রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব-৪৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান

রিউ বাব আজুন শেষ হয়েছে একটা গোলাকার চত্বরে এসে। চত্বরের বামপাশে লিসে এবং তার ডানমুখে একটা ব্যারাক। আরব সিটির খাড়া আর্দ্র রাস্তাগুলো লিসের পেছন থেকেই ওপরের দিকে উঠে গেছে। সমুদ্রের বিপরীত দিকে ব্যারাকগুলোর মুখ। লিসের পেছন পাশে মারেঙ্গো গার্ডেনস। আর ব্যারাকগুলোর পেছনে দারিদ্রপীড়িত আধা স্প্যানিস বাব-এল-ওয়েদ এলাকা। সোয়া সাতটার কয়েক মিনিট পরে, দ্রুত গতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার পর পিয়েরে এবং জ্যাক বিশাল দরজার পাশে দ্বাররক্ষীর ছোট প্রবেশ পথ দিয়ে বাচ্চাদের বিশাল ভিড় ঠেলে প্রবেশ করত। এরপর তারা প্রধান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকত। দুপাশে অনার রোল লাগানো। তখনও তারা পূর্ণ গতিতেই উঠতে থাকত তাদের প্রধান তলায়। ডান দিক থেকে ওপরের তলাগুলোতে যাওয়ার সিঁড়ি উঠে গেছে। একটা কাঁচঘেরা খিলান মূল উঠোন থেকে ওই তলাটা বিচ্ছিন্ন করেছে। একটা থামের পেছনে দাঁড়িয়ে গণ্ডার মশাই দেরিতে আসাদের দেখতেন। কোঁকড়ানো গোঁফঅলা প্রধান তত্ত্বাবধায়ককে তারা ছদ্মনামে গণ্ডার বলত। ওখানে পৌঁছনোর পর শুরু হতো তাদের অন্য জীবন।

পিয়েরে এবং জ্যাক বৃত্তি পেয়েছিল। বৃত্তির একটা শর্ত হিসেবে তাদের পরিবারের কথা বিবেচনায় এনে তাদের থাকা খাওয়ার অর্ধেক স্কুল থেকে বহন করার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তারা সারাদিন স্কুলেই কাটাত এবং স্কুলের ডাইনিংয়ে দুপুরের খাবার খেত। ক্লাস শুরু হতো দিন বুঝে: কোনো দিন আটটায়, কোনো দিন নটায়। তবে যারা স্কুল-বোর্ডিংয়ে থাকত তাদের সকালের নাস্তা দেয়া হতো সোয়া সাতটায়। পিয়েরে এবং জ্যাকের মতো হাফবোর্ডারও সকালের নাস্তা করতে পারত স্কুলে। প্রাপ্য সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে পারে তেমন ধারণা তাদের পরিবারের কারো চিন্তায় আসেনি। সুতরাং তারা স্কুলে পৌঁছে যেত সোয়া সাতটার মধ্যেই। তখন স্কুলের বোর্ডিংয়ে থাকা ছেলেরা ঢুলুঢুলু চোখে দস্তা মোড়ানো ডাইনিং টেবিলে বসতে শুরু করেছে মাত্র। সামনে বড় বড় বাটি আর বড় ঝুড়িতে শুকনো রুটির পুরু সব খণ্ড। তাদের সামনে মোটা কাপড়ে শরীর জড়ানো ওয়েটাররা সারি সারি বসা ছাত্রদের মাঝখান দিয়ে বাঁকানো নলঅলা কফির পাত্র হাতে তাদের বাটিতে ফুটন্ত কফি ঢালতে ঢালতে যেত। তরলের মধ্যে কফির চেয়ে ভাজা সব্জির গুঁড়োর পরিমাণই বেশি থাকত। ওয়েটারদের বেশিরভাগই ছিল আরব। নিজেদের প্রাপ্য ওই সুবিধাটুকু অর্জনের পর তারা পনের মিনিট পরে পড়াশোনার হলে যেতে পারত। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করত বোর্ডিংয়েরই একজন ছাত্র। ক্লাস শুরুর আগে ওখানে বসে তারা বড়ির কাজগুলো আরো ভালো করে দেখে নিতে পারত।

