ছেলেমেয়েদের যেভাবে শেখাবেন শিষ্টাচার-নৈতিকতা
সুন্দর ব্যবহার ও ভালোভাবে চলতে পারে— এমন একটি সন্তান প্রত্যেক বাবা-মায়েরই কাম্য। তারা সেভাবেই তাদের ছেলেমেয়েদের শিশুকাল থেকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। যাতে মা, বাবার প্রতিটি কথা শোনে সে। এমন সন্তান গড়ে তোলার জন্য নিয়মের প্রতি অনুবর্তিতা থাকতে হবে। মা ও বাবার মধ্যে থাকতে হবে বিজ্ঞতা এবং আত্মজ্ঞান। সবকিছু ঠিকঠাক মতো করতে চেষ্টা করতে হবে তাদের। ছেলেমেয়েদেরও সেভাবে গড়ে তুলতে হবে ও শেখাতে হবে। যখন তারা নিয়মানুবর্তী হবে ও সবকিছু ঠিকঠাক মতো করতে পারবে। তখন ধীরে, ধীরে বিষয়গুলো শিখে ফেলতে ও নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করবে।
এজন্য যে নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে সেগুলো হলো—
১. ছেলেমেয়েদের কাছে কী চাইছেন, তা ভালোভাবে জানাতে হবে। তাদেরও সেগুলো পূরণের চেষ্টা শুরু করিয়ে দিতে হবে। কোথাও কোনো ভুল করলে ধরিয়ে দিতে হবে। নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিজের মতো করে তৈরি করতে চেষ্টা করতে হবে। ড. রবার্ট ব্রুকস নামের একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘২ বছর বয়স থেকে সুশৃঙ্খলা শেখানোর শুরু করলে তারা দ্রুততর গতিতে সেগুলো শিখে নিতে পারে। তারা কোনো কাজে কম বাধা দিতে থাকে ও পরবর্তী জীবনে তুলনামূলক ভালো ব্যবহারসম্পন্ন হয়।’
২. আপনি যে নিয়মকানুনের মধ্যে ছেলে বা মেয়েকে বড় করতে চান, সেগুলো বিস্তারিতভাবে বলার প্রয়োজন নেই। কেননা, যখন তারা আপনার নিয়মগুলোর পেছনের সামান্য কারণগুলো অনুধাবন করতে পারবে, তারা বুঝতে পারবে— কেন তাদের নিয়ম মানার কথা বলা হচ্ছে। ফলে তারা আরও ভালোভাবে মেনে চলতে শুরু করবে। যেমন— কোনো একদিন আপনি বললেন যে, আমার রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। কেননা খুব ঘুম পাচ্ছে ও শরীর ভালো ও শক্তিশালী রাখতে নিয়ম করে ঘুমানোর কোনো বিকল্প নেই। সেদিন ঘুমিয়ে পড়লেন আপনারা। তারপর থেকে এমন সময়ে ঘুমানোর জন্য একটি না একটি কারণ বের করে ও তাদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নিয়মটি শিখিয়ে দিতে পারেন। এরপর থেকে তারাই চর্চা শুরু করবে। সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে যাবে।
৩. সন্তানের ভালোভাবে প্রশংসা করতে হবে। ‘টেবিল গুছানো, বিছানা ঠিক করা— এমন সবগুলো কাজে আপনার ছেলে বা মেয়ে পারলে তাদের সাফল্যের জন্য অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে’, বলেছেন স্মার্ট ডিসিপ্লিন বইয়ের লেখক ড. ল্যারি জে. কেইনেগ। তিনি আরও বলেছেন, ‘আপনি এই কাজগুলোর সময় আপনার নিয়মটি আবার মনে করতে পারেন এবং তাদের সামনে করে আবার শিখিয়ে দিতে পারেন। তারা সম্পন্ন করলে আপনি বলবেন, আমি তোমার এমন কাজে খুবই গর্বিত। তারা কোনো কাজ নম্রতার সঙ্গে করলে বলবেন, আমি তোমার ভদ্রতার জন্য খুবই গর্বিত। যেকোনো সময় কাজ ভালোভাবে করলে বা আপনাকে সাহায্য করলে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না। আর সাহায্য নেওয়ার সময় প্লিজ বলা ভালো। এতে এই আচরণগত বিষয়গুলোর সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে পারবে এবং পাশাপাশি কাজগুলোও শিখে নেবে আরও ভালোভাবে।’
৪. নিজে নিয়ম নেমে চলতে হবে। যখন বাড়িতে ফেরেন, আপনার কোট বা জামাটিকে নিদিষ্ট স্থানে রাখুন। খাবার খেয়ে প্লেটটি সিংকে রাখতে ভুলবেন না। যখন হতাশ হয়ে পড়বেন চিৎকার করবেন না। শিশু সন্তানের সঙ্গে রাগারাগি করবেন না। বরং নিজে নিজের নিয়মিত কাজগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে করুন। এ সব দেখে সন্তান আপনাআপনিই অনুসরণ করতে শুরু করবে। ফলে আপনাকেই সবার আগে ভালোভাবে নিয়মের অনুসরণ করতে হবে। যখন শিশু সন্তানরা দেখবে, আপনি ভালোভাবে ব্যবহার করছেন, তারাও তাই করবে, বলেছেন জুডি আরনাল। তিনি ডিসিপ্লিন উইদাউট ডিসট্রেস নামের বইয়ের লেখক।
৫. বিবেকবান হতে শেখাতে হবে। ড. হল নামের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যদি আপনার ছেলে বা মেয়ে আপনার নিয়মগুলো মেনে চলছে না, তখন সঙ্গে, সঙ্গে তা মেনে চলতে বাধ্য করবেন না। বরং তাদের দোষী মনোভাবটি জাগিয়ে দিতে চেষ্টা করতে পারেন। ভালো থেকে মন্দের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই শিক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এই সমস্যাটিকে শেখানোর একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন’
ওএফএস/আরএ/