বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ভিজয় বার্সে ফুটবলে বস্তির শিশুদের বদলে দিচ্ছেন

নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিখ্যাত ক্রীড়া শিক্ষক। বস্তির শিশুদের ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলেন। ২১ বছরে তিনি তাদের জন্য সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে কয়েক একর জমি কিনেছেন, ফুটবল অ্যাকাডেমি করেছেন। ওদের নিয়ে গিয়েছেন গৃহহীনদের ফুটবল বিশ্বকাপে। গল্পের চেয়েও ভিজয় বার্সের জীবনের কাহিনী। লিখেছেন ওমর শাহেদ

তিনি একজন আজীবনের শিক্ষাবিদ। তবে তার শিক্ষা-উপকরণ বই-খাতা নয়-‘ফুটবল’। এই শিক্ষাভাবনা থেকে তার প্রাণ একটি জীবন লক্ষ্যের দিকেই এগিয়েছে-‘প্রতিটি শিশুরই একটি খেলা খেলার অধিকার আছে।’ নামটি তার ভিজয় বার্সে। ফুটবলের মাধ্যমে ২১টি বছর ধরে ভারতের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনগুলোকে ওপরে তুলে দিতে অবদান রেখে চলেছেন। তাদের জন্য তার একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলায় ‘বস্তির ফুটবল’; ইংরেজিতে, ‘স্লাম সকার’। এ নামেই ডাকেন তারা। সেখানে এখন কয়েকজন কোচ আছেন। তারা একেবারে কম রোজগার করতে পারা পরিবারগুলোর শিশুদের ফুটবল খেলা শিখিয়ে চলেছেন তিনি। তাদের সারাবিশ্বে পাঠাচ্ছেন ফুটবলের প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিতে।

কীভাবে ভিজয়ের শুরু? একটি খেলার মধ্যে তার বস্তির ফুটবলার শিশু ছাত্রদের সঙ্গে ফুটবলে পদাঘাত শুরু করতে, করতে মনে করলেন তিনি-‘এই সবকিছুর শুরু ২০০১ সালের জুলাইতে, একটি বৃষ্টিময় দিনে। সেদিন প্রবল বৃষ্টিতে আমি একটি বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছি। হঠাৎ দেখি, একদল শিশু, বস্তিতে থাকে; গায়ের জামা-কাপড়ই বলে দিচ্ছে। ওরা একটি ভাঙা প্লাস্টিকের বালতিকে ফুটবল বানিয়েছে, বৃষ্টির মধ্যে তুমুল আগ্রহে খেলছে। উদ্দীপ্ত ও উদ্যমী খেলোয়াড়দের গোলকটি কীভাবে যেকোনো অন্ধকার কূপ থেকে পাকাপাকিভাবে দূরে রাখতে পারে-সেই দৃশ্যগুলো দেখে, তাদের মুহূর্তগুলো উপভোগ করে স্পষ্টভাবে বিষয়টি আমি অনুভব করলাম।’

এই ঘটনার পর থেকে কাজে নামলেন ভিজয়। নিজের মতো করে তিনি তাদের বদলে দেবেন। ফলে কাজ শুরু করলেন বস্তি ও পথশিশুদের জন্য, তাদের নিয়ে। তারপর থেকে প্রতিদিন তাদের পাশের একটি খেলার মাঠে খেলতে ডেকে নিয়ে যেতেন। বলেছেন, ‘আমি দেখেছি ও উপলব্ধি করেছি, ফুটবল খেলার প্রতি ভালোবাসা কীভাবে তাদের ভালো কাজে উদ্দীপ্ত করেছে।’ পরে স্ত্রী অধ্যাপক রচনা বার্সেকে নিয়ে তিনি ক্রীড়া বিকাশ সংস্থা নাগপুর (কেএসভিএন) প্রতিষ্ঠা করলেন। সঙ্গে ছিলেন তাদের ছোট ছেলে ডা. অভিজিৎ বার্সে।

