২ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে ১০ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী
গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে ১০ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গত প্রায় ২১ মাসে ১০ লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশে, যেকোনো সময়ের অভিবাসী প্রবাহের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা বলে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচকরা অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন।
এ সব ইমিগ্রান্টকে প্রশাসন সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে বাইডেন প্রশাসন বেশ ক’বার যুক্তি প্রদর্শন করলেও তা ধোপে টেকার মত নয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। সীমান্তে তালিকাভুক্ত অভিবাসী ছাড়াও বর্ডার পেট্টল এজেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসার ইমিগ্রান্ট এবং আন্তর্জাতিক মানবপাচার গ্যাং এর সহায়তায় মেক্সিকো থেকে মালবাহী ট্রেলার ট্রাকে কত অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের সংখ্যা যোগ করলে বাইডেনের আমলে আসা অবৈধ ইমিগ্রান্ট সংখ্যা আরও বেশি হবে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদ থেকে বলা হয়ে আসছে যে যুক্তরাষ্ট্রে আনডাকুমেন্টেড বা অবৈধ অভিবাসী সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ, তার দ্বিতীয় মেয়াদে এ সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়াদে অভিবাসী প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা সত্ত্বেও অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এবং এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে ট্রাম্পের চার বছরে কমবেশি ২০ লাখ বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে। এর বাইরে রয়েছে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৭ লাখ অভিবাসী, যা শৈশবে তাদের মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল, যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে ওঠেছে, কিন্তু বহু বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। ‘টিপিএস’ বা টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাসের আওতায় রয়েছে আরও প্রায় ৫ লাখ বিদেশি, যাদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে বহু বছর। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি অবৈধ ইমিগ্রান্ট বসবাস করছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের মধ্যে প্রায় দশ লাখ এসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। এসাইলাম অফিস থেকে যাদের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে তাদের বিষয় পুন:বিবেচনার জন্য ইমিগ্রেশন জজদের কাছে পাঠানো হয় এবং ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে প্রায় ছয় লাখ এসাইলাম কেস বিবেচনাধীন রয়েছে। লোকবলের ঘাটতির কারণে এসাইলাম অফিস ও ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে অনিস্পন্ন এসাইলাম কেস ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আট-দশ বছর ধরে আটকে থাকা কেস অসংখ্য। ২০১৪ বা ২০১৫ সালে এসাইলাম আবেদন করেছেন এমন বহু এসাইলাম প্রার্থীর আজ পর্যন্ত ইন্টারভিউ হয়নি।
যারা সীমান্তে তালিকাভূক্ত হয়েছেন, তারা সীমান্তেই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা কাগজপত্রে এসাইলামের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সিটিতে চলে এসেছেন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও হাত খরচের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু এটা নিতান্তই সাময়িক ব্যবস্থা। নিউইয়র্ক সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি, অরিগেনের পোর্টল্যান্ড সিটির নবাগত অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন যে অভিবাসীদের চাপে তারা হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে স্থানীয় হোটেল ভাড়া করে অভিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পোর্টল্যান্ড সিটির কর্মকর্তারা বলেছেন যে তাদের পক্ষে অভিবাসীদের আশ্রয়ের নিরাপত্তা প্রদান করা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাদের জরুরি আবাসন সামর্থ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত পোর্টল্যান্ড সিটি নবাগত ইমিগ্রান্টদের পেছনে ৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
আরএ/