পাড়ার স্কুল থেকে লিসের বড় পার্থক্য ছিল শিক্ষকের সংখ্যায়: সেখানে এম বার্নার্ড একাই সবকিছু জানতেন এবং একাই সব পড়াতেন তাঁর নিজের মতো করে। আর এখানে বিষয় অনুসারে শিক্ষক বদল হতো এবং পড়ানোর পদ্ধতিও বদলে যেত শিক্ষক বদলের সঙ্গে। কোনো ছাত্র কোনো শিক্ষককে পছন্দ করতে পারত, নাও করতে পারত। এদিক থেকে পাড়ার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন একেবারে বাবার মতো: তিনি তার ভূমিকা পুরোপুরি একাই পালন করতেন। ছাত্রের জীবনে অপরিহার্য বিষয়গুলো তিনিই দেখতেন এবং পুরোপুরি একাই দেখতেন। কাজেই তাকে ভালোবাসা কিংবা না বাসার প্রশ্নই ওঠে না। ছাত্র তার ওপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়ার কারণে সাধারণত তাকে ভালোবাসাই স্বাভাবিক। আবার যদি এমন হয় যে, ছাত্র তাকে আংশিক পছন্দ করে কিংবা করে না, তাতেও যেহেতু তার ওপরে ছাত্রের নির্ভরশীলতার প্রসঙ্গ থেকেই যায়, ছাত্রের দিক থেকে তাকে ভালো না বাসার ব্যাপার নয় সেটা। অন্য দিকে লিসের শিক্ষকরা অনেকটা চাচা মামাদের মতো যাদের মধ্যে থেকে বাচ্চারা কাউকে কাউকে পছন্দের হিসেবে বেছে নিতে পারে। কাজেই ছাত্ররা তাদের কাউকে অপছন্দও করতে পারত। তাদের একজন শিক্ষক পদার্থবিজ্ঞান পড়াতেন। পোশাক পরিচ্ছদে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মার্জিত। কথাবার্তায় ছিলেন অত্যন্ত কড়া। কাজেই জ্যাক এবং পিয়েরে তার কথাবার্তা হজম করতে পারত না মোটেই। অবশ্য কয়েক বছরে তাঁর ক্লাস মাত্র কয়েক দিন পেয়েছিল তারা। অন্য শিক্ষকদের চেয়ে বেশি ক্লাস পেয়েছিল তারা সাহিত্যের একজন শিক্ষকের। তাঁকে তাদের বেশ পছন্দও হয়েছিল। জ্যাক এবং পিয়েরে তাঁর নৈকট্যও পেয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাদের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীলতা ছিল না। তিনি তাদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না এবং তারাও শিক্ষকের সম্পর্কে আর কিছু জানত না। ক্লাস শেষে তিনি ঢুকে পড়তেন আরেক জীবনে। সেখানে তাদের কোনো উপস্থিতি কিংবা প্রবেশ ছিল না। তারাও স্কুল শেষে নিজেদের এলাকায় চলে আসত। সেখানে লিসের কোনো শিক্ষকের থাকার কথা নয়। তাদের জগত এতটাই আলাদা যে, কোনো দিন তারা কোনো শিক্ষককে কিংবা কোনো ছাত্রকে দেখেনি তাদের এলাকায়। তাদের নিম্নাঞ্চলের দিকে চলাচল করত ট্রলিবাসগুলোর শুধু লাল গাড়িগুলো (সিএফআরএ)। অন্য দিকে শহরের অভিজাত এবং উচ্চ মহলের দিকে চলত সবুজ গাড়িগুলো (টিএ)। সবুজ গাড়িগুলো যেত লিসে পর্যন্ত। আর লাল গাড়িগুলো দু গভার্নমেন্টে পর্যন্ত। সুতরাং দিনের শেষে পিয়েরে এবং জ্যাক নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করত একেবারে লিসের দরজার সামনে থেকে, কিংবা বড়জোর আরেকটু দূর থেকে। স্কুলের আনন্দমুখর সঙ্গীদের ছেড়ে তারা লাল গাড়িগুলোর দিকে এগিয়ে যেত। ওই গাড়িগুলোই তাদের দারিদ্র পীড়িত এলাকার দিকে যেত। তারা বুঝতে পারত, ওইসব গাড়িতে ওঠার সময়েই কেবল তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যেত। অবশ্য নিজেদের অন্যদের থেকে হীন অবস্থানের মানুষ বলে মনে হতো না। তাদের মনে একটা কথা জাগরুক থাকত-তারা অন্য জায়গা থেকে এসেছে। তার চেয়ে বেশি আর কিছু নয়।

