চর কুকরি-মুকরির নারিকেলবাড়িয়া সাগর সৈকত পরিচ্ছন্নে বিশেষ বাহিনী
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় সাগর সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আছে একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত দল। তাদের স্থানীয়ভাবে ব্লু-গার্ড বলা হয়। এই মানুষগুলো আশপাশের মানুষ। তাদের সমুদ্র সৈকত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাদের নির্বাচন করা হয় পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা ও পরিচ্ছন্নতার জ্ঞানের ভিত্তিতে।
চরফ্যাশনের চর কুকরি-মুকরিতে ব্লু-গার্ডের প্রশিক্ষণ ও অভিযান কার্যক্রম হয়েছে। চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদে তাদের এই কর্মসূচিটি উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ আবুল হাশেম মহাজন।
তিনি বলেছেন, ‘এই প্রশিক্ষিত ব্লু-গার্ডরা বাংলাদেশের নতুন পর্যটন কেন্দ্র চর কুকুরি-মুকরির নারিকেলবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্ন রাখবেন বলে আমি আশা করি। ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সাগর সৈকত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।’
এরপর তাদের ওয়াল্র্ড ফিশের ইকোফিশ প্রকল্প-২’র অন্যতম গবেষণা সহযোগী অংকুর মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এবং প্রকল্পটির সহকারী গবেষক মোনাইম হোসেন দুজনে মিলে সাগর সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয়তা, কীভাবে সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, বর্জ্যগুলো কী কী, সেগুলো সংগ্রহ করার পদ্ধতিগুলো, সাগর সৈকতের বর্জ্য পুর্ণব্যবহার করার পদ্ধতি, সাগরের জীববৈচিত্র্য, সেগুলো রক্ষায় সৈকত বর্জ্যগুলো সংগ্রহের ভূমিকা ইত্যাদি আলোচনা করেন এবং ব্লু-গার্ডের সদস্যদের সেগুলো নিয়ে কাজ হাতে-কলমে শেখান।
এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ, সেখানকার পুলিশ বিভাগের অফিসার-ইনচার্জ মোশাররফ হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ডা. আল হেলাল ও আরেক সদস্য শারমিন আক্তার।
প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর চর কুকরি-মুকরির নারিকেলবাড়িয়া সমুদ্র ষৈকতটি ব্লু-গার্ডের সদস্যরা পরিচ্ছন্ন করেন। এই বাহিনীটি মোট ১০ জনের। তারা প্রায় এক কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিকের পানির বোতল, ফেলে দেওয়া পলিথিনের ব্যাগ, জেলেদের ফেলে দেওয়া জাল, জালের ছেঁড়া টুকরো, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের খাবারের ফেলে দেওয়া প্যাকেট, নারকেলের পরিত্যক্ত খোসা ইত্যাদি সংগ্রহ করেছেন।
ব্লু-গার্ড মোট ১শ ৪৫ কেজি বর্জ্য এই অভিযানের মাধ্যমে সংগ্রহ করে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। টানা দুই ঘন্টা তারা কাজ করেছেন।
এই অভিযানটি ইউএসএইডের সাহায্যে ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের ইকোফিশ-২ প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোনাইম হোসেন।
নারকেলবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত পরিচালনা কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা প্রকল্পটির সহযোগী গবেষক অংকুর মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেছেন, “আমরা ওয়ার্ল্ড ফিশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এবং সাগর সৈকতটিকে যেকোনো ধরণের পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে এই ব্লু-গার্ড’ বাহিনীটি তৈরি করেছি। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সৈকতগুলোতে অথনৈতিক কার্যক্রমগুলোকে সাহায্য এবং সেগুলোকে বাঁচানোর প্রথম ধাপ হিসেবে এখানে কাজ শুরু করা হয়েছে। এই বাহিনীটি প্রতি মাসেই সাগর সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করবে। তারা এর দেখাশোনার কাজও করবেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ও আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে তাদের সহযোগিতা করা হবে।”