পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে স্বর্ণ দুয়ার উন্মোচন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বর্ণ দুয়ার উন্মোচন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণ অঞ্চলের যোগাযোগ নয়, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যাতে আরও উন্নত হতে পারে তার স্বর্ণ দুয়ার উন্মোচন হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বাজেট পাস হয় এবং স্পিকারের বক্তব্যের পর অধিবেশনের সমাপনী ঘোষণা করা হয়।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশদ বর্ণনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের দিকে আমাদের তখনকার অর্থনীতির অবস্থা এত গতিশীল ছিল না, শক্ত ছিল না। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে আমরা অনেক উন্নত হয়েছি। অনেক বেশি লাভবান হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও পরিবর্তন হবে বলে বিশ্বাস করি।
পদ্মা সেতুর ব্যয় ২০ বছরেই উঠে আসবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে টোল আদায়ের যে প্রজেকশন ছিল সে অনুসারে ২৫ থেকে ২৬ বছরে সেতুর খরচ উঠে আসার প্রস্তাব আসছিল। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু কর্তৃপক্ষ অর্থ বিভাগের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে। চুক্তি সম্পন্ন করে ১ শতাংশ হারে সুদে ২৫ বছরের সেতু খরচ সরকারকে ফেরত দেবে। সেই চুক্তি করেই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে এ টাকা ঋণ নিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আমাদের নিজের টাকা, বাংলাদেশের টাকা। এই সেতুতে টাকা আরও অনেক আগে তুলে ফেলতে পারব। এই সেতুর যোগাযোগ আরও বিস্তৃত হবে। ১৮-২০ বছরের মধ্যে এই টাকা উঠে আসবে। ’
সংসদ নেতা বলেন, পদ্মা সেতুর সফল সমাপ্তিতে আমাদের বেশ কিছু প্রাপ্তি যোগ হবে। জাতিকে মত পার্থক্য ভুলে একতাবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে। নিজেদের আত্মসম্মান বোধে সচেতন করে তুলবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা ও চুক্তি সম্পাদনে স্বকীয়তা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে যেকোনো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে আমাদের ব্যবস্থাগত ত্রুটি অভিজ্ঞতার ঘাটতিকে পূরণ করবে।
তিনি বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়নে যে মিসিং লিংক ছিল সেটা পদ্মা সেতু। সেই মিসিং লিংক পূরণ করে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। একটা অবকাঠামো এত বেশি ফরওয়ার্ড লিংকেজ সত্যি বিষ্ময়কর। এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে বাস্তবায়ন যখন হবে পদ্মা সেতু একমাত্র মিসিং লিংক ছিল। এই সেতু হাইওয়ে ও রেল লিংকের ক্ষেত্রে পূর্ব দিকে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সংযুক্ত হওয়া যাবে। অন্য দিকে ভারত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্র। আর কোনো বাধা থাকবে না। এই যোগযোগ ব্যবস্থা দেশে আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়বে। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বড় বাধা ছিল প্রমত্তা পদ্মা। কৃষক ব্যবসায়ী কেউ নিজ নিজ পণ্য বাজারজাতকরণ বা সঠিক মূল্য পেত না। পদ্মা সেতু সেই অবস্থার আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন উচ্চতায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছে এ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে। আগে যারা অবহেলার চোখে দেখতে এখন দেখে না, দেখবে না। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাব।
বন্যাদুর্গত সিলেট অঞ্চলে ত্রাণ ও পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা আসে ভাদ্র মাসের দিকে। সরকার সেই বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এই বন্যাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব। পদ্মা সেতু এই বন্যা মোকাবিলায় সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সিলেট বিভাগ ও নেত্রকোনা জেলায় বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুনর্বাসন কাজও চলছে। লঞ্চ ও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডসহ সব মোকাবিলা করেছে সরকার। এসব ঘটনার তদন্তও চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসএম/এসএন