রাজধানীতে চলছে গণটিকা কার্যক্রমের ২য় দিন
রাজধানীতে চলছে করোনাভাইরাসের গণটিকার কার্যক্রম। রাজধানীর প্রতিটি অস্থায়ী টিকাদান বুথ, কেন্দ্র, ক্লিনিক, হাসপাতালে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। টিকা গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই কোভিড-১৯ এর গণটিকা পেয়ে সবাই অনেক খুশি। অনেক মানুষ এতদিন টিকা নিতে নারাজ ছিলেন কিন্তু এখন গণটিকা নিতে খুব আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা।
তবে বেশ কিছু এলাকায় ভোগান্তিও দেখা গেছে। টিকা নিতে আসা মানুষের ঢল নামায় রাজধানীর একাধিক কেন্দ্রে কমবেশি ভোগান্তি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক স্থানে টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে মৃদু হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর, মহাখালীর কড়াইল বস্তি, কামরাঙ্গীর চর বস্তি ও ভাষানটেক এলাকার বস্তিতে টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, কড়াইল বস্তিতে আনসারদের সহযোগিতায় এ গণটিকার কার্যক্রম চলছে। মহাখালী টিএনটির আনসার ক্যাম্পের কমান্ডার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রগুলোতে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
আজিমপুরে টিকা নিতে এসেছেন কামরাঙ্গীরচর থেকে রিকশা চালক জসিম মিয়া। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি টিকা নিতে। টিকা নেব না রিকশা চালাব? এ সময় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায় সেখানে।
সকালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্টাফ কোয়ার্টারে টিকা নিতে এসেছেন ইউনিভার্সিটির ছাত্র শিহাব। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা নিয়েছি এখনো কোনো অসুবিধা হয়নি।
আজিমপুর অফিসার্স কোয়ার্টারে টিকা নিতে আসা আজম মিয়া (৭০) বলেন, ‘বয়স বাড়ায় শারীরিক জটিলতার কারণে টিকা নিতে একটু দেরি করেছি কিন্তু অবশেষে টিকা নিতে হলো। এক ঘণ্টা হয়েছে টিকা গ্রহণ করেছি কোন সমস্যা হয়নি।
সকালে মোহম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষরা লাইন ধরে সুষ্ঠভাবে টিকা গ্রহণ করছেন। শ্যামলী থেকে টিকা নিতে আসা রাকিব হোসেন জানান, এর আগে বিভিন্ন কাজের কারণে আমি টিকা নিতে পারিনি। তাই আজকে টিকা নিতে এসেছিলাম। সুন্দর ভাবে টিকা নিতে পেরেছি। অনেকে টিকা নেওয়ার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
মিরপুর বিহারি ক্যাম্প থেকে টিকা নিতে আসা সালেহিন জানান, ‘আমি গ্যারেজে কাজ করি। আমার জন্মসনদ ছিল না। তাই কোথাও থেকে টিকা নিতে পারিনি। আজ এখানে টিকা নিতে পারলাম। শুধু মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকাটা নিয়ে নিলাম। খুব ভালো লাগছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে আমার বোনও টিকা নিয়েছে। ও আলাদা লাইনে দাঁড়িয়েছিল। একটু সকাল সকাল আসছি। তাই দ্রুত পেয়েছি। তবে সকালে আমরা যখন আসছি তখন অনেক লোক লাইনে ছিল। আমাদের সঙ্গের অনেকেই এখানে টিকা নিতে আসছে।’
সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্নভাবে শেষধাপের গণটিকার কার্যক্রম চলছে। যারা এখনও টিকা নেয়নি তারাই আজকে এসে টিকা গ্রহণ করছেন।
বাড্ডা জেনারেল হসপিটালের টিকা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘আজ টিকা নিতে আসা মানুষের প্রচুর ভিড়। সকাল থেকে এ পর্যন্ত অনেক মানুষকে টিকা দিয়েছি। আমরা তো মনে করেছি প্রথম ডোজ টিকা বেশিরভাগ মানুষ নিয়েছেন তবে এখনও যে অনেকেই নেননি আজ সেটার প্রমাণ পেলাম।’
এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও সুন্দরভাবে চলছে টিকা দান কর্মসূচি।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে টিকা নিতে আসা ভ্যানচালক মামুন বলেন, ‘আমি ভ্যান চালাই। তাই সময় মত টিকা দিতে পারিনি। আগে আমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি, তাই টিকাও নিতে পারিনি। সেজন্য আজ গণটিকা নিতে এসেছি।
পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শান্তিপূর্ণ ভাবেই গণটিকা দান চলছে। সকলে লাইনে দাড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন।
হাসপাতালটির উল্টো পাশে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট যক্ষা হাসপাতালে সকাল থেকে চলছে টিকাদান কর্মসূচি। টিকা নিতে আসা মানুষরা উপস্থিত হয়েছেন টিকা গ্রহণ করতে। এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটির কর্মকর্তা স্বাধীন বলেন, আমাদের প্রায় ১০০ কর্মী আজকে টিকাদান কাজ করছেন। তাদের সবাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টিকাদান কাজ করবেন। টিকার কোনো সমস্যা নেই। যেই আসছে, তাদেরই টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকা না পেয়ে কেউ ফেরত যায়নি।
আজিমপুর ক্লিনিকের কর্মকর্তা ফেরদাউস সুলতানা বলেন, সবাই জানতেন ২৭ ফেব্রুয়ারি করোনার প্রথম ডোজ টিকাদান কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। তাই কেন্দ্রে কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মানুষের ঢল নেমেছিল।
টিকাপ্রত্যাশী অসংখ্য নারী-পুরুষ গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছু অব্যবস্থাপনার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর বেশির ভাগ টিকাকেন্দ্র ও হাসপাতালে।
মিরপুর লালকুটি হাসপাতলেও মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানে টিকার জন্য অপেক্ষা করা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমি ১১টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন ১২টা বাজে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে টিকা নিতে। তবে খুব সুন্দর ভাবে টিকা নিতে পেরেছি।’
টিকার জন্য লাইনে দাঁড়ানো মোহাম্মদ সোলেমান বলেন, ‘আজকের পর প্রথম ডোজ আর দেবে না। আজকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আশা করছি ভালো ভাবে টিকা নিতে পারব।’
টিকা কেন্দ্রের একাধিক স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, ‘সকাল থেকে খুব সুন্দরভাবে টিকা দান চলছে। যারা এসেছেন, সবাই টিকা পাবেন।’
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে গণটিকা ব্যস্তবায়নে ১৬টি বুথ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেওয়া হয় প্রায় চার হাজার মানুষকে।
নীলক্ষেতে টিকা নিতে আসা হ্যাপি আক্তার বলেন, ‘স্বাচ্ছন্দ্যে টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছি। ইনশাল্লাহ কোনো অসুবিধা হয়নি। দেরি করে টিকা গ্রহণ করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছোট বাচ্চা ছিল এজন্য।’
সেগুনবাগিচা কাউন্সিলর ভবনের ছয় তলায় টিকা নিতে আসা রহিমা আক্তার বলেন, ‘সবাই থেকে নিচ্ছে এজন্য আমিও টিকা নিয়ে নিলাম। কোন ধরনের অসুবিধা হয়নি।
এদিকে গত বুধবার সাভারে করোনাভাইরাসের টিকাকেন্দ্রে প্রথম ডোজ টিকা প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় হয়, যা সামলাতে পুলিশকে লাঠি চার্জ করতে হয়েছে।
গণ টিকার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় আজিমপুর ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান মানিক এর সঙ্গে।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় আগে থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকার কার্যক্রম চলছে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সাধারণ মানুষ টিকা নিচ্ছেন। আজ বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন বলেন, সেগুনবাগিচা, পল্টন, কালভার্ট রোডসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গণটিকা কার্যক্রম চলছে। সকাল থেকে গণ টিকা নিতে অনেক ভিড় ছিল। বর্তমানে স্বাভাবিক তবে সাধারণ মানুষ টিকা নিতে খুব আগ্রহী।
কেএম/এমএমএ/