অন্য দিকে স্কুলের সময় এরকম কোনো বৈষম্য ছিল না। একজনের পোশাকের চেয়ে আরেকজনের পোশাক হয়তো একটু আধটু বেশি মার্জিত ছিল। কিন্তু দেখতে সবাই একই রকম। তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল শুধু ক্লাসরুমের বুদ্ধিমত্তায় আর খেলার সময়ের ক্ষিপ্রতায়। ওই দুই ক্ষেত্রের প্রতিযোগিতায় তারা দুজন কখনওই শেষের দিকে ছিল না। পাড়ার স্কুল থেকে যে কঠিন শিক্ষা তারা পেয়েছিল তাতেই তারা প্রথম বছরেই ক্লাসের ওপরের দিকের কয়েকজন ছাত্রের অন্যতম হতে পেরেছিল। তাদের নির্ভুল বানান, তাদের নির্ভরযোগ্য গাণিতিক জ্ঞান, তাদের প্রশিক্ষিত স্মৃতিশক্তি এবং সর্বোপরি পড়াশোনার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিদেনপক্ষে তাদের পড়াশোনার শুরুতে তাদের মধ্যে এরকম বোধ তৈরি করেছিল যে, সব ধরনের জ্ঞানই বড় সম্পদ। হৈ হুল্লোরে স্বভাবের কারণে জ্যাকের নাম বার বার অনার রোলের বাইরে থেকেছে। তার স্বভাব যদি এতটা চঞ্চল না হতো এবং পিয়েরে যদি ল্যাটিনে আরেকটু বেশি গুরুত্ব দিত তাহলে তাদের পূণাঙ্গতা অর্জিত হয়ে যেত। যে কারণেই হোক, শিক্ষকদের কাছ থেকে তারা উৎসাহ পেয়েছে এবং অন্যদের কাছ থেকে তারা সমীহও পেয়েছে। খেলাধুলার কথা বললে ফুটবলের কথাই প্রথমে আসে এবং প্রথম দিনের ক্লাস বিরতির সময়েই জ্যাক তার বাকি বছরগুলোর আনন্দের উৎসটা আবিষ্কার করে ফেলেছে। ডাইনিং হলে দুপুরের খাবারের পর বোর্ডিংবাসী ছাত্র, হাফবোর্ডিং ছাত্র এবং বাইরে থাকা যেসব ছাত্রকে ডিটেনশনে থাকতে হতো তাদের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকত। সেসময় ফুটবল খেলা হতো। ওই এক ঘণ্টার বিরতির পর শেষ পিরিয়ডের ক্লাস শুরু হতো চারটের সময়। এক ঘণ্টার বিরতিতে খাবারের সঙ্গে বিশ্রামেরও সময় পেত তারা। কারণ পরবর্তীতে আবার দুঘণ্টা পড়াশোনা করতে হতো পাঠকক্ষে। সেখানে পরবর্তী দিনের বাড়ির কাজগুলোও করত তারা। জ্যাকের জন্য নাস্তার প্রসঙ্গটা ছিল অপ্রাসঙ্গিক। ফুটবলের নেশায় বুদ হয়ে থাকা জ্যাক সিমেন্ট বাঁধানো উঠোনের দিকে ছুটে বের হয়ে যেত। উঠোনের চারপাশ ছিল মোটা মোটা থামের ওপর দাঁড়ানো খিলান ঢাকা। খিলানের নিচে পায়চারি করতে করতে শান্ত স্বভাবের এবং পড়ুয়া ছাত্ররা একে অন্যের সঙ্গে হালকা আলাপ সালাপ করত। চারপাশে ছিল চার পাঁচটা সবুজ রঙের বেঞ্চ এবং লোহার রেলিং দিয়ে ঠেকানো একটা ডুমুর গাছ। উঠোনের দুপাশে দুই দল দাঁড়াত এবং গোলরক্ষকরা দুপাশের থামগুলো গোলপোস্ট বানিয়ে তার মাঝে দাঁড়িয়ে যেত। একটা রাবার বল মাঝখানে রাখা হতো। বলে প্রথম লাথি মারার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যেত দৌড়াদৌড়ি আর চিৎকার চেঁচামেচি। খেলা চলত কোনো রেফারি ছাড়াই। এই মাঠেই জ্যাক ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রদের সঙ্গে সমকক্ষ হয়ে মিশতে পারত। দুর্বল ছাত্রদের কাছে নিজেকে প্রিয় এবং সম্মানিত করে তুলতেও পারত। দুর্বল ছাত্রদের পড়াশোনার দিক থেকে মন দুর্বল থাকলেও তাগড়া পা আর জোরের ফুসফুসের কারণে তারা ভাগ্যের কাছ থেকে কৃপা পেত। এই খেলার মাঠেই পিয়েরের কাছ থেকে জ্যাকের দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ শরীর থাকলেও পিয়েরে খেলাধুলা করত না। এই পর্যায়ে এসে জ্যাকের চেয়ে তাড়াতাড়ি লম্বা হয়ে গেল সে। শারীরিক