদিন আগে স্কুলের বারান্দায় জিতু ও রিমা কেক খাচ্ছিলেন। তখন শিক্ষক উৎপল তা দেখে তাদের বকাঝকা করেন।
এই নিয়ে জিতুর সঙ্গে উৎপলের কথাকাটাকাটিও হয়। জিতু ও রিমার বাড়িতে শিক্ষক উৎপল নালিশ দেন। ফলে রিমার পরিবার থেকে তাকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাতে ক্ষিপ্ত হন জিতু।
আদালতে জিতু বলেন, ঘটনার দিন বাড়ি থেকে জিতু ক্রিকেট খেলার দুটি স্টাম্প নিয়ে স্কুলে আসেন এবং সুযোগ পেয়ে শিক্ষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এ সময় শরীফ নামে এক শিক্ষক জিতুকে ধরে ফেলেন। শরীফ আহত উৎপলকে মাটি থেকে ওঠাতে গেলে জিতু সেখান থেকে চলে যায়।
পরে জিতু মানিকগঞ্জে পালিয়ে যান। এরপর পুলিশের তৎপরতা দেখে তিনি সেখান থেকে চলে যান পাবনায়। সেখানেও পুলিশের তৎপরতা দেখে আশ্রয় নেন গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাসায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। জবানবন্দিতে ঘটনার জন্য অনুতাপও প্রকাশ করেন জিতু।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার তাকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) তাকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে পাঠানো হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক। শুনানি শেষে ঢাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগের দিন বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আশরাফুল আহসান জিতুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তা ছাড়া ২৮ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরের দিন ২৯ জুন ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের আদালত জিতুর বাবা উজ্জ্বলের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত মঙ্গলবার (৫ জুলাই) পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এ সময় তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করলে ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আশরাফুজ্জামান জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
আদালতে উজ্জ্বল বলেন, জিতুর বিষয়ে শিক্ষক উৎপল আমার কাছে নালিশ করেছিলেন। আমি শিক্ষক উৎপলকে বলেছিলাম বিষয়টি দেখবো। ঘটনার দিন আমি স্কুলে গিয়ে বলেছিলাম থানা পুলিশ না করতে। পরে আমি জিতুকে আমার চান্দুরার বাড়িতে রাখি। পুলিশ অভিযান চালালে আমি তাকে পাবনা পাঠিয়ে দেই। আমি কুষ্টিয়ায় মুজাহিদের বাড়িতে চলে যাই। পুলিশ আমাকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে। জিতুই শিক্ষক উৎপলকে হত্যা করে।
উল্লেখ্য গত ২৫ জুন স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে গুরুতর আহত করেন দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। পরে আহতাবস্থায় তাকে স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৭ জুন) ভোরে মৃত্যু হয় শিক্ষক উৎপল কুমারের।
এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় ওই ছাত্রের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এমএ/এমএমএ/