বিশ্বসেরা ছাত্র
হাল্ট প্রাইজে জয় লাভ করেছেন। এটি ছাত্র, ছাত্রীদের নোবেল। জয় করেছেন জুনিয়র নোবেল দি গ্লোবাল আন্ডারগ্রাজুয়েট অ্যাওয়াড। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাকে। ভারতের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র শিভাং সিংয়ের গল্প
গেল বছর হাল্ট প্রাইজের আঞ্চলিক পবগুলোতে জয়ী হয়েছেন ‘শিভাং সিং’। বিশ্বসেরা এই পুরস্কার বিজয়ী পড়তেন বিবিএতে। তার বিষয় আইবিজিএম বা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট। তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পুরস্কারটি লাভের সময় ফাইনাল ইয়ার বা চূড়ান্ত বর্ষে পড়েন। তার দলটির নাম ‘এডিলারি’। ইংরেজিতে পুরো মানে ই-ডেলিভারি। ম্যানিলার তারা ইমপ্র্যাক্ট বা প্রভাব বিস্তারের সামিটটিতে জয়লাভ করেছেন। তাদের এই হাল্ট প্রাইজকে গর্বভরে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য নোবেল পুরস্কার’। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সেরা সামাজিক উদ্যোক্তা ভাবনা তৈরির প্রতিযোগিতা। আয়োজন করে হাল্ট ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল ও জাতিসংঘ ফাউন্ডেশন। দি হাল্ট বিজনেস স্কুল একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের নানা দেশে ক্যাম্পাস আছে। দেশগুলো হলো ব্রিটেনের কেমব্রিজ, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো, নিউ ইয়ক শহর, চীনের সাংহাই ও আরব আমিরাতের দুবাই। গেল বছরের সামাজিক ব্যবসা ধারণাটির আইডিয়াগুলো জমা দিতে হয়েছে, ‘মানুষের ভালোর জন্য খাদ্য-খাবারকে একটি বাহনে রূপান্তর করতে হবে পরিবর্তনের মাধ্যমে।’ এই আইডিয়াতে ছাত্র, ছাত্রীদের দলগুলোকে একটি করে জরুরী সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের বিস্তারিত ধারণাগুলো সামাজিক বিনিয়োগ হতে হবে, সেটি টেকসই ও পরিমাপযোগ্য হতে হবে। তার মানে তাদের আইডিয়াগুলোকে সামাজিক বিভিন্ন খাদ্য সমস্যার সমাধানে টেকসই হতে হবে। সেগুলো কেমনভাবে পরিমাপ করা যাবে ও পরিবর্তন আনবে সেগুলো জানা সম্ভব হবে। আয়োজকরা আরো বলে দিয়েছেন, সেগুলোর প্রতিটি ১ কোটি মানুষের মধ্যে ২০৩০ সালে ধীরে, ধীরে পৌঁছে যাবে। তাদের সমাজগুলোতে পৌঁছাবে, রোজগার বাড়াবে, ক্ষুধার্তদের খাবার প্রদান করবে ও রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারবে। বিরাট প্রতিযোগিতাতে বিজয়ী এডেলারি এমন একটি আইডিয়া নিয়ে এলো, যেটি উচ্চাকাংখী পরিকল্পনা ছিল। সেটি জলবায়ুর পরিতনের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানুষগুলোর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন প্রভাব বিস্তার করতে পারে, অপুষ্টির শিকার মানুষগুলোকে পুষ্টিকর খাবার প্রদান করে ও লিঙ্গঅসমতা দূর করে। তারা খাবারের কাটা চামচগুলোকে বাহন হিসেবে ভেবেছেন, সমাজগুলোকে সাহায্য করতে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন, বিশ্বখাদ্য ও পানীয় শিল্প থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার নির্মূল করার পরিকল্পনা জমা দিয়েছেন। নিয়মিত খাদ্য তালিকা তৈরি করে গ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টিকর খাবার প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। বিজয়ী দল হিসেবে তাদের হাল্ট প্রাইজের বাষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাঁকজমকের আয়োজনটি হয়েছে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘের সদর দপ্তরে গেল বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিকল্পনা ও নিজেদের উদ্যোগী করতে বিজয়ী দল হিসেবে তারা ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। এরপর পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগের সুযোগগুলো প্রদান করা হয়েছে। তারা ‘হাল্ট প্রাইজ লেকচার’ প্রদান করেছেন। আমাদের টাকায় ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা পেয়েছেন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। শিভাং সিং এছাড়াও লাভ করেছেন ‘দি গ্লোবাল আন্ডারস্টান্ডিং অ্যাওয়ার্ডস’। পুরস্কারটি লাভ করেছেন তিনি, ‘মোটর সাইকেল যাত্রী পরিবহনকারী কম্পানিগুলোর ব্যবসা নৈতিকগুলো অনুসন্ধান’র জন্য। পুরস্কারটি প্রদান করা হয়েছে মোট ২৫টি বিভাগের সেরা হিসেবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার শত হলো-সেই ছাত্র বা ছাত্রীটি সে বছর অনার্স পাশ করতে হবে। শিভাংয়ের পরিকল্পনাটি ব্যবসায়িক খাতের পুরস্কার জয় করেছে। তার গবেষণা তুলে ধরেছে একের পর এক দলগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের পরিবতন ঘটানো হবে। নৈতিকতার মানদন্ডে মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে আসার কথা বলেছেন তিনি। পুরস্কারটি লাভ করে শিভাং জানিয়েছেন, ‘আমি আমার জ্ঞানকে ব্যবসা নৈতিকতার ক্ষেত্রে বাড়ানোর জন্য গভীরভাবে ডেভিড বিশপের কাছে কৃতজ্ঞ। এছাড়াও আমাকে শিখিয়েছেন বহুজাতিক অনুশাসন ও তাদের সামাজিক দায়দায়িত্বগুলো। আরেকবার পর্যালোচনা করে এই ব্যবসাপত্রটিকে আমি একটি গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করবো।’ ‘জুনিয়র নোবেল প্রাইজ’ নামে পরিচিত এই দি গ্লোবাল আন্ডারগ্রাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডগুলো আয়ারল্যান্ডের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাইকেল ডি. হেগেন্স’র পক্ষে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। অ্যাকাডেমিক পুরস্কারগুলো বিশ্বের সেরা অনার্স পযায়ের কাজ। লাভ করে তারা তাদের কাজ বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে জানাতে পেরেছেন। নানা বিভাগের সেরা ছাত্র, ছাত্রীদের কাছে পৌঁছেছেন।
শিভাং সিং পড়ালেখা করেছেন যে ‘দি ইউনিভাসিটি অব হংকং’ (এইচকেইউ)-এ, সেখানে তিনি লাভ করেছেন ‘রাষ্ট্রপতি সম্মাননা’। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে তার অনার্স ডিগ্রি লাভ করেছেন। বলেছেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উপকারী, মনের মতো ও স্মৃতিময়। তার ভাষায়, ‘আমাদের এইচকেইউ প্রতিধ্বনিময় উন্নয়নের সুযোগগুলো ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে তৈরি করে। তাদের শিল্পময়ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সম্পদরাজিগুলো প্রদান করে এমনকি স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। অ্যাকাডেমিক ও সহশিক্ষাক্রমিক কাযক্রমগুলোর মধ্যে সমতা আছে। উন্নত পেশাজীবনের দিকে তারা আমাদের ধাবিত করেন। সারাবিশ্বে কর্মসুযোগ থাকায় আমি এখানে পড়তে আগ্রহী হয়েছি। চারটি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানোর পর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, এখানে পড়তে ভর্তি হওয়াই আমার জীবনে নেওয়া সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত। লেখাপড়া শেষ হলো। এর মধ্যে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাসহায়তা কাযক্রমের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ালেখা করেছি। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন বন্ধু তৈরি করেছি ও কয়েকটি নতুন জায়গায় ঘুরেছি। যখন ইউরোপে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম, পরিকল্পনায় বাঁধ সাধল কভিড-১৯ মহামারি রোগ। তারপরও এই শিক্ষাবিনিময় কার্যক্রমই আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা অংশ।’
শিভাং তাদের আইবিজিএম (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট) বিভাগের আন্তর্জাতিক ফিল্ড ট্রিপে স্পেন গিয়েছেন। সেখানেও তার খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে। বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় সেখানকার খামারগুলো পরিদশন করে হাতে-কলমে শিখেছি। ব্যবস্থাপকরা আমাদের প্রেজেন্টেশন করে আরো অনেক কিছু জানিয়েছেন। তাদের উপকারভোগীদের বাড়িগুলোতে গিয়ে ভাবনা, জানা, বিশ্লেষণ ও অবদান রাখার সুযোগ হয়েছে। তার বাদেও প্রামাণ্যচিত্র, কুইজ, রচনা লেখার আয়োজনগুলোর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে জ্ঞানের মিশ্রণ হয়েছে। আমাদের কোর্সের কাজও করতে হয়েছে। ফলে শিক্ষা কেবল তৃণমূলে হয়নি, হাতে-কলমে শেখার দিকে আমাদের মনোযোগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এখন তিনি অবদান রাখা যাবে ও ভালো পরিবর্তন ঘটবে এমন কাজের দিকে যেতে সংকল্পবদ্ধ। বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর একটিতে চাকরির প্রস্তাব ছিল। তবে জন্মভূমি ভারতে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে সরকারী চাকরি করব ও মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেব। দি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুযোগগুলো লাভ করেছি, আমার কাজের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি শিশু যেন তেমন লাভ করতে পারে, সেজন্য কাজ করব। তাদের পরিবার, অবস্থার দিকে তাকাব না। অসমতাগুলোর বিপক্ষে লড়ব। বৈষম্যগুলোও দূর করার আশা আছে কাজের মাধ্যমে নিজের দেশে ও বিশ্বে।’