গাছের চিকিৎসক পাখি ‘কষ-গলা কাঠঠোকরা’
খাদ্যের সন্ধানে শিমুল ফুলের ডালে বিরল প্রজাতির পাখি ‘কষ-গলা কাঠঠোকরা’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আকস্মিক কোনো কিছু লাভ করার উল্লাস বিবরণ করা কঠিন। বার্ড ফটোগ্রাফিরতে মনের ভেতর অদেখা পাখির প্রতি দুর্বলতা জাগবে এটাই স্বাভাবিক। সব পাখিই যে একই এলাকায় বা অঞ্চলে দেখা যাবে তা নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতি পাখির আবাসস্থল। আজ যে পাখিটির কথা বলবো তার নাম 'কষ-গলা কাঠঠোকরা'। সেই পাখির ছবি তোলার পেছনেও একটি গল্প আছে। কারণ গত ৫ বছর এই পাখির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে পাখিটির দেখা পাই।
বুধবার (৯ ফ্রেব্রুয়ারি) দুপুরে নওগাঁ শহরের পার নওগাঁর ছোটযমুনার পাড়ঘেষে একটি শিমুল গাছে। শিমুল গাছটি থেকে বিরল প্রজাতির 'কষ-গলা কাঠঠোকরা' পাখির কয়েকটি ছবি তুলতে পারলাম।
এতক্ষণ যে পাখিটি নিয়ে কথা বললাম তার বাংলা নাম কষ-গলা কাঠঠোকরা। কাঠঠোকরার পরিবারের সবুজ কাঠঠোকরা। এরা আকারে আমাদের ভাত-শালিকের চেয়ে কিছুটা বড়। উচ্চতা প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখিটির মাথা লাল রঙের হয়ে থাকে। স্ত্রী পাখিটির মাথা কালো রঙের হয়। পিঠ হলদে-সবুজ। বুক, গলা ও পেটে জলপাই রঙের দাগ। নিম্ন পর্বত ও খোলা বন পাদদেশে সমতল নীচে ১৫০০ মিটার একটি উচ্চতায় এ প্রধান বাসস্থান, এছাড়াও বাঁশের বনে, ফলের বাগানে প্রধানত বীজে পিঁপড়ে এবং পোকামাকড় এবং খাবার জন্য অন্যান্য প্রাণী খাদ্য।
নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মজিদুল রহমান বলেন, ‘কষ গলা-কাঠঠোকরা’ অনেকটা বিরল প্রজাতির পাখি। অন্যান্য কাঠঠোকরাদের যেমন সচরাচর পাওয়া যায়, একে সহজে পাওয়া যায় না। এটি কিছুটা সবুজ রঙের দেখতে সুন্দর। গলার মাঝে লম্বা লম্বা দাগ আছে, এ কারণে এর ইংরেজি নাম Streak-throated Woodpecker।
তিনি বলেন, সব কাঠঠোকরাই পতঙ্গভুক পাখি। যে গাছের বাকল আলতোভাবে লেগে রয়েছে সেই গাছের চারপাশে কাঠঠোকরা বেশি ঘুরাফেরা করে। ঠোকর দিয়ে গাছের বাকলটি ফেলে দিলে এর নিচ থেকে যে পোকা বা পোকার লার্ভা বের হয় সেগুলো ওরা খায়। ওগুলোই ওদের খাবার।
মো. মজিদুল রহমান আরও বলেন, কাঠঠোকরাই একমাত্র পাখি যাদেরকে ‘গাছের চিকিৎসক’ বলা হয়। গাছের যেখানে পচা অংশ বা ভাঙ্গা অংশ আছে সেখানেই বিষাক্ত পোকা অবস্থান করে ডিম দিয়ে রেখেছে, কিছু দিন পর বাচ্চা হবে। সেই পোকা আবার এই গাছেরই ক্ষতি করবে। কাঠঠোকরা এসে কিন্তু সেই গাছের পচা অংশ থেকে সেই ক্ষতিকর পোকাগুলোকে বা সেই পোকার ডিমগুলো খেয়ে ফেলে সেই গাছের বড় উপকার সাধন করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে থাকে যে- ‘কাঠঠোকরা’ নামক পাখিগুলো গাছের গায়ে বসে গাছের শরীর ছিদ্র করে গাছকেই নষ্ট করতে ফেলছে। আসলে তাদের ধারণ সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে কাঠঠোকরা গাছের উপকার সাধন করে থাকে। এই কাঠঠোকরা বিশেষ প্রজাতির পাখি যারা গাছের গায়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকে ক্ষতিকর পোকামাকড়-কীটপতঙ্গদের ঠোঁট দিয়ে বের করে খেয়ে গাছকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে বলে জানান মো. মজিদুল রহমান।