শিশুদের বিপরীতধর্মী আচরণগত সমস্যা
শিশুদের খুব পরিচিত সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা হলো অপজিশনাল ডিফাইন্ট বিহেভিয়ার। বর্তমান সময়ে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের আচরণগত এই সমস্যা নিয়ে খুবই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন থাকেন। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাদের এই সমস্যাটি চিহ্নিত করা বাবা-মায়ের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
১০ বছরের একজন বাচ্চাকে নিয়ে মায়ের অভিযোগ ছিল বাচ্চা ইদানিং খুব ডিমান্ড করছে, বাচ্চার মনের মতো কিছু না পেলে রাগারাগি করছে, বড়দের সঙ্গে তর্ক করছে এবং অল্পতেই খুব বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা নিজের কোনো দায়িত্ব নিতে পারছে না এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে, নিজের খারাপ আচরণের জন্য পরিবারের সদস্যদের দায়ী করছে। এবং শুরুতে দেখা যাচ্ছে যে, এই ধরনের আচরণগুলো বাচ্চা শুধুমাত্র বাসাতেই করছে। স্কুল বা বাহিরের কোনো পরিবেশে বাচ্চার আচরণের কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছিল না।
ধীরে ধীরে সমস্যা বাইরেও দেখা যাওয়া শুরু করেছে। বাচ্চার কোনো বন্ধু নেই, বাসায় কোনো আত্মীয় এলে বাচ্চা খুবই বিরক্ত হয়, স্কুলের পারফরম্যান্স খারাপ হতে শুরু করেছে এবং বাচ্চা ইদানিংকালে আবদারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাচ্চার মধ্যে মোবাইল ব্যবহার করার চাহিদা দেখা যাচ্ছে, মোবাইলের জন্য আবদার করছে এবং সুযোগ পেলেই মোবাইল ব্যবহার করছে। বাচ্চার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে গেলেই সে ভীষণ রাগ হচ্ছে।
পরবর্তীতে যখন বাচ্চাটির সঙ্গে বসা হয় তখন বাচ্চার ইন্টারভিউয়ের সময় দেখা যাচ্ছিল সে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না, নিচের দিকে তাকিয়ে থাকছে। সবকিছুর জন্য মাকে এবং বাসার পরিবেশকে দায়ী করছে। নিজের কোনো ভুল স্বীকার করছিল না। সাধারণত বাচ্চাদের এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় অপজিশনাল ডিফাইন্ট বিহেভিয়ার।
পরে বাচ্চা এবং তার বাবা-মাকে কাউন্সিলিংয়ে আনা হয় এবং বাচ্চার বেড়ে উঠার বাসার পরিবেশটি বোঝার চেষ্টা করা হয়। বাবা-মাকে চাইল্ড ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে এই ধরনের আচরণগত সমস্যা দেখা দিলে বাবা-মা চিন্তিত না হয়ে শিশুকে নিয়ে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাতে হবে।
লেখক: অ্যাডাল্ট অ্যান্ড চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্ট, এভার কেয়ার হাসপাতাল
আরএ/