কেন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন বস্তির ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি? প্রথম উত্তর হলো, অধ্যাপক ভিজয় বার্সে নিজে একজন নামকরা ক্রীড়া শিক্ষক। খেলার কী শক্তি তা তার বিলক্ষণ জানা। নাগপুরের ১৩৯ বছরের পুরোনো হিলসপ কলেজের তিনি ক্রীড়া অধ্যাপক ছিলেন। কলেজটি মিশনারিদের, স্কটিশ পাদ্রী স্টিফেন হিলসপের নামে গড়া। এখানে পড়িয়েছেন টানা ৩৬টি বছর। দ্বিতীয় কারণ হলো তিনি নিজেও একটি সুবিধাবঞ্চিত ঘরের ছেলে। হিন্দু পরিবারে জন্মালেও বাবা-মা ও ভাই- বোনদের সম্পর্কে কখনোই বেশি কিছু বলেননি। তৃতীয় কারণটি হলো শিশুদের প্রতি তার অফুরান ভালোবাসা।

তার জন্ম ১৯৪৫ সালে। নাগপুরের ছেলে। শহরটি মহারাষ্ট্র প্রদেশের তৃতীয় বড় ও শীতকালীন রাজধানী। মারাঠিদের কল্যাণে ইতিহাসে ভুবন বিখ্যাত। এখানেই বম্বে বা মুম্বাই-ভারতের সিনেমা সিটি। স্ত্রী রচনা বার্সেকে নিয়ে গড়া তার ফুটবল প্রতিষ্ঠান, ভিজয়ের স্বপ্নের কেএসভিএনে নানা ধরণের ফুটবল প্রশিক্ষণ কমসূচি পরিচালনা করা শুরু হলো।

বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি থেকে অবসরের সময় তিনি ভারতের টাকায় ১৮ লাখ টাকা সারাজীবনের শ্রমদানের বিনিময়ে পেলেন। সেগুলো দিয়ে মহৎ মানুষটি কয়েক একরের একটি খালি জমি কিনলেন, নাগপুর শহর থেকে নয় কিলোমিটার দূরে। ২০০১ সালে স্ত্রী রচনা ও ছেলে অভিজিৎকে নিয়ে যে ক্রীড়া বিকাশ কেন্দ্রের শুরু করেছিলেন নাগপুরে তিনি, সেটিই পরিণত হলো স্লাম সকারের পৈত্রিক প্রতিষ্ঠানে। স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন। তাদের বড় ছেলে প্রিয়েশ বার্সেও সাহায্য করেছেন অনেক। ধীরে, ধীরে অনেক শ্রমের বিনিময়ে তার শিশু খেলোয়াড়দের জন্য একে গড়ে তুলেছেন স্লাম সকারে। সেখানে তিনি সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তার সেই স্বপ্নের ফুটবল অ্যাকাডেমি শুরু করলেন।

নিজের খেলোয়াড় তৈরির কাজটিকে ভিজয় বার্সে মহারাষ্ট্রের অন্য জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া শুরু করলেন। কয়েকজন প্রিয় বন্ধুর সাহায্য নিয়ে ম্যাচগুলো আয়োজনের পরিকল্পনা করতে লাগলেন তিনি। তিনি প্রথম টুনামেন্টটি নাগপুরে ২০০৩ সালে রাজ্যজুড়ে আয়োজন করা হয়েছিল। তাদের এই প্রথম টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে ১২৮টি ফুটবল দল। ভিজয় বার্সের আয়োজন করা প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতাটির নাম-‘জোপাধপতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’। তাতে পুরো রাজ্যের ওদের বয়সীদের দলগুলো অংশ নিয়েছে। আসরটি বসেছিল নাগপুরে। মহারাষ্ট্র প্রদেশের ১৫টি জেলা থেকেই খেলোয়াড়দের দলগুলো এসেছিল। এমনকী একটি আদিবাসী গোষ্ঠী-গাডচিরোলি; তারা এই নামের জেলাটি (এখন একটি শহরে)’র মানুষ। বনের জন্য বিখ্যাত গাডচিরোলি। তারাও অংশ নিয়েছে বলে খুব খুশি ভিজয়। পরে এই দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। এভাবেই কেবল খেলোয়াড় তৈরি নয়, তাদের খেলার ব্যবস্থা করতে প্রতিযোগিতাগুলোর আয়োজন শুরু করলেন ভিজয়। কাদের জন্য তার এই শ্রম? উত্তরে বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য বিশেষত বস্তির শিশুদের জন্য, তাদের স্বার্থ পূরণ।’

