পাকলে মোলায়েম টক-মিষ্টি স্বাদের ডেওয়া
দেশের ভৌগোলিক সীমার বৃত্তে কত রকমের ফল ফলে। তবে এলাকা ভেদে অনেক এর রকম ফের হয়। কিছু ফল রয়েছে নির্দিষ্ট এলাকায় হয়। আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়। অতি পরিচিত দেশীয় একটি ফল ডেওয়া; যা উত্তরাঞ্চলের লোকজনের কাছে বনকাঁঠাল হিসেবে পরিচিত। পাকলে এই ফলটি অতি মোলায়েম হয়। খেতে মিষ্টি-টক স্বাদের। ডেওয়া ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী । পাশাপাশি এর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণ। আবার আমদানি করা ফলের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে দেশি ডেওয়া ফলে।
বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে নওগাঁ শহরের ছোট যমুনার তীরে খলিশা কুড়ি এলাকায় জুলহাজ উর-রশিদের বাড়ির আঙিনাতে দেখা মিলল একটি গাছে সবুজ পাতার ডালে ডালে হলুদ রঙের ডেওয়া ফল।
নওগাঁ শহরে এখনো বনকাঁঠালের গাছ আছে। ফল ধরার আগে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কী ফলের গাছ। গাছের আকার বড় কিন্তু ফল বেশ ছোট। খোসাটা বেশ পাতলা। এর শাঁসগুলো বেশ ছোট। নতুন প্রজন্ম জাতীয় ফল শুধু কাঁঠালের কথা জানে। কিন্তু বনকাঠাঁলও যে রয়েছে তা খুব কম মানুষেই জানে।
দ্রুত নগরায়নের ফলে শহরাঞ্চলে এই বিশেষ ডেওয়া বা বনকাঁঠাল ফলের গাছ কিন্তু দুর্লভ হয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে দেখতে পাওয়া গেলেও শহুরে মানুষের কাছে এই ফলের কদর কম। তবে গ্রামের মানুষ এই ফলের কদর জানেন। গ্রীষ্মকালীন ফলের পাশাপাশি বাজারে দেখা মিলে প্রায় বিলুপ্ত এই ডেওয়া বা বনকাঁঠালের।
বনকাঁঠাল বা ডেওয়া গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট, বড় আকারের বৃক্ষ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়, এর ছাল ধূসর-বাদামি রঙের। গাছের ভেতর সাদাটে কষ বা আঠা থাকে। পাতা ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া হয়, যা অনেকটা কাকডুমুরের পাতার মতো। তবে আকারে সামান্য বড়।
স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা। স্ত্রী ফুল আকারে বড় ও মসৃণ। এর ফুলে পাঁপড়ি নেই, ছোট গুটির মতো। স্ত্রী ফুল থেকে ফল হয়। ফল কাঁঠালের মতো যৌগিক বা গুচ্ছফল। বহিরাবরণ অসমান। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে বহিরাবরণ হলুদ। ভিতরের শাঁস কমলা রঙের। ভেতরে কাঁঠালের মতো ছোট ছোট রোয়া থাকে। প্রতিটি রোয়ার মধ্যে একটি করে বীজ থাকে। সাধারণত মার্চ মাসে ফল আসে এবং মে মাসের দিকে ফল পাকতে শুরু করে। গাছ রোপনের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল।
ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের আধার বলা হয় ডেউয়া ফলকে। এগুলো ছাড়াও ডেউয়া ফলে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডেউয়া ফলের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে- খনিজ ০.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ১৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৩৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম।
এর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণ। অনিয়ন্ত্রিত ওজন বর্তমান সময়ে একটা বড় সমস্যা। অথচ ঠান্ডা পানিতে ডেওয়া ফলের রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করলেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এমনকি ডেওয়া ফল রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। মুখের রুচি ফেরাতে খেতে পারেন এই ফল। ডেওয়া ফলের রসের সঙ্গে সামান্য লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেলে মুখে রুচি ফিরে আসবে। মধুর অম্লরস যুক্ত পাকা ডেওয়া অরুচি ও পেটের বায়ুনাশে অমৃত। শুধু তাই নয়, পিত্ত ও যকৃতের জন্য উপকারী।
এসএন