গঠন হয়ে গেলো হালকা পলকা। ক্রমেই তার গায়ের রং উজ্জ্বল হতে লাগল যেন স্থানান্তরের বিষয়টা তার ওপরে বেশি কাজ করেনি। জ্যাকের বৃদ্ধি খুব ধীর গতির হওয়ার কারণে তার ছদ্মনাম হয়ে গেল ‘বামন’ এবং ‘ছোট পাছা’। কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সে বরং বলটা দুপায়ের মাঝে রেখে প্রথমে একটা গাছ, পারে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়ার পার হয়ে উন্মাদের মতো দৌড়ত। তখন তার মনে হতো, সে মাঠের রাজা, গোটা পৃথিবীর রাজা। বিরতি শেষের এবং আবার পড়া শুরু হওয়ার ঘণ্টা বাজার সময় মনে হতো, সে আকাশ থেকে পড়ছে। তাড়াহুড়ো করে ঘর্মাক্ত গায়ে হাঁপাতে হাঁপাতে সিমেন্ট বাধানো উঠোনের ওপর পড়ে গিয়ে তার মনে হতো, বিরতির সময়টা এত ছোট! ধীরে ধীরে সে বর্তমানের অবস্থায় ফিরে আসত, অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে যেত এবং শার্টের দুহাতায় মুখের ঘাম মুছত। হঠাৎ করেই মনে পড়ে যেত, জুতার তলার পেরেকের ক্ষয়ে যাওয়ার কথা। স্টাডি হলে ঢোকার আগে পরখ করে দেখত, জুতোর তলার পেরেকটা আগের দিনের চেয়ে বেশি চকচকে হয়ে গেছে কি না। আগের দিনের চেয়ে বেশি ক্ষয়ে গেল কি না খুব স্পষ্ট করে বুঝতে পারত না। সেটাই বরং স্বস্তির ব্যাপার ছিল তার কাছে। কিন্তু কখনও কখনও জুতার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েই যেত: জুতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, ওপরের অংশ ছিঁড়ে যাওয়া, কিংবা গোড়ালির কাছে ছিঁড়ে যাওয়া-এরকম কোনো কিছু ঘটলে বাড়ি যাওয়ার পরে তাকে কী পরিস্থিতির সামনে পড়তে হবে সেটা ভাবতে গেলে নিজের মুখের লালা পেটের ভেতর পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকত না তার। পড়ার সময়টাতে পেটের গোলমাল বেড়ে যেত। মনের ভেতরকার পাপবোধ তাড়ানোর জন্য জ্যাক কষ্ট করে হলেও পড়ার ভেতর মন আটকানোর চেষ্টা করত। কিন্তু পিটুনি খাওয়ার ভয়ের কারণে শত চেষ্টাতেও মনোযোগ আসত না। স্টাডি হলের এই পড়ার সময়টা খুব দীর্ঘ মনে হতো তার। প্রথমত এই পড়া চলত একটানা দুঘণ্টা এবং চলত রাত পর্যন্ত কিংবা দিন বড় হলে পড়া অবস্থাতেই রাত নেমে আসত। উচু জানালাগুলোর ওপারে দেখা যেত মারেঙ্গা গার্ডেনস। জ্যাক এবং পিয়েরের চারপাশে পাশাপাশি বসা ছাত্ররা অস্বভাবিক রকমের নীরব, শ্রান্ত ক্লান্ত, সর্বশেষ কর্ম শেষ করার কাজে মগ্ন। বিশেষ করে বছরের শেষের দিকে তাদের পড়ার সময়ের মধ্যেই বড় বড় গাছের ওপর, ফুলতলায় এবং পার্কের কলাগাছের ঝোপের ওপর রাত নেমে আসত। আকাশটা নীল থেকে নীলতর হয়ে উঠত। মনে হতো, নগরের কোলাহল কমে এসেছে, দূরে সরে গেছে। ঠিক তখন মনে হতো আকাশটা ফুলে উঠেছে। খুব বেশি গরম হলে জানালাগুলোর কোনোটা অর্ধেকখানি খোলা থাকত। ছোট বাগানের ওপর দিয়ে ভেসে আসা আবাবিল পাখির চিৎকার শুনতে পেত তারা। পড়ার রুমের ভেতরের কালি আর রুলারের এসিড এবং কটু স্বাদের আবহকে ভরিয়ে দিতে প্রবেশ করত সিরিঙ্গা এবং বড় বড় ম্যাগনোলিয়া ফুলের সুগন্ধ। হৃদয়টা ভারি হয়ে উঠলে জ্যাক তখন দিবাস্বপ্নে ডুবে যেত। অল্পবয়সী মনিটর তাড়া দিত। সে নিজেও তাদের সঙ্গে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করত ওখানেই। সবাইকে শেষ ঘণ্টা বাজা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো।