একই বছর ‘অল ইন্ডিয়া রাজীব গান্ধী মেমোরিয়াল জোপাধপতি ফুটবল টুনামেন্ট’ আয়োজন করেছেন তিনি সর্বভারতীয় পযায়ে। নাগপুরেই সেটি হয়েছে। ভারতের ১২টি রাজ্য অংশ নিয়েছে। জিতেছে ওড়িষ্যা রাজ্য, তাদের মহারাষ্ট্র রানারস-আপ হয়েছে। এছাড়াও তার স্লাম সকার অ্যাকাডেমিতে সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর মানুষদের মাদকাসক্তি পুর্ণবাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এভাবেও ভালো পথে নিয়ে আসছেন তিনি বস্তির মানুষদের, তাদের চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন।

ওই যে শিশুরা বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলছিল, তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আরো অনেক দূর এগিয়েছেন ভিজয় বার্সে ধীরে, ধীরে; অনেক কষ্টে। ভারতের জাতীয় দলে যেন তাদের খেলার অধিকার ও সুযোগ লাভ হয়, সেজন্যও তার অ্যাকাডেমি কাজ করে চলেছে। ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট থেকে ভিজয় জেনেছিলেন, বছরওয়ারি একটি গৃহহীনদের ফুটবল ওয়াল্র্ড কাপের আয়োজন করা হয়।

২০০৬ সালে বস্তির শিশুদের ফুটবলের ত্রাতা ভিজয় ‘হোমলেস ওয়াল্র্ড কাপ’-এ গেলেন। গৃহহীনদের ফুটবল বিশ্বকাপের চতুথ পর্বটি দেখতে সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে যেতে পেরেছেন তিনি। পরের বছর তার সুবাদে ভারত পঞ্চম আসরে পৌছাতে পারলো। এই আসরটি বসেছে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে। ২০০৮ সালের অষ্ট্রেলিয়ার রাজধানী মেলবোর্নের ইভেন্টেও তার দেশকে নিয়ে গিয়েছেন। তার বস্তির শিশু ফুটবলারদের মধ্যে অখিলেশ পাল নামের একটি ছেলে ভারতের গৃহহীনদের জাতীয় ফুটবল দলে খেলার বিরল যোগ্যতা অর্জন করেছে। তিনি পরে ভারতের ফুটবল দলটির অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের দলটি ব্রাজিলে বস্তিবাসীদের ফুটবল বিশ্বকাপ খেলতেও গিয়েছে।


স্লাম সকারে ভিজয় বার্সের সঙ্গে ছোট ছেলে ডা. অভিজিৎ বার্সে পুরোপুরিভাবে আছেন। ডা. অভিজিৎ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহি কমকতা। সেই সমস্যাগুলো পূরণে তারা কাজ করছেন, সেই লক্ষ্যাদিতে চলেছেন, যেগুলোতে তাদের অনমনীয় পরিশ্রম, অবিরাম চেষ্টাগুলো আছে; যেগুলোর মাধ্যমে ভারতের ও বিশ্বের সামাজিক নিয়মাবলীগুলো তারা বদলে চলেছেন; লিঙ্গগত বৈষম্যগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করছেন। ডা. অভিজিৎ বার্সে বাবার মতো এখন একজন সমাজকমী। তবে তিনি একজন উদ্যোক্তা। ২০০৬ সালে তার এই ছেলে চলে এলেন পাকাপাকিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তারও জীবনের লক্ষ্য-বস্তির ছেলেমেয়েদের সমাজে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসা। পুর্ণবাসন করা বস্তিবাসীদের, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের রোজগারের পথ করে দেওয়া। ২০০৭ সালে বছর তাকে স্লাম সকারের সিইও পদটি প্রদান করা হয়েছে।

