সংসারের হাল ধরা ছেলে এখন পঙ্গু, বিপাকে বৃদ্ধ বাবা-মা
সংসারের হাল ধরা ছেলে এখন পঙ্গু। চরম বিপাকে বৃদ্ধ বাবা-মা। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে পঙ্গু অবস্থায় রয়েছেন একমাত্র ছেলে কৃষ্ণ চন্দ্র রায় (২৩)। শুধু পঙ্গুত্বই নয় গত দুই বছর ধরে মুখ থেকে একটি কথাও বের হচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে-বসেই দিন কাটে। কারোর সঙ্গে কথা নেই। সব সময় দু-চোখে টলমল জল পড়েই যাচ্ছে। সব সময় যেন ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছেন। কিছু বলারও শক্তি নেই। চিকিৎসার অভাবে একমাত্র ছেলে ঘরেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে থাকায় চরম বিপাকে দিন পাড় করছেন অসহায় দিন মজুর বাবা ধীরেন্দ্র নাথ রায় (৬৫)।
পরিবারের লোকজন জানান, দিন মজুর ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়েই বড়। ১০ শতক জমি বিক্রির পাশাপাশি নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেই অনেক কষ্টে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ধীরেন্দ্র নাথ। অভাবের তাড়নায় একমাত্র ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ছেলের পড়াশুনা বন্ধ হওয়ায় দিন মজুর বাবার সংসারে টুকটাক কাজের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন ছোট ছেলে কৃষ্ণ চন্দ্র রায়। কয়েক বছরের মধ্যে কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বাবার সংসারের হাল ধরেন। সংসারের পাশাপাশি কৃষ্ণ মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ-কাম করে বৃদ্ধ বাবা-মাসহ স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতেন।
একদিন কৃষ্ণ গাছের ডাল কাটার কাজ করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে দুই পাঁ ও কমোরে মারাত্মক আঘাত পান। পড়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হননি তিনি। চিকিৎসার জন্য দুই শতক জমি বিক্রি ও জমানো টাকাসহ বিভিন্ন নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ ভিক্ষাবৃত্তি করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করেও পুরোপুরি সুস্থ করতে পারেনি ধীরেন্দ্রনাথ।
পঙ্গু কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল গ্রামে। অসহায় এই বাবার পক্ষে সন্তানের জন্য হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে পঙ্গু ছেলের জন্য একটি হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
পঙ্গু ছেলের বাবা ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘বাহে সব কিছুই স্বচোখে দেখলেন। আর কী বলব বাহে! গরিব হলেও ছেলের আয়ে সংসারটা ভালোই চলছিল। যে ছেলে আমার সংসারের হাল ধরেছে, বৃদ্ধ বাবা-মার মুখে খাবার তুলে দিত, আজ সেই ছেলেই পঙ্গু। ছেলেকে ওর মা মুখে খাবার তুলে দিলে খায় না হলে খেতে পারে না।’
তিনি আরও জানান, গত সাড়ে ৩ বছরে সন্তানের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছেন। কিন্তু সুস্থ করতে পারেননি। অসুস্থ ছেলের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকার ও বিত্তবান এবং দানশীল ব্যক্তির কাছে হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী ও গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শ্যামল চন্দ্র মন্ডল বলেন, গরিব হলেও এক সময় পরিবারটির ভালোই দিনকাল যেত। দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলে অসুস্থ হওয়ায় এখন চরম কষ্টে দিন পার করছে। পরিষদ থেকে ওই পরিবারটিকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি সামনে বরাদ্দ এলে অসুস্থ ছেলেকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রতি দেন এই দুই জনপ্রতিনিধি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জানান, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অসুস্থ কৃষ্ণ চন্দ্রকে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ একটি হুইল চেয়ার দেওয়ারও আশ্বাস দেন ইউএনও।
এসএন