দারুণ প্রাকৃতিক ওষুধ সূর্যালোক
আমরা দিনের আলোতে ঘুরে বেড়াই। আমাদের কাজকর্ম চলে। কখনো, কখনো ভুল করে সূর্যের আলোতে বসে থাকি অলসভাবে। আপনি কী জানেন সূর্যের আলোতে কী আছে? এই আলো আপনার কী উপকার করে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপনার ঘুমের উন্নয়ন করে: প্রতিটি মানুষের শরীর ‘মেলাটোনিন’ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোন ঘুমানোতে সাহায্য করে। হরমোনের নিঃসরণ ঘটে রাতের বেলায়, যখন থেকে ঘুমানোর জন্য তাড়না অনুভব করতে শুরু করেন দেহ ও মনে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রতিদিন যারা এক ঘণ্টা সূর্যালোক গ্রহণ করেন সকালে, তারা ভালো ও গাঢ়ভাবে ঘুমাতে পারেন। দারুণভাবে এই হরমোনের মাধ্যমে সূর্যের আলো মানুষের ঘুমে সাহায্য করে। সূর্যালোক মানুষের শরীরের ভেতরের যে স্বাভাবিক ২৪ ঘণ্টা জৈবিক প্রক্রিয়া রয়েছে, সেখানেও কার্যকর। আবার আমাদের মেলাটোনিন কখন বাড়াতে ও কমাতে হবে শরীরকে জানিয়ে দেয় সূর্যের আলো। দেহের মধ্যে যথেষ্ট সূর্যালোক থাকা মানে হলো, মেলাটোনিন নিয়ন্ত্রণে আছে। ফলে যতটা পারেন সূর্যালোক গ্রহণ করুন। তাতে আপনার শরীর ভালোমানের মেলাটোনিন তৈরি করতে পারবে।
চাপ কমায়: মেলাটোনিনকে কমিয়ে এনে সূর্যালোক মানুষের শরীর ও মনে চাপের প্রতিক্রিয়া কমায়। অপনার শরীরকে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিকভাবে মেলাটোনিন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় নিয়ে আসতে সাহায্য করে । ফলে শরীরের ভেতরে চাপের মাত্রা কমে আসে। এ ছাড়া, মানুষ প্রায়ই বাইরে থাকলে কোনো কাজকর্মের মাধ্যমে সক্রিয় থাকেন। কেউ হাঁটেন, কেউ খেলেন কেউবা গল্প করেন। এই কাজের বাইরে নিজের জীবনের জন্য কাজ করার অনুশীলনগুলোও চাপ কমিয়ে আনে।
হাড়কে শক্তিশালী রাখার কাজ করে: মানব দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য ‘ভিটামিন ডি’ আছে সূর্যের আলোতে। গ্রহণের সর্বোত্তম ও সহজ উপায়গুলোর একটি হলো বাইরে আসা। এরপর যে সূর্যের আলো আমাদের শরীর প্রতিদিন গ্রহণ করে, তা গ্রহণের একটি সহজ নিয়ম-প্রতিদিন ১৫ মিনিট বাইরে থাকা। ফলে মানুষের চামড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এই ভিটামিন মানব দেহকে রক্ষণাবেক্ষণেও প্রয়োজনীয়। তা ছাড়া, আমাদের হাড়ের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম আছে। ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতার প্রাকৃতিক প্রতিরোধ করে, মানুষের পাতলা হয়ে যাওয়া রোধ করে, কদাকার হওয়া রোধে প্রাকৃতিক ওষুধ, প্রাকৃতিকভাবে হাড় বিকৃতি ঠেকায়। এর কোনো অসুখে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি এমনভাবেও চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ওজন বাড়া ঠেকায়: সকাল ৮টার মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য সূর্যের আলোতে থাকা ও দুপুরে সেভাবে আলো গ্রহণ যেকোনো মানুষের ওজন কমার ক্ষেত্রে দারুণ সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে।
রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে: মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্যও সূর্যের আলো এবং ভিটামিন ডি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যারা নিয়মিতভাবে সূর্যের আলো গ্রহণ করেন, তাদের শরীরের ভেতরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে যেকোনো মানুষের অসুখে পড়ার ঝুঁকি কমে, তার রোগ কম হয়, নানা ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে, কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিপক্ষেও প্রাকৃতিক প্রতিরোধক।
হতাশা ও বিষন্নতার বিপক্ষে যুদ্ধ করে: কেবল মানুষের মনের মধ্যে বা মাথায় তার হতাশা, বিষন্নতার মতো রোগগুলো থাকে না-এরপর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের আলোতে নিয়মিত সকালে বের হলে তার হতাশা ও বিষন্নতার ঝুঁকি কমতে থাকে। তার দিনটি বড় হতে থাকে। তিনি নিজেকে স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন। কাজে ডুবে যেতে তাকে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যালোক মানুষের মনের এভাবে উন্নতি ঘটায়। মানুষের শরীরের ভেতরের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটায়। শরীরের ‘সেরোটোটিন’র উন্নতি ঘটায়। তার পরিমাণ বাড়ায়। সেরোটোনিন হলো, মানুষের মস্তিস্ক ও পুরো শরীরের মধ্যে সংযোগবাহী নার্ভ সেলের কেমিক্যাল। সেরোটোনিনই মানুষের মনের অবস্থার উন্নতি ঘটায়। যে কাউকে শান্ত, ধীরস্থির রাখতে সাহায্য করে ও যেকোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হতে সহায়তা করে। দিনের আলো বা স্বাভাবিক আলো মানুষের স্পর্শকাতরকার মানসিক ব্যাধিগুলোর উপসর্গগুলো থেকে দূরে রাখে তাকে আরামের অনুভূতি, স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তি প্রদানের মাধ্যমে। মানুষের মনের উন্নয়ন ঘটায় ঋতুভেদে। প্রতিটি ঋতুতে মানুষ সেই সময়ের ফুল, পাখি, প্রকৃতির সঙ্গে থেকে তার মনের নিয়মিত ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারেন।
মানুষকে দীর্ঘজীবন প্রদান করে: ৩০ হাজার সুইডেনের নারীর মধ্যে পরিচালিত একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা অন্যদের চেয়ে বেশিক্ষণ সূর্যের আলোর নিচে থেকেছেন বা সময় অতিবাহিত করেছেন, তারা অন্যদের থেকে ছয় মাস থেকে দুই বছর সময়কাল বেশি বেঁচে থেকেছেন।
ওএফএস/