২০১৪ সালে ‘সত্যমেভ জয়তে’ নামের টিভি সিরিজানুষ্ঠানের সেশন ৩’র প্রথম এপিসোডে বলিউডের সুপার স্টার আমির খানের উপস্থাপনায় তাদের জীবনের গল্প বলতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন ডা. অভিজিৎ বার্সে। তাতে জানিয়েছেন, বস্তির শিশুদের ফুটবল খেলা শেখানো ও ফুটবলের মাধ্যমে জীবনগুলো বদলে দেওয়ার কাজ ছাড়াও তার বাবা ভিজয় বার্সে ভারত-পাকিস্তান শান্তির জন্য কাজ করছেন। তিনি শান্তির জন্য আলোচনা শুরু করতে সহযাত্রীদের নিয়ে পাকিস্তান সীমান্তে একটি মোটর সাইকেল অভিযান পরিচালনা করেছেন।

ভিজয় বার্সে ভারতের স্লাম সকারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খুব খ্যাতিমান। বস্তির ছেলেমেয়েদের ফুটবল খেলার সুযোগ দিয়ে জীবনমান বদলে দেওয়ার কারণে সারা দুনিয়াতে নাম করেছেন। বিখ্যাত এই সমাজকর্মী ও বস্তির শিশুদের কোচ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন-‘দুটি ঘন্টা ফুটবল নিয়ে কাটানো সময়গুলো তাদের উদ্দীপ্ত ও শিক্ষিত করে তোলে। যেকোনো ধরণের খারাপ কাজ; যেগুলো করার হরদম সুযোগ আছে-পকেট মারা, নানা ধরণের মাদক সেবন; অন্যান্য অপরাধ ও সমস্যা তৈরির হাত থেকে বস্তির শিশুদের দূরে রাখে। তাদের মাধ্যমে ভালো হয় আরো অনেকেই।’

তার খেলার এই জীবন দিকে, দিকে ছড়িয়েছে। বম্বের সুপারস্টার আমির খান ‘সত্যমেভা জয়তে’ অনুষ্ঠানে জেনেছেন। ভিজয় বার্সের স্লাম সকার কয়েকটি খুব ভালো পুরস্কার জিতেছে। একটি হলো-‘ফিফা ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’। ‘এফআইসিসিআই ইন্ডিয়া স্পোটস অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১২ সালের ‘মন্থন ই-এনজিও অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন ভিজয় বার্সে ও স্লাম সকার।

স্বপ্নজয়ী এই মানুষটিকে সম্মানিত করেছে ভারতের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ধীরুভাই আম্বানীর রিলায়েন্স, ২০১২ সালে। ভারতীয় ক্রিকেটের মহাতারকা শচীন টেন্ডুলকার সেদিন তার হাতে তুলে দিয়েছেন ‘রিলায়েন্স রিয়েল হিরো অ্যাওয়ার্ড’। ২০১৯ সালে তিনি লাভ করেছেন ‘নাগভূষণ অ্যাওয়ার্ড’। ভারতের সিনেমা ভুবনের মহাতারকা অমিতাভ বচ্চন তার চরিত্রে অভিনয় করতে নেমেছেন। ২০২০ সালে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল-‘জুন্ধ’। অমিতাভের চরিত্রটির নামও ভিজয় বার্সে।

এখন তার বয়স হয়েছে অনেক-৭৫ বছর। তারপরও তিনি থেমে যাননি। তার প্রতিষ্ঠানটি রাজ্য ও জাতীয় পযায়ের টুর্নামেন্টগুলোর আয়োজন ও পরিচালনা করে। ভিজয় বার্সের স্লোম সকারও এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। তাদের প্রধান ছোট্ট ফুটবলারদের কোচ ও জীবন বদলের প্রধান কারিগর অনেক লম্বা; যেকোনো ভালো ফুটবলারের মতোই দশাসই। ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি। এখনো শরীরের শক্ত বাঁধন অটুট আছে পরিশ্রম ও কোনো কিছুই না পাওয়া শিশুদের জন্য ভালোবাসার জোরে। চুলের রঙ কালো; চোখের মণির রঙ গাঢ় কালো।

(ইংরেজি থেকে অনুবাদ)

 

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া