ভুট্টাতে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা
ঠাকুরগাঁও জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার চাষ। যেসব ফসলি জমিতে গমের চাষ হতো এখন সেই জমিগুলোতে গমের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। গত কয়েক বছরের তুলনায় ভুট্টার ফলন বেশি হওয়ায় গমের স্থান দখল করে নিয়েছে ভুট্টা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ও গত বছরের মতো এবারও দাম পেলে ভুট্টা চাষে এই বছর অধিক হারে লাভবান হওয়ার আশা ও স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা।
ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৩৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি মৌসুমে গম চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছর চাষ হয়েছিল প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এক বছরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে গমে আবাদ কমেছে। এ ছাড়াও গত মৌসুমে জেলায় আলু চাষ হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর কিন্তু এবার তা কমে হয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বলে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সদরের আকচা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিকে ভুট্টার গাছপালা ও গাছে ভুট্টার মোচা ভালো এসেছে। আল্লাহ সহায় থাকলে এবার ভুট্টাতে কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারবে।’
আরেক কৃষক আনোয়ার আলী বলেন, ‘গম ও আলুতে তেমন লাভ না হওয়ায় অধিকাংশ কৃষক এখন ভুট্টা চাষ করছে। ৫০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা আর পরিচর্যা অনুযায়ী ফলন হয় কমপক্ষে ৮০-১০০ মণ। এক বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রিয় হয় কমপক্ষে ৮০-৯০ হাজার টাকায়। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে গম হয় ২০-২৫ হাজার টাকার। তাই গমের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভ পাওয়ায় ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমি গতবার ভুট্টা চাষ করেছিলাম ৩ বিঘা জমিতে। দাম ভালো পাওয়ায় এবার চাষ করেছি ৫ বিঘা জমিতে। আবহাওয়া ভালো থাকলে গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি ফলন হতে পারে।’
রাণীশংকৈল উপজেলার এক কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কৃষকরা ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ করেছেন। গত বছর আমি ৮০ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুট্টা বিক্রি করেছি ২ হাজার ২০০ টাকায়। এবারও যদি এমন দাম থাকে তাহলে কৃষকরা ভুট্টাতে অনেক লাভবান হবে।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারি এলাকার কৃষক সমসের আলী বলেন, ‘আলু করে শুধু লস হয়। দাম তেমন পাওয়া যায় না। গেলবার ভুট্টার দাম ভালো ছিল। তাই এবার আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছি।’
হরিপুর উপজেলার কামাপুর গ্রামের কৃষক আয়ুব আলী বলেন, ‘গত বছর ভুট্টা চাষ করে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এবার বেশি করে ভুট্টা চাষ করেছেন। আমাদের পরিবার থেকেই শুধু ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি ভুট্টা। আশা করছি এবার ভুট্টার দাম ভালো পাব। কারণ যেহেতু বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশি, তাই আশা করি ভুট্টার দামও বেশি পাব।’
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘গম ও আলুর থেকে দিন দিন ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায় চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে। আমরা জেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের ভুট্টা চাষে সেচ, রাসায়নিক প্রয়োগসহ পোকা রোধের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
এসআইএইচ