সাতটার সময় লিসে থেকে ছাত্রদের ভীড়ের স্রোত বের হতো। রিউ বাব আজুন পর্যন্ত হৈচৈ করতে করতে দৌড়ে যেত সবাই। ততক্ষণে সব দোকান আলো ঝলমল চেহারায় ফুটে উঠেছে। খিলানের নিচের ফুটপাতে ভিড়ের ঠেলাঠেলি এত বেশি হতো যে, তাদের অনেককেই রাস্তায় নেমে রেইলের মাঝখান দিয়ে দ্রুত বেগে হাঁটতে হতো। দূর থেকে কোনো ট্রলিবাস কাছাকাছি আসতেই তাদেরকে আবার ঠেলাঠেলি করে সরে দাঁড়াতে হতো। তারপর তাদের সামনে তখন দু গভার্নমেন্টে। আরব ফেরিঅলাদের বর্ণহীন এক ধরনের গ্যাসের আলোয় চারপাশ রাঙিয়ে উঠেছে। ছাত্ররা সেই গ্যাসের গন্ধ নিতে খুব ভালোবাসত। জ্যাক এবং পিয়েরে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেত, লাল ট্রলিবাসটা অপেক্ষমান, তবে ইতোমধ্যে বোঝাই হয়ে গেছে। অবশ্য সকালবেলা ওই বাসেই যাত্রীসংখ্যা থাকত অনেক কম। মাঝে মাঝে তাদের ট্রেইলার গাড়ির চলন্ত পাদানির ওপর চড়তে হতো। ওখানে চড়াটা অবশ্য নিষিদ্ধ এবং কষ্টকরও ছিল। সামনের কোনো স্টপেজে কোনো যাত্রী না নামা পর্যন্ত ওই রকম অবস্থাতেই যেতে হতো তাদের। তারপর তারা মানুষের ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগুতে থাকত। এভাবে একজন আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলতে পারত না। মানুষের ভিড়ের মধ্যে কনুই চালিয়ে রেলিঙের কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা করত তারা। রেলিংয়ের কাছ থেকে দেখতে পেত, অন্ধকারে ডুবে থাকা বন্দর। বড় বড় স্টিমারগুলোর আবছা চেহারা দেখা যেত শুধু। আকাশ আর সমুদ্রের রাতের ভেতর স্টিমারগুলোকে মনে হতো আগুনে পুড়ে যাওয়া কোনো বাড়ির কঙ্কালের মতো-যেন আগুন পুরোপুরি নেভেনি, কয়লার মতো ধিকিধিকি জ্বলছে। উজ্জ্বল আলোকিত বিশাল ট্রলিবাসগুলো পানির কাছাকাছি এলে যেন গর্জন করতে করতে চলত। তারপর ভেতরের দিকে সরে গিয়ে দারিদ্র পীড়িত এলাকা পার হয়ে চলতে থাকত বেলকোর্ট এলাকার দিকে। সেখানে পিয়েরে এবং জ্যাক একজন আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। জ্যাক অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেত কেরোসিনের দীপ জ্বালা খাবার ঘরে। সেখানে অয়েলক্লথ মোড়ানো টেবিল এবং চারপাশের চেয়ারগুলোতে আলো পড়লেও ঘরের আর সবকিছুই থাকত ছায়া ছায়া অন্ধকারে ডুবে। জ্যাকের মা তখন টেবিলের সাইডবোর্ডের পাশে টেবিল সাজাতে ব্যস্ত থাকতেন। নানি রান্নাঘরে দুপুরের খাবারের পর বেঁচে যাওয়া খাবার চুলায় গরম করার কাজে ব্যস্ত। আর তার বড়ভাই টেবিলের কোণায় বসে কোনো অভিযানমূলক উপন্যাস পড়ছে। তাকে মাঝে মধ্যে শেষ মুহূর্তে লবণ কিংবা পোয়া পাউন্ড মাখন আনতে যেতে হতো মজাবাইটদের দোকানে, কিংবা গ্যাবির ক্যাফেতে যেতে হতো আড্ডারত আর্নেস্ট মামাকে ডাকতে। রাতের খাবার খাওয়া হতো আটটায় এবং বেশিরভাগ সময়েই নীরবে। মাঝে মধ্যে আর্নেস্ট মামা হাসির দমকে তার আগে বলা কোনো অভিযানের গপ্পো তুলত। সাধারণত লিসের প্রসঙ্গ উঠত না। তবে নানি মাঝে মাঝে জ্যাককে জিজ্ঞেস করতেন সে ভালো গ্রেড পেয়েছে কি না। জ্যাক জানাত, সে ভালো গ্রেড পেয়েছে। তখন মা মুখে কিছুই বলতেন না, শুধু নীরবে জ্যাকের ইতিবাচক উত্তর দেওয়ার দিকে কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। অন্য সময় তিনি নীরব এবং অন্যমনস্ক থাকতেন। মা নানিকে বলতেন, বসে থাকো। আমি পনির নিয়ে আসছি। তারপর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত মা আর কিছুই বলতেন না। মা উঠে পড়ার সময় নানি বলতেন, তোর মার কাজে হাত লাগা। কারণ ততক্ষণে সে পারদাইলান হাতে নিয়ে গোগ্রাসে পড়া শুরু করেছে। মাকে থালাবাসন ধোয়ার কাজে সাহায্য করার পর প্রদীপের আলোর কাছে ফিরে মল্লযুদ্ধ আর সাহসের কাহিনী সংবলিত বিশাল ভলিউমের বইটি পিচ্ছিল এবং ফাঁকা টেবিল ক্লথের ওপর রাখত জ্যাক। মা একটা চেয়ার তুলে নিয়ে বাতির আলো থেকে দূরে শীতের সময় হলে জানালার পাশে গিয়ে বসতেন। আর গরমের দিন হলে ব্যালকনিতে গিয়ে বসে রাস্তায় ক্রমবিলীয়মান ট্রলিবাস, গাড়ি এবং পথচারীদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। নানি জ্যাককে আবারো তাড়া দিতেন, শুতে যাওয়ার জন্য। পরের দিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় তাকে উঠতে হবে। ঘুমুতে যাওয়ার আগে প্রথমে নানি, তারপর আর্নেস্ট মামা, সবশেষে মা এসে চুমু দিতেন জ্যাককে। মায়ের চুমু দেওয়াটা ছিল সবচেয়ে কোমল এবং অন্যমনস্ক। তারপর মা আবার তার জায়গায় গিয়ে বসতেন। দৃষ্টি সামনের চলমান জীবনের দিকে যেন তিনি কোনো ধীরে বহমান নদীর তীরে বসে আছেন। তার ছেলে তাকে ওই অবস্থায় বসে থাকতেই দেখত যেন অনন্তকাল ধরে। মাকে পিঠ বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে আবছা আলোয় ওইভাবে বসে থাকতে দেখে জ্যাকের গলার ভেতর একটা অসহ্য দলা পাকিয়ে উঠত। দুর্বোধ্য এক আবছা বৈরি দমবন্ধ আবহ তার মনটা পুরোপুরি ছেয়ে ফেলত।

 

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

 

Header Ad

আওয়ামী লীগের ২ সাবেক সংসদ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

নায়েব আলী জোয়ারদার এবং তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ারদার ২টি মামলায় ৭ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। অন্যদিকে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি ৩টি মামলায় ২০ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।

রোববার (২৪ নভেম্বর) ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. এমরান হোসেন চেীধুরী আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ জামিন আদেশ দেন।

জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান।

জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য নায়ের আলী জোয়ারদারকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের বাড়ি ও জেলা বিএনপির অফিসে হামলা অগ্নিসংযোগের অভিযোগের মামলায় গত ১২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার দিন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আরপপুরের জামতলা এলাকার বাড়ি থেকে র‍্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকেই তিনি জেলে ছিলেন। ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুল হাই মৃত্যুবরণ করলে বিনাভোটে নায়েব আলী জোয়ারদার এমপি নির্বাচিত হন।

এ দিকে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে গত ৬ অক্টোবর সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম হত্যা মামলা, জেলা বিএনপি সভাপতি এম এ মজিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও জেলা বিএনপি অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা রয়েছে।

এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, মেডিকেল গ্রাউন্ডে আদালত আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্যকে জামিন দিয়েছেন। দীর্ঘদিন তারা শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে আসামির আইনজীবী আদালতকে জানান। তারপরও তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে জামিন মঞ্জুর করেছেন।

Header Ad

পলাশবাড়ীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ যুবক গ্রেফতার

পলাশবাড়ীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ যুবক গ্রেফতার। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একটি বিদেশি পিস্তল ও আট রাউন্ড তাজা গুলি সহ জুয়েল রানা (২০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিনগত রাতে পলাশবাড়ী পৌর শহরের উদয়সাগর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার রাসেল দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার মাছুয়াপাড়া গ্রামের পান্না মিয়ার ছেলে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে পলাশবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গেল রাতে পলাশবাড়ী পৌর শহরের উদয়সাগর গ্রামে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী সদস্য। এসময় ভগ্নিপতি জুয়েল মিয়ার বাড়ি থেকে ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও আট রাউন্ড তাজা গুলিসহ জুয়েল রানাকে গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি আরও জানান।

Header Ad

আইপিএল মেগা নিলাম সর্বশেষ: কোন দলে কোন ক্রিকেটার?

ছবি: সংগৃহীত

আইপিএলের মেগা নিলাম চলছে। তিন বছর পর পর হওয়া এই নিলাম এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সৌদি আরবের জেদ্দায়। দুই দিনব্যাপী নিলামের প্রথম দিনটি শুরু হয়েছে আজ, রোববার (২৪ নভেম্বর)। বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর এখন ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের নিলামে। ভক্তদের কৌতূহল, কোন তারকা কোন দলে যাচ্ছেন, কত টাকায় বিক্রি হচ্ছেন তারা—এইসব প্রশ্ন নিয়ে উত্তেজনা চলছে। চলুন, এক নজরে দেখে নেয়া যাক, প্রথম দিন কোন খেলোয়াড় কোন দলে যোগ দিলেন।

গুজরাট টাইটান্স:

আইপিএলের অন্যতম সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট এবারও শক্তিশালী দল গড়তে মরিয়া। নিলামের আগে তারা পাঁচ ক্রিকেটারকে রিটেন করেছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫১ কোটি রুপি। অবশিষ্ট ৬৯ কোটি রুপি নিয়ে শুরু করেছে নিলাম। অবশ্য এত টাকা খরচ করলেও অভিজ্ঞ রশিদ-গিলকে ঠিকই ধরে রেখেছে দলটি। এই দুইজন ছাড়াও আছেন সাই সুদর্শন, রাহুল তেওয়াটিয়া ও শাহরুখ খানের মতো ক্রিকেটাররা।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে গুজরাট

কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)—১০.৭৫ কোটি রুপি

জস বাটলার (ইংল্যান্ড)—১০.৭৫ কোটি রুপি

মোহাম্মদ সিরাজ (ভারত)— ১২.২৫ কোটি রুপি

পাঞ্জাব কিংস:

কখনও আইপিএলের শিরোপা জিততে না পারা পাঞ্জাব কিংস এবারের নিলামে সবচেয়ে বেশি ১১০ কোটি ৫০ লক্ষ রুপি নিয়ে হাজির হবে। মূলত খেলোয়াড় রিটেনশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় তারা। অন্যান্য দলগুলো তারকা সব ক্রিকেটারদের রিটেনশন পদ্ধতিতে দলে নিলেও সেখানে মাত্র দুইজনকে নিয়েছে পাঞ্জাব। তাদের কেউই তারকা ক্রিকেটার নন। তারা হলে শশাঙ্ক সিংহ ও প্রভসিমরান সিংহ।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে পাঞ্জাব

অর্শ্বদীপ সিং (ভারত)—১৮ কোটি রুপি

শ্রেয়ার আইয়ার (ভারত)— ২৬.৭৫ কোটি রুপি

যুযবেন্দ্র চাহাল (ভারত)— ১৮ কোটি রুপি

মার্কাস স্টয়নিস (অস্ট্রেলিয়া)— ১১ কোটি রুপি

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)— ৪.২০ কোটি রুপি

দিল্লি ক্যাপিটালস:

নিলামের টেবিলে ৭৩ কোটি রুপি নিয়ে হাজির হয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। চার ক্রিকেটারকে রিটেনশন করেছে তারা। এতে খরচ হয়েছে মোট ৪৭ কোটি রুপি। সেই হিসেবে নিলাম থেকে বড় কোনো তারকাকে ভেড়াতে প্রস্তুত দলটি। কখনও শিরোপা জিততে না পারা দলটির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়াই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। দলটিতে আছেন অক্ষর প্যাটেল, কুলদ্বীপ যাদব, ত্রিস্টান স্টাবস ও অভিষেক পোরেল।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে দিল্লি

মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)—১১.৭৫ কোটি রুপি

লোকেশ রাহুল (ভারত)—১৪ কোটি রুপি

হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড)—৬.২৫ কোটি রুপি

জ্যাক ফ্রেসার-ম্যাকগার্ক (অস্ট্রেলিয়া)— ৯ কোটি রুপি

২০২৫ আইপিএল আগামী ১৪ মার্চ শুরু হয়ে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। আইপিএল কর্তৃপক্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে জানিয়েছে, বেশির ভাগ আইসিসি পূর্ণ সদস্যদেশের খেলোয়াড়েরা পরবর্তী তিন বছর আইপিএলে খেলার বিষয়ে নিজ দেশের বোর্ড থেকে সম্মতি পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে পাকিস্তান নেই। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্ক থাকায় ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম সংস্করণের পর এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলছেন না পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা।

লখনৌ সুপার জায়ান্ট:

২০২৪ আইপিএলে মাঠের বাইরের নানা কর্মকান্ডে বেশ বিতর্কিত হয়েছিল লখনৌ সুপার জায়ান্টস। এবার নিলামের আগে তারাও গুজরাটের মতো পাঁচ ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছে। এতে খরচ হয়েছে ৫১ কোটি রুপি। হাতে আছে ৬৯ কোটি রুপি। দলটিতে আছেন নিকোলাস পুরান, রবি বিষ্ণুই, মায়াঙ্ক যাদব, মহসিন খান ও আয়ুশ বাদোনি।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে লখনৌ

ঋষভ পন্ত (ভারত)— ২৭ কোটি রুপি

ডেভিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা)— ৭.৫০ কোটি রুপি

এইডেন মার্করাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)— ২ কোটি রুপি

মিচেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)— ৩.৪০ কোটি রুপি

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ:

আইপিএলের গত আসরের রানার্সআপ হায়দরাবাদ এবারও চমক দেওয়ার অপেক্ষায়। ২০২৪ সালে দারুণ ছন্দে থাকা দুই অসি ক্রিকেটার প্যাট কামিন্স ও ট্রাভিস হেডকে ধরে রেখেছে তারা। পাশাপাশি আছে হেনরিখ ক্লাসেনের মতো বিধ্বংসী ব্যাটারও। এছাড়া, দেশিদের মধ্যে অভিষেক শর্মা ও নিতীশ কুমার রেড্ডিরাও দ্যুতি ছড়াতে প্রস্তুত। এই পাঁচ ক্রিকেটারকে কিনতে খরচ হয়েছে ৭৫ কোটি রুপি। অবশিষ্ট ৪৫ কোটি রুপি নিয়ে নিলাম শুরু করেছে হায়দরাবাদ।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে হায়দরাবাদ

মোহাম্মদ সামি (ভারত)—১০ কোটি রুপি

হারশাল প্যাটেল (ভারত)—৮ কোটি রুপি

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু:

আইপিএলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল ধরা হয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে। মূলত কিংবদন্তি ব্যাটার বিরাট কোহলি থাকায় দলটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এবারের নিলামে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে হাজির হয়েছে আরসিবিও। রিটেনশনের সময় তারা দলে ভিড়িয়েছে বিরাট কোহলি, রজত পাতিদার ও ইয়াশ দয়ালকে। এদের কিনতে মোট খরচ হয়েছে ৩৭ কোটি রুপি। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি নিলাম শুরু করেছে ৮৩ কোটি রুপি নিয়ে।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে বেঙ্গালুরু

লিয়াম লিভিংস্টোন (ইংল্যান্ড)— ৮.৭৫ কোটি রুপি

ফিল সল্ট (ইংল্যান্ড)— ১১.৫০ কোটি রুপি

চেন্নাই সুপার কিংস:

আইপিএলের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই এবারও শক্তিশালী দল গড়ার পথে। দলটি রিটেন করেছে রুতুরাজ গায়কোয়াড়, মাথিশা পাথিরানা, শিবাম দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা ও এমএস ধোনিকে। এতে তাদের খরচ হয়েছে মোট ৬৫ কোটি রুপি। বাকি ৫৫ কোটি রুপি নিয়ে নিলামে অংশ নিয়েছে তারা। দেখার বিষয় গত আসরে দলটিতে দারুণ খেলা বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে এবার তারা ডেরায় ভেড়ায় কি না।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে চেন্নাই

ডেভন কনওয়ে ( নিউজিল্যান্ড)—৬.২৫ কোটি রুপি

রাহুল ত্রিপাঠি (ভারত) — ৩.৪০ কোটি রুপি

রাচিন রবীন্দ্র ( নিউজিল্যান্ড)—৪ কোটি রুপি

রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত) — ৯.৭৫ কোটি রুপি

কলকাতা নাইট রাইডার্স:

আইপিএলের গত আসরের চ্যাম্পিয়নস কলকাতা নাইট রাইডার্স ফের একবার চমক দিতে মরিয়া। গত আসরের দলটিতে খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক। যদিও এবার তাকে রিটেন করেনি দলটি। তারা ছয় জন প্লেয়ারকে নিলামের আগেই রিটেইন করেছে। তারা হলেন রিঙ্কু সিংহ, বরুণ চক্রবর্তী, সুনিল নারিন, আন্দ্রে রাসেল, হারশিত রানা ও রামানদ্বীপ সিংহ। এতে তাদের ব্যয় হয়েছে ৬৯ কোটি রুপি। ৫১ কোটি রুপি নিয়ে আজ নিলাম শুরু করেছে দলটি।

আজ নিলাম থেকে যাদের নিয়েছে কলকাতা

ভেঙ্কটেশ আইয়ার (ভারত)—২৩.৭৫ কোটি রুপি

কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)— ৩.৬০ কোটি রুপি

২০২৫ আইপিএল আগামী ১৪ মার্চ শুরু হয়ে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। আইপিএল কর্তৃপক্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে জানিয়েছে, বেশির ভাগ আইসিসি পূর্ণ সদস্যদেশের খেলোয়াড়েরা পরবর্তী তিন বছর আইপিএলে খেলার বিষয়ে নিজ দেশের বোর্ড থেকে সম্মতি পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে পাকিস্তান নেই। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্ক থাকায় ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম সংস্করণের পর এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলছেন না পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আওয়ামী লীগের ২ সাবেক সংসদ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন
পলাশবাড়ীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ যুবক গ্রেফতার
আইপিএল মেগা নিলাম সর্বশেষ: কোন দলে কোন ক্রিকেটার?
রেকর্ড এডিট দাবি, দশ লাখ টাকার চেক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা
পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮২
হত্যা মামলায় গ্রেফতার ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে রেকর্ড মৃত্যু, শনাক্ত আরও ১০৭৯
আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার পান্ত
আরও এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান
সৌদি আরবে এক সপ্তাহে ২০ হাজার অবৈধ প্রবাসী গ্রেপ্তার
আমাদের নিয়ত সহি, জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই: সিইসি
৫ বিসিএস থেকে নিয়োগ পাবেন ১৮ হাজার ১৪৯ জন
শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে থানায় জিডি করলেন নওশাবা
আইইউটির ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
বাংলাদেশ-বেল‌জিয়ামের রাজনৈতিক সংলাপ আজ
রাজধানীতে সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৭
জোড়া উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ
সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন আর নেই
এশিয়া কাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